জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্ন প্রজাপতির জীবন, ঝুঁকিতে মানুষও
ইকুয়েডরের অ্যামাজনে গবেষণা চালিয়ে প্রজাপতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন তারা৷
প্রজাপতি: পরিবেশের মানদণ্ড
অ্যামাজনের কুয়াবেনো বন্যপ্রাণী সংরক্ষণাগারটি প্রাণবৈচিত্র্যের জন্য সুপরিচিত৷ গত আগস্ট থেকে জীববিজ্ঞানী ও বনের দেখভালকারীদের একটি দল সেখানকার প্রজাপতিদের সংখ্যার উপর নজর রাখছেন৷ কোনো এলাকার পরিবেশ সম্পর্কে জানার একটি ভালো উপায় হলো প্রজাপতিরা কেমন আছে তা জানা৷
ঘ্রাণের ফাঁদ
পচা মাছ আর ফারমেন্ট করা কলার এই দ্রবণের ঘ্রাণ পোকাদের কাছে আকর্ষণীয়৷ এর টানে ছুটে আসা প্রজাপতিদের গবেষণায় কাজে লাগাতে জাল দিয়ে আটক করেন বিজ্ঞানীরা৷
সতর্ক পরীক্ষা
এলিসা লেভি (ডানে) এই গবেষক দলের প্রধান৷ ফাঁদে আটকা পড়া প্রজাপতিদের সতর্কভাবে পরীক্ষা করছেন তারা৷ চিমটার সাহায্যে সতর্কভাবে তারা প্রজাপতিগুলোকে ধরে তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোকে আবার প্রকৃতিতে ছেড়ে দেন৷
বৈচিত্র্যে ভরপুর এক দেশ
বিজ্ঞানীরা নানা জাতের প্রজাপতির উপর পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ কোনটি লাল, কোনটিবা নীল৷ ছবির প্রজাপতিটি জেব্রার মতো সাদা-কালো ডোরাকাটা৷ কোনোটি হয়তবা কাচের মতো স্বচ্ছ৷ ইকুয়েডর দেশটি আয়তনে ছোট হলেও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর৷ প্রায় চার হাজার প্রজাপতির বসবাস সেখানে৷
প্রকৃতির ভারসাম্যে বিপদ
বার্তা সংস্থা এএফপিকে গবেষক দলের প্রধান লেভি জানিয়েছেন, সেখানকার প্রকৃতি আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানানসই নয়৷ জলাবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারলে অনেক উদ্ভিদই হারিয়ে যেতে পারে৷ এতে এসব উদ্ভিদখেকো প্রজাপতিদের লার্ভারও বিলুপ্তি ঘটবে৷
হুমকিতে বৈচিত্র্য
আর ঠিক তা-ই ঘটতে শুরু করেছে কুয়াবেনোতে৷ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, সেখানকার বিভিন্ন প্রজাতির সংখ্যা ১০ শতাংশ কমলেও প্রজাপতিদের সংখ্যা কমেছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ৷
সতর্কবার্তা
কুইটোতে অবস্থিত ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী মারিয়া ফের্নান্দা চেকা প্রজাপতির সংখ্যা হ্রাসকে ‘খুবই তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি জানান, ডিম থেকে শুঁয়োপোকা এবং তার থেকে ডানা মেলা পোকায় পরিণত হওয়ার ক্ষুদ্র জীবনে বাস্তুসংস্থানের ছোটখাটো পরিবর্তনেও প্রজপতিরা ভীষণ সংবেদনশীলভাবে সাড়া দেয়৷ তিনি বলেন, ‘‘তাদের সংখ্যা হ্রাস আমাদের জন্য সতর্কবার্তা’’
বিলুপ্তির পথে
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, প্রকৃতিতে পরাগায়নকারীদের মধ্যে মৌমাছি ও প্রজাপতি বৈশ্বিক বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে৷ আর তা-হলে বিপদে পড়বে মানুষও৷ কেননা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা আমাদের ফল ও শস্যবীজের তিন-চতুর্থাংশ এই প্রাণীদের পরাগায়নের উপর নির্ভরশীল৷