ঘরছাড়াদের জন্য বাড়ি বানিয়ে দিচ্ছে কলকাতা মেট্রো
কলকাতার বৌবাজারে মেট্রোর সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে প্রচুর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাসিন্দাদের সরিয়ে দেয়া হয়। এখন তাদের বাড়ি করে দিচ্ছে তারা।
বাড়ি ভেঙে পড়েছিল
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণ-পর্বে সুড়ঙ্গ-বিপর্যয়ের জেরে বৌবাজারে একাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল । ঘরছাড়া হয়েছিল বহু পরিবার। ২০১৯ সালে বৌবাজারে একের পর এক বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল দুর্গা পিতুরি লেন আর কাঁসারিপাড়া লেনের বেশ কিছু বাড়ি।
সুড়ঙ্গে ওয়াটার পকেটের জন্য বিপত্তি
শিয়ালদহ থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত সুড়ঙ্গ গিয়েছে এই এলাকার মাটির ২০ মিটার নীচ দিয়ে। দুর্গা পিতুরি লেনের মাটির নিচে একটি বক্স তৈরির পরিকল্পনা করা হয়, যে বক্সে শিয়ালদহ এবং এসপ্লানেড থেকে আসা সুড়ঙ্গ মিলিত হবে। ২০১৯-এ সেই বক্সের একেবারে তলায় জল চুঁইয়ে মেট্রোর সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়ার জেরে তৈরি হয় ওয়াটার পকেট।
সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করতে হয়
এসপ্লানেডের দিক থেকে সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পরে মাটি ফুঁড়ে উপরে আসা জলের তোড়ে ২০১৯ সালের ৩১ অগস্ট দুর্গা পিতুরি লেনের কাছে থেমে গিয়েছিল টিবিএম ‘চণ্ডী’। সে সময়ে জল রুখতে চণ্ডী-সহ সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ করে দিতে হয়।
বহু বাড়িতে ফাটল
এলাকার অনেক বাড়িতে এবং রাস্তায় ফাটল দেখা যায়। সে যাত্রায় পর পর কংক্রিটের স্তম্ভ তৈরি করে সমস্যা রোখা গিয়েছিল।
আট মাস পর আবার
২০১৯-এর পর ২০২২। দুই বছর আট মাস বাদে সেই সমস্যাই ফিরে আসে। মধ্যরাতে ঘর ছাড়তে হয়েছিল কলকাতার দুর্গা পিতুরি লেনের বসতবাড়ির বাসিন্দাদের। অনেকেই ঘুমচোখে সেদিন বের হয়ে এসেছিলেন সামান্য জিনিসপত্র নিয়ে। আবার কাঠগড়ায় ওঠে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ।
একই সমস্যা
বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন, আগের অংশ দিয়েই নতুন করে জল চুঁইয়ে ঢুকে পড়ছে মেট্রোর জন্য তৈরি সুড়ঙ্গে। ভূমিতলে বদল এসেছে। তারই প্রভাব পড়ছে ভূপৃষ্ঠের উপর দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ি কিংবা রাস্তায়। ফাটল ধরছে তাতে।
একই বাড়িতে আবার ফাটল
দেখা যাচ্ছে, আগের বার যে বাড়ির যে যে অংশে ফাটল দেখা গিয়েছিল, এ বারও সেখানেই নতুন ফাটল ধরেছে। পাশাপাশি কয়েকটি ফাটলের দাগ একেবারেই নতুন। পুরনো ক্ষত সারার আগেই আবার নতুন ফাটল।
থমকেছে মেট্রোর কাজ
স্তূপীকৃত কংক্রিট কেটে মেঝে ঢালাইয়ের কাজ করতে গিয়ে বার বার থমকে গিয়েছে মেট্রোর কাজ। ওই অংশে হাত দিলেই জল বেরোনোর আশঙ্কায় কাজ থামাতে হয়েছে বহুবার। এমনকি যে অংশে কাজ হচ্ছে, সেখানে দুর্গা পিতুরি লেনের দিক থেকে জল ঢোকা ঠেকাতে মাটির নিচে টন টন কংক্রিট পাঠিয়েও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
নিরাপদ আশ্রয়ে
মেট্রোর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত সব বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চার বছর পরেও তারা এখনও নিজেদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্রই বসবাস করে চলেছেন।
সুড়ঙ্গের কাজ
বৌবাজার এলাকায় মেট্রোর সুড়ঙ্গের নির্মাণকাজ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে আসায় গত ডিসেম্বর মাস থেকেই বাসিন্দাদের সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে তৎপরতা বেড়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের। বাড়ি ভেঙে পড়ার জেরে এখনও ঘরছাড়া পরিবারগুলি আশার আলো দেখতে শুরু করেছে।
মেরামত চলছে
ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি মেরামতির কাজে হাত দিয়েছেন মেট্রোর নির্মাণ সংস্থা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর কর্তারা। দীর্ঘ দিনের পুরনো বাড়িগুলি বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে ফাটলের কবলে পড়েছিল। মেট্রো কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট বাড়িগুলি সম্পূর্ণ মেরামত করে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
নতুন ২৬টি বাড়ি
ভেঙে পড়া ২৬টি বাড়ি মেট্রো কর্তৃপক্ষ পুনর্নির্মাণ করে দিচ্ছেন। মালিকদের সম্মতিক্রমে ওই ২৬টি বাড়ির নকশা তৈরি করা হয়েছে। কলকাতা পুরসভার মাধ্যমে সেই নকশা অনুমোদনের কাজও প্রায় সম্পূর্ণ। আগামী এপ্রিলে ওই সব বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার কথা। নির্মাণ শুরু হওয়ার পরে কাজ শেষ হতে আরও বছর দুয়েক লাগতে পারে। এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট সংস্থাকে বরাত দেয়া হয়েছে।
ভূমিপুজো হলো
সেই সূত্রে কেএমআরসিএল এবং কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে গত রবিবার ভূমিপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ির লোকজনেরা অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের আশা এবার হয়ত তাদের পূর্বপুরুষের বাড়ির পুননির্মাণ কাজ শুরু হবে।
সময় লাগবে
এলাকার কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে জানান, এই মেট্রো প্রকল্পের জন্য এলাকার মানুষের প্রাণ চলে গিয়েছে। ধ্বংস হয়েছে বসতবাড়ি। যদিও নবনির্মাণের কাজে সময় লাগবে, তবু শুরু তো করা গেল।
আশা-নিরাশার দোলাচলে
পাশাপাশি রয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও। কেউ বলছেন লোক দেখানো, আবার কেউ আশায় রয়েছেন ভেঙে পড়া বাড়ির জায়গায় নতুন বাড়ি তৈরি হলে ফিরে পাবেন তার পুরনো প্রতিবেশীকে।