1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চীনের উইগুর নিয়ে মুসলিম দেশগুলো চুপ কেন?

৬ ডিসেম্বর ২০১৯

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এমনিতেই ভালো যাচ্ছে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের৷ কিন্তু তারপরও দেশটি উইগুর এথনিক প্রোটেকশন অ্যাক্ট পাস করেছে৷ অথচ জিনজিয়াং-এ ঘটতে থাকা মানবিক এ দুর্যোগের বিষয়ে চুপ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো৷

https://p.dw.com/p/3UKm5
ছবি: Getty Images/AFP/O. Kose

চীনের ‘পুনঃশিক্ষাদান' কেন্দ্রগুলোতে ১০ লাখেরও বেশি উইগুর মুসলিমকে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ এই ক্যাম্পগুলোকে তুলনা করা হয় আধুনিক যুগের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প হিসেবে৷ শুধু বসবাসের অযোগ্য স্থান নয়, উইগুরদের নিয়মিত নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে৷

যাদেরকে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেয়া হয়, পরিবারের ওপর কড়া নজরদারির কারণে তারা বাকি জীবনও বলতে গেলে বন্দি অবস্থাতেই কাটান৷ জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ইসলামিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুজানে শ্র্যোটার মনে করেন, চীনের কমিউনিস্ট সরকার রাষ্ট্রীয় নীতি গ্রহণে এমন করেই নির্যাতনের পথ বেছে নেয়৷ পড়ুন সাক্ষাৎকার৷

ডয়চে ভেলে: জিনজিয়াং-এ উইগুরদের ওপর নজরদারি ও পুনঃশিক্ষার নামে কেমন নির্যাতন চালানো হয়, তা কেবলই সবাই জানতে শুরু করেছে৷ চীনের এমন নীতিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

শ্র্যোটার: চীনের সরকার খুবই কর্তৃত্বপরায়ণ এবং বিরোধী মত যে-কোনো উপায়ে দমন করতে চায়৷ শুধু উইগুরদের ক্ষেত্রেই নয়, উদারপন্থা এবং গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলেন, তাদেরকেও একই উপায়ে দমন করা হয়৷ একসময় ফালুন গং নামে একটি আন্দোলন শুরু হয়েছিল, চরমভাবে তা দমন করা হয়৷ তিব্বতের দালাই লামার সমর্থকদের অবস্থাও আমরা জানি৷ ফলে উইগুরদের ক্ষেত্রে চীন সরকার যা করছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷

পুনঃশিক্ষা ক্যাম্প বিশ শতকেও নানা সময়েই ব্যবহার করেছে চীন৷ জনগণের ওপর মতো চাপিয়ে দেয়া এবং বিরোধীদের মনে ভয় ধরাতে কার্যকরভাবে নানা দমনমূলক পন্থা অবলম্বন করেছে দেশটির কমিউনিস্ট সরকার৷ এতে সব স্তরের মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন৷ যাদের বিরুদ্ধে চীনা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের কথা তো বলাই বাহুল্য৷

জিনজিয়াং-এ বেইজিং-এর এই নীতির কারণ কী?

উইগুররা স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল৷ চীনা সরকারের চোখে এটিই তাদের ওপর দমনপীড়ন চালানোর জন্য যথেষ্ট বলে মনে হয়েছিল৷ পাশাপাশি, জিনজিয়াং-এ এই আন্দোলন শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং মুসলিমদের ধর্মীয় একটি আন্দোলনও ছিল৷ পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক আন্দোলনকে এখন জাতিসংঘ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সন্ত্রাসী আন্দোলন বলে মনে করে৷ বেশ কয়েক বছর ধরে এই গোষ্ঠী জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালিয়েছে৷ ২০১৪ সালে কুনমিং ট্রেন স্টেশনে বোমা হামলায় ৩০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যান৷ উইগুরদের ব্যাপারে চীনা নীতি এসব ঘটনা দিয়ে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করা হয়৷

এই পদ্ধতিটি চীন সরকার বিভিন্ন বিরোধী গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে৷ নিপীড়ন, ভয়াবহ ভয় সৃষ্টি করা এবং বাধ্যতামূলক শ্রম শিবিরে কাজ করানো, এসব পদ্ধতির অন্যতম৷

এখন পর্যন্ত চীন বরাবরই এই পদ্ধতি প্রয়োগে সফল হয়েছে৷ কড়া নজরদারির কারণে উইঘুরদের কোথাও চলে যাওয়ার সুযোগ নেই৷ ফলে এইকাজে চীনা সরকার বেশ সফল৷ মানবাধিকার লঙ্ঘন হলেও, এ পদ্ধতিটি সকল ধরনের প্রতিরোধকে পরাস্ত করতে সফল হয়েছে এবং সরকার এটাই চায়৷

অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধ আর সম্ভব না হলে কেবল বাহ্যিক চাপই এ পদ্ধতি থেকে চীনকে নড়াতে পারবে৷ মুসলিম দেশগুলোর কাছ থেকে কি এই চাপ আশা করা যায়?

উইগুরদের বিরুদ্ধে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সবচেয়ে বেশি আওয়াজ উঠছিল পশ্চিমা দেশগুলো থেকেই৷ তবে কয়েক বছর আগে তুরস্ক উইগুরদের জাতিগত সংগ্রামকে সমর্থন করে৷ এমনকি ২০০৯ সালে রেচেপ তাইয়্যিপ এর্দোয়ান জিনজিয়াং-এ চীনা নীতিকে 'গণহত্যা' হিসাবে অভিহিত করেছিলেন৷ অনেকদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করেন এবং জিনজিয়াংয়ের শরণার্থীদের আশ্রয়ও দিয়েছিলেন৷ উইগুর নেতাদের কেবল রাজনৈতিক আশ্রয়ই দেয়া হয়নি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগও তাদের দেয়া হয়েছিল৷

কিন্তু আঙ্কারার এই নীতি পরিবর্তন হয়েছে৷ ২০১৭ সালে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী উইগুরদের বিষয়ে কড়া নীতি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন৷ তুরস্কে এখন আর উইগুর সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুমতি দেয়া হয় না৷ এমনকি কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়ে৷ ২০১৯ সালের গ্রীষ্মে এর্দোয়ান তার সফরে চীন সরকারের সংখ্যালঘু নীতিগুলির প্রশংসাও করেন৷

এর্দোয়ানের এই নীতি হঠাৎ পালটে যাওয়ার কারণ কী?

এর দুটি কারণ রয়েছে৷ প্রথমত, পশ্চিমাদের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের অবনতি৷ আঙ্কারা বিকল্প শক্তির সমর্থন চায় এবং চীনকে এক্ষেত্রে নতুন মিত্র মনে করে৷ দ্বিতীয় কারণটি বাণিজ্যিক৷ তুরস্ক এখন একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ক দরকার৷ পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে৷ কারণ, মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো অর্থনৈতিক সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলে৷ অন্যদিকে, এর্দোয়ানবিরোধী দলকে দমন করেছেন কিনা, এ নিয়ে চীনের কোনো আগ্রহ নেই৷

এ বিষয়ে মুসলিম দেশগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি কী?

ইরান চীনা নীতির সমালোচনা করে না৷ ইরান থেকে তেলের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক চীন, ইরানের তেল ও গ্যাস খাতেও চীন প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করে৷ ইরানের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক আরো প্রসারিত করছে দেশটি৷ অর্থনৈতিক কারণে চীনের সঙ্গে পাকিস্তান ও সৌদি আরবের সম্পর্কও বেশ ভালো৷ যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান চীনা সংখ্যালঘু বিষয়ক নীতির প্রশংসাও করেছেন৷ অন্য আরব দেশগুলোরও অবস্থান একই রকম৷ এক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক সম্পর্ক একটি বড় কারণ৷

তাছাড়া, অনেক ইসলামী দেশ পরিচালিত হয় অগণতান্ত্রিক সরকার দ্বারা৷ ফলে তাদের প্রায়ই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পশ্চিমা দেশগুলির সমালোচনার মুখে পড়তে হয়৷ মিশর, উপসাগরীয় নানা দেশ, পাকিস্তান, ইরান এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য৷ অন্যদিকে, চীন মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে মোটেই আগ্রহী নয়৷ ফলে চীনের সঙ্গে যে কোনো দেশই একে অপরের অভ্যন্তরীণ নীতি নিয়ে সমালোচনার ভয় না করেই ব্যবসা করতে পারে৷

(অধ্যাপক ড. সুজানে শ্র্যোটার জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ইয়োহান ভুল্ফগাং ফন গ্যোটে ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর গ্লোবাল ইসলামিক রিসার্চ এর পরিচালক৷ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ডয়চে ভেলের রোডিয়ন এবিগহাউসেন৷)

এডিকে/এসিবি