ইউরোপের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্প মোরিয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক শরণার্থীই নতুন করে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন৷ তাদের সবাইকেই এক সপ্তাহের মধ্যে থাকার ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছিল এথেন্স৷ নতুন তৈরি করা ‘কারে তেপে' ক্যাম্পে তিন হাজারের বেশি শরণার্থীর মধ্যে কেবল কয়েকশ প্রবেশ করেছেন৷
গ্রিসের শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি বলেছেন, ‘‘পাঁচ দিনের মধ্যে শরণার্থী সরিয়ে নেয়ার কাজ শেষ হবে৷ সবাইকেই নতুন ক্যাম্পে নিয়ে আসা হবে৷’’
কিন্তু মোরিয়া ক্যাম্পের শরণার্থীদের বড় একটি অংশ ক্যাম্পে উন্নততর জীবন অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোনো দেশে তাদের স্থানান্তরের দাবি করছেন৷
ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি ফ্লোরিয়ান শ্মিৎস এখন দ্বীপটিতে অবস্থান করছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘মোরিয়ায় দীর্ঘদিনের দুরবস্থার পর এখন শরণার্থীরা তো বটেই, দ্বীপের মানুষও আর নতুন কোনো ক্যাম্প চান না৷’’
রোববার থেকে যারা নতুন ক্যাম্পে প্রবেশ করেছেন, তাদের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করা হয়েছে৷
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
ইউরোপের সব চেয়ে বড় শিবির
গ্রিসের এই শরণার্থী শিবির হলো ইউরোপের সব চেয়ে বড় শিবির। প্রায় ১৩ হাজার শরণার্থী ছিলেন এখানে। গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে তাঁদের রাখা হয়নি। লেসবস দ্বীপেই ছিল তাঁদের শিবির। ইউরোপে যাঁরা আশ্রয় নিতে চান, তাঁরাই প্রথমে আসতেন গ্রিসে।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
পাঁচ বছর ধরে ছিলেন শরণার্থীরা
পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই শিবিরগুলিতে ছিলেন শরণার্থীরা। ২০১৫-১৬তে তাঁরা সব চেয়ে বেশি এসেছিলেন ইরাক ও সিরিয়া থেকে। অন্য দেশ থেকেও এসেছেন। কিন্তু এতদিনেও তাঁদের গ্রিসের মূল ভূখণ্ড বা ইউরোপের অন্য দেশে আশ্রয় জোটেনি। পড়ে থাকতে হয়েছে একটি দ্বীপে।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
ছোট জায়গায় অনেক শরণার্থী
গ্রিসের ওই শরণার্থী শিবিরে ছিলেন প্রায় ১৩ হাজার মানুষ। গাদাগাদি করে। মানবাধিকার সংগঠনের মতে, ওখানে হাজার তিনেক মানুষ ভালোভাবে থাকতে পারেন। সেখানে চারগুণ বেশি মানুষকে রাখা হয়েছিল। ফলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ছিল।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
লকডাউনের কড়াকড়ি
সম্প্রতি ওই শিবিরে থাকা এক শরণার্থীর করোনা ধরা পড়ে। তারপর শুরু হয় লকডাউনের কড়াকড়ি। ক্ষোভ আরো বাড়ে। শরণার্থীদের মতে, ওই জায়গায় কোয়ারান্টিনে থাকা সম্ভবই নয়।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
আগুন লাগার পর
দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আর শরণার্থীরা যে যা পেরেছেন, তাই হাতে নিয়ে পালাচ্ছেন জায়গা ছেড়ে। তাঁদের মাথার উপর ছাদও আর থাকল না।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
রাত কাটছে রাস্তায়
শরণার্থীদের রাত কেটেছে রাস্তায়। সপরিবারে রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন তাঁরা। অনেকে বসে। একসময় কঠিন অবস্থার মধ্যে দেশ ছেড়ে আসতে হয়েছিল। এতদিন শিবিরে ছিলেন। সেটাও পুড়ে গেল। খাবার নেই, জল নেই, নবজাতকের জন্য দুধ নেই। ভয়ঙ্কর অবস্থা।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
আগুন লাগার কারণ
কী করে আগুন লাগল এই শরণার্থী শিবিরে? স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্ট বলছে, শরণার্থীরাই শিবিরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা লকডাউনের কড়াকড়ি নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ছিলেন। বছরের পর বছর ওই শিবিরে কাটাতে হচ্ছে বলে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙছিল। পরে প্রশাসনও জানিয়েছে, আগুন লাগানো হয়েছিল।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
সাহায্যের হাত
আগুন লাগার পরেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স এবং নেদারল্যান্ডস। জার্মানি ও ফ্রান্স ৪০০ বাচ্চাকে নেবে বলে জানিয়েছে। নেদারল্যান্ড ১০০ জন বাচ্চাকে। জার্মানির চ্যান্সেলার আঙ্গেলা ম্যার্কেল জানিয়েছেন, এটা হলো প্রাথমিক পদক্ষেপ। যে অপ্রাপ্তবয়স্করা একা, তাঁদের আশ্রয় দেবে জার্মানি। জার্মানির রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া এক হাজার জন শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে চায়।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
আপত্তি দক্ষিণপন্থীদের
জার্মানির চরম দক্ষিণপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানি এ ভাবে শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের দাবি, শরণার্থীরা নিজেরাই শিবিরে আগুন ধরিয়েছেন। এরপর তাঁদের ওখানেই থাকতে হবে। গ্রিসের দ্বীপে আবার তাঁদের জন্য শিবির তৈরি করে দেয়া হোক। এ ভাবে জবরদস্তি করে তাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় পাবে, এটা মানা যায় না বলে জানিয়েছে এই চরম দক্ষিণপন্থী দল।
-
গ্রিসে শরণার্থী শিবিরে আগুন ও কিছু প্রশ্ন
রেডক্রসের দাবি
রেডক্রস বলেছে, যে শরণার্থীরা খোলা আকাশের তলায় আছেন, তাঁদের অবিলম্বে উদ্ধার করুক ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গ্রিসের দ্বীপে শরণার্থীরা খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। দ্রুত তাঁদের গ্রিসের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে আসা উচিত বলে তারা মনে করে।
জার্মানির ওপর চাপ বাড়ছে
গত সপ্তাহে ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া ১১ হাজারের মতো শরণার্থীর অনেকেই এখন রাস্তায় রাত কাটাচ্ছেন৷ ডয়চে ভেলের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আগুনে বিধ্বস্ত হওয়া মোরিয়া ক্যাম্পেও এখনও অন্তত হাজারখানেক মানুষ বাস করছেন৷
একটি সড়কে কয়েকশ শরণার্থী জড়ো হয়ে রোববার বিক্ষোভ করেন, তবে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে৷ এখন সে সড়ক ঘিরে রাখা হয়েছে, সাংবাদিকদের সেখানে যেতে দেয়া হচ্ছে না৷
মোরিয়া শরণার্থী ক্যাম্প বিধ্বস্ত হওয়ার পর নতুন করে শরণার্থী সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে গ্রিস৷ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এলেও কেউই নিজের দেশে শরণার্থী নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে৷ ফলে বিভিন্ন দেশের কোটাভিত্তিক শরণার্থী নেয়ার নীতি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷
জার্মানি ক্যাম্প থেকে ১৫০ জন শিশুকে নেয়ার প্রস্তাব দিলেও এ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে দেশটিকে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, অনেক গৃহহীন শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষমতা জার্মানির থাকলেও দেশটি তা করছে না৷
জার্মান মন্ত্রিসভার সদস্যরাও এ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছেন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হোর্স্ট সেহোফারের শরণার্থী কোটার সমালোচনায় সরব হয়েছে তার মন্ত্রিসভারই উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার৷ জার্মানির অন্তত দুই হাজার শরণার্থী নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷
এডিকে/এসিবি (এপি, রয়টার্স)