চ্যাটজিপিটি কি পড়াশোনায় পরিবর্তন আনছে?
২০ আগস্ট ২০২৪কিন্তু নিত্যদিনের জীবনে এই টুল ঠিক কী ধরনের প্রভাব তৈরি করতে পেরেছে? এটি কি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনায় বা কাজের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনতে পেরেছে?
চ্যাটজিপিটি নানা রকম ভার্চুয়াল চরিত্র তৈরি সহজ করেছে৷ তবে এর ফলে পড়াশোনার নাটকীয় পরিবর্তন আসেনি৷ অন্তত হামবুর্গের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমনটাই জানালেন৷
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী টোবিয়াস বলেন, ‘‘আমি এটি গবেষণার কাজে ব্যবহার করি৷ একটি বিষয় সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করি৷ আর এভাবে আমি একটি কাজ ভালোভাবে শেষ করার জন্য প্রস্তুতি নেই৷ আমি গবেষণার কাজে গুগলের বদলে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করি কোনো একটি বিষয় বুঝতে৷''
আরেক শিক্ষার্থী নবম শ্রেণির এলিয়েশা বলেন, ‘‘আসলে, চ্যাটজিপিটি মাঝেমাঝে অদ্ভূতভাবে লেখে৷ তাই আমি আমার নিজের বিষয়াদি সাধারণ সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজি৷''
একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী ইওশা বলেন, ‘‘আমি আমার কাজের দায় নিতে চাই৷ আমি এটিকে আমার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই৷ ফলে এটি আমার জন্য প্রাসঙ্গিক নয়৷''
চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা সেটি বিদ্যালয়ে, হোমওয়ার্ক তৈরিতে ব্যবহার করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু শিক্ষার্থীরা আসলে কী করতে পারে তা জিজ্ঞাসার মাধ্যমে, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোথায় সহায়তা করতে পারে তা শনাক্তের মাধ্যমে শিক্ষকরা বিষয়টি বুঝে ফেলেন৷
হামবুর্গের ভাল্ডডর্ফার গিমনাজিউমের প্রধান শিক্ষক ইয়র্গেন সলফ বলেন, ‘‘এটিকে নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনার সেই আবেদন আর নেই৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজের অংশ হিসেবে বোধগ্যমভাবে ব্যবহার করতে শিক্ষার্থীদের শেখাতে হবে৷ তাদের কাজের উপর গুরুত্ব দিতে হবে, সেটা করার টুলের উপর নয়৷ কারণ, আমরা সবাই স্বচ্ছন্দ ব্যবস্থা পছন্দ করি৷ এবং ফলাফল দ্রুত পাওয়াটা অনেকের কাছে আকর্ষণীয় ব্যাপার৷ কিন্তু এটা আমাদের জন্য সহায়ক নয়৷''
একটি বিষয় সম্পর্কে দ্রুত সামগ্রিক ধারণা পেতে, নতুন রন্ধনপ্রণালী, কিংবা রুপকথার গল্পের আব্দার, টেক্সট টুলটি মোটামুটি সব চাহিদারই জবাব দেয়৷ কিন্তু এটা কি বুদ্ধিমত্তা? এই প্রশ্নটা আমাদেরকে ভাবায়৷
জার্মান ইথিক্স কাউন্সিলের সদস্য প্রফেসর ইউডিথ সিমন বলেন, ‘‘এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়টিকে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছে৷ কারণ, যদিও অনেক মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করছেন, তারা এটিকে সেই হিসেবে দেখছেন না৷ আপনার ফোন আনলক করা, সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করা, সুপারিশ খোঁজা - এগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা৷ কিন্তু এগুলো চ্যাটবটের মতো প্রতিক্রিয়া জানায় না বলে সেগুলো ভাবছে এমনটা মনে হয় না৷''
বর্তমানে সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি হচ্ছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কী কী করতে অনুমতি দেয়া উচিত? চ্যাটজিপিটি পর্ন, এমন কনটেন্ট যা সহিংসতাকে উস্কে দেয়, ভুয়া খবর, ভুয়া ওয়েবসাইট তৈরি এব অপপ্রচার করতে পারে৷ নৈতিক ফিল্টার এসবের কিছুটা সনাক্ত এবং বাতিল করতে পারে৷ কিন্তু আমাদের মতো অনেকের পক্ষে এসব বোঝা সম্ভব নয়৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এত দ্রুত বিকাশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অনেককেও উদ্বিগ্ন করে তুলছে৷ এই বিকাশের সঙ্গে মহামারি এবং পারমাণবিক যুদ্ধেরও তুলনা করা হচ্ছে৷
হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেনেস ফেডেরাথ বলেন, ‘‘আপনি যখন দেখবেন যে ড্রোনের মতো যন্ত্রকে প্রশিক্ষণ দিতে এটা ব্যবহার করা যায়, এবং এরপর সেগুলো নিজেরাই নিজেদের লক্ষ্য খুঁজতে অনুমতিপ্রাপ্ত, তখন বিষয়টি আমাকে সত্যিই উদ্বিগ্ন করে৷ এই বিষয়েও আমাদের আন্তর্জাতিক সমঝোতা প্রয়োজন৷''
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে অধিকাংশ গবেষণায় মানুষকে সহায়তার বিষয়টি প্রাধান্য পায়৷ কিন্তু এটি আরো অনেক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব৷
প্রতিবেদন: স্যোয়েন রিকন/এআই