গত শনিবারেই জার্মানির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট-সিডিইউ দলের ফেডারেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৫৯ বছরের আরমিন লাশেট। ৫২১ ভোট পেয়ে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসকে হারিয়েছেন তিনি। এতদিন এই পদে ছিলেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। দলের ফেডারেল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও লাশেট পরবর্তী জার্মান চ্যান্সেলরের পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সম্প্রতি মিউনিখের একটি সংস্থার সমীক্ষা বলছে, সাধারণ মানুষ তাঁকে চ্যান্সেলর হিসেবে দেখতে চাইছেন না।
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার
ক্রাম্প-কারেনবাউয়ারকে ম্যার্কেলের নিজের পছন্দের প্রতিনিধি মনে করা হয়৷ কিন্তু জার্মানি জুড়ে তাঁর পরিচিতি বেশ কম৷ সিডিইউ-এর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার আগে ক্রাম্প-কারেনবাউয়ার সারল্যান্ডের রাজ্য প্রধান হিসেবে সিডিইউ-এসপিডি জোটের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ ম্যার্কেলের উদার অভিবাসন নীতির সমর্থক তিনি৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
ফল্কার বুফিয়ার
হেসের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ২০১০ সাল থেকে রাজ্য প্রধান বুফিয়ার৷ বর্তমানে ভিসবাডেনে সিডিইউ-গ্রিন জোটের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন৷ ম্যার্কেলের সিডিইউ পার্টির নির্বাহী কমিটির পাঁচ ডেপুটি চেয়ারপার্সনের একজন তিনি৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
ভোলফগাং শয়েবলে
কয়েক দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শয়েবলের৷ সিডিইউয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ নেতাদের একজন তিনি৷ ৭৫ বছর বয়সি এই সাবেক আইনজীবী ২০১৭ সালে জার্মান পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ম্যার্কেলের অধীনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন৷ জার্মানির অভিবাসন নীতির সমালোচনা করলেও ম্যার্কেলের সাথে তাঁর সম্পর্ক বেশ ভালো বলেই ধরে নেয়া হয়৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
ইয়েনস স্পান
চ্যান্সেলর হওয়ার দৌঁড়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে কনিষ্ঠতম স্পান৷ ২০০২ সালে সংসদ সদস্য এবং পরবর্তীতে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হন তিনি৷ ২০১৬ সালে ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে গিয়ে সিডিইউ সম্মেলনে দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিলের প্রস্তাব পাশ করাতে ভূমিকা রাখেন৷ জার্মানির দারিদ্র্য নিয়ে মন্তব্যে তাঁকে সম্প্রতি বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন
জার্মানির প্রথম নারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী তিনি৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণস্বাস্থ্যের ওপর তাঁর পড়াশোনা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বিত প্রতিরক্ষার অন্যতম সমর্থক তিনি৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
ইউলিয়া ক্ল্যোকনার
ক্ল্যোকনার বর্তমানে ম্যার্কেলের কৃষিমন্ত্রী৷ তবে ম্যার্কেলের চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত তিনি৷ গর্ভপাত এবং ভ্রূণ নিয়ে গবেষণার বিরুদ্ধে তিনি৷ ম্যার্কেলের অভিবাসন নীতির বিকল্প প্রস্তাবেরও একজন সমর্থক ক্ল্যোকনার৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
হর্স্ট সেহোফার
জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফারকেই বর্তমান সংকটের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ জার্মানির নতুন অভিবাসন নীতি নিয়ে মূলত সেহোফারই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন ম্যার্কেলকে৷ বাভারিয়া অঞ্চলে সিডিইউর সহযোগী দল সিএসইউর প্রধান সেহোফার৷ অক্টোবরে বাভারিয়ার নির্বাচনে তাঁর দল ভালো করার আশা করলেও বাকি জার্মানি তাঁকে চ্যান্সেলর হিসেবে না-ই দেখতে চাইতে পারে৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
মার্কুস স্যোডার
বাভারিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্যোডার৷ অভিবাসন বিষয়ে ম্যার্কেলকে চ্যালেঞ্জ করে তিনিও এসেছেন আলোচনায়৷ জার্মানির দক্ষিণের এই রাজ্যে অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়াদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো এবং রাষ্ট্রীয় ভবনে ক্রুশ স্থাপনসহ বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সমালোচনাতেও পড়তে হয়েছে তাঁকে৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
পেটার আল্টমায়ার
জার্মান অর্থমন্ত্রী আল্টমায়ার ম্যার্কেলের অভিবাসননীতির সমর্থক৷ সারল্যান্ড থেকে আসা এই রাজনীতিবিদ আগে কাজ করতেন ইউরোপীয় ইউনিয়নে৷ ম্যার্কেলের খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আল্টমায়ার কাজ করেছেন পরিবেশমন্ত্রী হিসেবেও৷
-
ম্যার্কেলের পর কারা হতে পারেন চ্যান্সেলর?
আরমিন লাশেট
উদারপন্থি এই নেতাকে বিরোধীরা ‘রাজনীতির জন্য একটু বেশিই নরম’ বলে সমালোচনা করে থাকেন৷ সিডিইউর হয়ে গত বছর জার্মানির সবচেয়ে বড় রাজ্য নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ার রাজ্য প্রধান নির্বাচিত হন লাশেট৷ সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের জন্য এই পরাজয় ছিল বিশাল এক ধাক্কা৷ সাবেক এই সাংবাদিকও ম্যার্কেলের পাঁচ ডেপুটির একজন৷
২০১৭ সাল থেকে নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন লাশেট। বরাবরই তিনি চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। ম্যার্কেলের নীতি সমর্থন করেন তিনি। কিন্তু মানুষ তাঁকে পরবর্তী চ্যান্সেলর হিসেবে দেখতে চাইছেন না। সমীক্ষা বলছে, মাত্র ১২ দশমিক এক শতাংশ মানুষ ল্যাশেটকে পরবর্তী চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে ভোট দিয়েছেন। বরং অনেক বেশি জনপ্রিয় বাভারিয়ার ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন(সিএসইউ) দলের প্রধান মার্কুস স্যোডার। ৪৩ শতাংশ মানুষ স্যোডারকে পরবর্তী চ্যান্সেলর হিসেবে পছন্দ করেছেন। সমীক্ষায় নাম উঠে এসেছে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও। যদিও জেনস স্পানকে সমীক্ষায় প্রতিযোগী হিসেবে রাখাই হয়নি। আট শতাংশেরও বেশি মানুষ তাঁকে পরবর্তী চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন।
আসন্ন ভোটে তিনি আর লড়বেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন ম্যার্কেল। সে কারণেই পরবর্তী ভোটে তাঁর জায়গায় শাসক জোট কাকে চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে আনে, তা নিয়ে গোটা জার্মানি জুড়েই আলোচনা চলছে। লাশেট কিংবা স্যোডার কেউই এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। বরং লাশেট সিডিইউয়ের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পরে স্যোডার তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, এক সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহী তিনি। তবে সেখানে কোথাও পরবর্তী চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীর কথা বলা হয়নি।
লাশেটও এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। বছর কয়েক আগে রাইনে এক প্রমোদ ভ্রমণে স্যোডার এবং ম্যার্কেলের ছবি প্রকাশ করেছিল জার্মান সংবাদমাধ্যম। রাজনৈতিক মহলের একাংশ সে সময়ই বলেছিলেন, ম্যার্কেল চান স্যোডার পরবর্তী জার্মান চ্যান্সেলর নির্বাচিত হোন। অন্য দিকে লাশেটও ম্যার্কেলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ফলে আগামী দিনে কে সেই পদ পাবেন, জনমত কতটা গুরুত্ব পাবে, তা সময়ই বলবে।
এসজি/জিএইচ (ডিপিএ)