বাংলাদেশে করোনা-টিকার ক্ষেত্রে সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার বিকল্প আছে কি নেই, সেপ্রসঙ্গে এমনটাই বললেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.আ ফ ম রুহুল হক৷
ডয়চে ভেলের সাপ্তাহিক ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়'-এ এবার আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি এবং জি-নাইন-এর সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ৷ এবারের বিষয় ছিল ভ্যাকসিনের কূটনীতি: ভারত ও চীন৷
অনুষ্ঠানে করোনা ভাইরাসের টিকা দেশে আসা ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরতার প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়৷ এ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ উত্থাপন করেন চীনের টিকা ও রাশিয়ার স্পুটনিক টিকা বাংলাদেশে আনার সুবিধার দিকটি৷ কেন সেরাম ইনস্টিটিউটের দিকেই শুধু তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি৷ জানতে চান, ‘‘সেরাম ইনস্টিটিউটের থেকে আসট্রাজেনেকার টিকা ছাড়া কি আমাদের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না? চীনের টিকার ট্রায়াল বাংলাদেশে হবার কথা ছিল, সেই ট্রায়াল কেন হলো না? চীনের সাথে কোন রাজনীতি ব্যর্থ হয়েছে?''
জবাবে আ ফ ম রুহুল হক বলেন, ‘‘চীনের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে উই মিসড দ্য ট্রেন৷ তবে সেই টিকা আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে অনুমোদিত হয়ে এলেই নিতে পারতাম, কিন্তু তা হয়নি৷ আর এছাড়া আমি আগেও বলেছি যে, আমাদের বিকল্প খোঁজা উচিত, সেটা নিয়ে আমি সায়ন্থ'র সাথে একমত৷ আমি এ বিষয়ে এর আগে অন্যন্য টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানেও বলেছি যে, আমাদের অন্যান্য বিকল্প টিকার কথা ভাবা উচিত৷ কখনোই টিকার মাত্র একটি উৎসের ওপর ভরসা করে থাকা আমাদের উচিত ছিল না৷ একাধিক উৎসের কথা বিবেচনা করা উচিত৷''
এছাড়া, আজকের পর্বে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে উন্নততর ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়, দুর্নীতি ও অপরাজনীতির প্রসঙ্গও আলোচিত হয়৷
এসএস/এসিবি
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ইসরায়েল
করোনার টিকা কার্যক্রমে সবার চেয়ে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ইসরায়েল৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে তারা ১৯ ডিসেম্বর থেকে৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে৷ অর্থাৎ, ১৭ ভাগ জনগোষ্ঠীকে এরই মধ্যে টিকার আওতায় এনেছে ইসরায়েল, যা সবার চেয়ে বেশি৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
সংযুক্ত আরব আমিরাত
পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সোয়া আট ভাগের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছে৷ মোট আট লাখ ২৬ হাজার ডোজ টিকা দিয়েছে তারা এই সময়ের মধ্যে৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বাহরাইন
পারস্য উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনের প্রতি ১০০ জনের চারজন এরই মধ্যে টিকা পেয়েছেন৷ এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের পরেই তাদের অবস্থান৷ মোট টিকাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
যুক্তরাষ্ট্র
করোনার টিকা বিতরণের মোট সংখ্যায় সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৫৩ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন৷ কিন্তু শতকরা হিসেবে ৬ জানুযারি পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন এক দশমিক ছয় শতাংশ৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম চালু করে যুক্তরাজ্য৷ তাদের হালনাগাদ তথ্যটি ২৭ ডিসেম্বরের৷ সেই হিসাবে সাড়ে নয় লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করেছে তারা, যা মোট জনগোষ্ঠীর সোয়া এক ভাগের বেশি৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
চীন
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিনোফার্মের টিকার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে চীন৷ শেষ ধাপের ট্রায়ালে আছে আরো কয়েকটি৷ তবে অনুমোদনের আগে পরীক্ষা পর্যায়েই সেসব টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৪৫ লাখ মানুষের দেহে৷ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশটিতে শতকরা হিসাবে সেটি একভাগেরও কম৷ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা দেশটির৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
রাশিয়া
ট্রায়াল শেষের আগেই বিশ্বে সবার আগে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকার অনুমোদন দিয়ে আলোচনায় আসে রাশিয়া৷ ৫ জানুয়ারির ঘোষণা অনুযায়ী দেশটি এরই মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে স্পুটনিক ফাইভ নামের সেই টিকা দিয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক ভাগের কম৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
জার্মানি
২৭ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপের দেশগুলো একজোটে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে৷ তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে জার্মানি৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে তিন লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন৷ জনসংখ্যার হিসাবে এটি এক ভাগের প্রায় অর্ধেক৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ইটালি
মোট সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে জার্মানির চেয়ে ইটালি কিছুটা এগিয়ে৷ করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ভোগা দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন লাখ সাত হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক পাঁচ-এক ভাগ৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ক্যানাডা
১৬ ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়া শুরু করে ক্যানাডা৷ এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত সেখানে করোনার প্রতিষেধক পেয়েছেন, যা জনসংখ্যার দশমিক চার-তিন ভাগ৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
স্পেন
৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্পেনে এক ৩৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে, যদিও জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে তা উল্লেখযোগ্য নয়৷
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বাকি বিশ্ব
ইউরোপের সব দেশেই করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশও তড়িঘড়ি করেই কার্যক্রম শুরু করেছে৷ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে ৫২ হাজার ডোজ বিতরণ করেছে৷ তবে এই দৌড়ে এখনও যোগ দিতে পারেনি সিংহভাগ উন্নয়নশীল ও কোনো অনুন্নত দেশ৷ সব মিলিয়ে বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় মাত্র দশমিক দুই ভাগ টিকা বিতরণ করা হয়েছে৷