নদিয়ার যে কজন মানুষ প্রেমাংশুকে চেনেন, তারা জানেন এ ছেলের সংগ্রামের কাহিনি। ফুটবল এক বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে প্রেমাংশু ঠাকুর।

ইন্ডিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের উদ্য়োগে প্রেমাংশু স্পেনের মন্ট্রিল ফুটবল ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন কয়েকমাস পর।

নাজিরপুর বিদ্যাপীঠের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র প্রেমাংশু। আগামী সেপ্টেম্বরে আরও তিন জনের সঙ্গে স্পেনে যাবে। ফেরেন্দ তোরেসের কাছে প্রশিক্ষণ নেবেন তারা।

জীবন বড় সহজ ছিল না প্রেমাংশুর। তার মা দুর্গার ১৭ বছর বয়সে রানাঘাটের অসীম ঠাকুরের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। সুখের হয়নি সে পর্ব। ছেলেকে একাই মানুষ করেছেন দুর্গা।

সন্তান জন্মানোর মাত্র ২১ দিনের মাথায় শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় দুর্গাকে। সদ্যজাত প্রেমাংশুকে নিয়ে ঘর ছাড়েন দুর্গা।

বাপেরবাড়ি ফিরে ছোট্ট প্রেমাংশুকে বুকে আগলে দাঁত চেপে লড়াই শুরু করেন দুর্গা। অন্যের বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে ছেলের পড়াশোনার খরচ তুলেছেন।

ছেলের এই সাফল্যের দিনেও সেই স্মৃতি ভুলতে পারেননি তিনি। কথা বলতে বলতে গলা ভারি হয়ে আসে দুর্গার।

আশা ছিল ছেলে সরকারি চাকরি করবে, সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু ছেলে অন্য স্বপ্ন উপহার দিয়েছেন মাকে। ফুটবল। দুর্গা বলছিলেন, একসময় ছেলেকে খেলায় বাধা দিয়েছেন। তবু ফুটবল ছাড়াতে পারেননি।

টিফিনের পয়সা জমিয়ে জুতো কিনে খেলা শুরু করেন প্রেমাংশু। সেই জুতো এখনো রাখা আছে প্রেমাংশুর বাড়িতে। দিদির জমানো টিউশনের টাকা চুরি করে প্রথম ফুটবল কেনা। স্কুল পালিয়ে অনুশীলন। ফুটবলের প্রতি অগাধ প্রেম প্রেমাংশুকে এতটা পথ বয়ে এনেছে।

স্পেনে প্রশিক্ষণ নিতে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে খুশি প্রেমাংশু। বললেন, জন্মের পর মাকে ছেড়ে বাবা চলে গিয়েছিল, এমন সাফল্য অর্জন করতে চাই, যাতে আমাদের ছেড়ে দেয়া নিয়ে বাবাকে আফসোস করতে হয়।