গ্রিসে উদ্বাস্তুদের পশ্চিম ইউরোপে যাবার আপ্রাণ প্রচেষ্টা
রেলওয়ে স্টেশনের সাইডিংয়ে ফেলে রাখা পরিত্যক্ত বগিতে থাকেন তারা; মালগাড়ির ফাঁকে-ফোকরে ঢুকে গ্রিস ছেড়ে পশ্চিম ইউরোপে যাবার চেষ্টা করেন৷ ডয়চে ভেলের আলোকচিত্র সাংবাদিক দিমিত্রিস তোসিদিস তাদের দেখা পান থেসালোনিকিতে৷
ঝুঁকি ছাড়া আবার জীবন কি?
আলজেরিয়া থেকে আসা ১৮ বছর বয়সের তরুণ মহম্মদ (বাঁ দিকে) আমাদের প্রশ্ন শুনে হাসলেন৷ সারাদিন লুকিয়ে থেকে মালগাড়িতে চেপে পালানোর প্রচেষ্টা কতটা বিপজ্জনক? ‘‘ঝুঁকি ছাড়া আবার জীবন কি?’’ বললেন মহম্মদ৷
এই টাকায় আর কতদিন যাবে?
আলজেরিয়া থেকে আসা আনোয়ার (বাঁয়ে) আর আহমেদ একটি পরিত্যক্ত বগিতে বসে পরের মালগাড়ির অপেক্ষা করছেন৷ ‘‘আমি তিনবার ট্রেনে লুকিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছি - দু’বার ধরা পড়েছি ম্যাসিডোনিয়ায় আর একবার ধরেছে গ্রিক পুলিশ,’’ বললেন আহমেদ৷ আনোয়ার জানালেন, ‘‘একটা জাল পাসপোর্টের জন্য ১,৫০০ ইউরো লাগে আর পাত্রাস বন্দর থেকে ইতালিতে আসার জন্য ৬০০ ইউরো৷ আমার কাছে আছে আর মাত্র ২৫ ইউরো, যা আমার সার্বিয়ার জন্য লাগবে৷’’
চূড়ান্ত লক্ষ্য
আলজেরিয়া থেকে আসা ২৯ বছর বয়সি জাকি একটি পরিত্যক্ত বগিতে একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছেন৷ তিনি গ্রিসে আসেন নয় মাস আগে, একটি অলিভ গাছের বাগানে মাসখানেক ধরে কাজও করেন৷ ছয় বার জার্মানিতে যাবার চেষ্টা করেছে৷ তার সর্বশেষ প্রচেষ্টা আংশিক সফল হয়েছে - সে এখন বলকান অঞ্চলের কোনো এক জায়গায়৷
যে ট্রেন কোথাও যায় না
মরক্কোর এক অভিবাসী একটি পরিত্যক্ত ট্রেনের কামরায় বসে তার ভবিষ্যতের কথা ভাবছেন৷ তিনি নাকি ট্রেনে লুকিয়ে পালানোর প্রচেষ্টায় তিনবার গ্রিস আর ম্যাসিডোনিয়ার সীমান্তে ধরা পড়েছেন আর একবার ধরা পড়েছেন পাত্রাস বন্দর থেকে ট্রাকে লুকিয়ে ইটালি যাবার চেষ্টা করার সময়৷
লুকানোর জায়গা
মালগাড়িটা ইঞ্জিন বদলানোর জন্য এই স্টেশনে থামার পর ১৬ বছর বয়সের জালোয়ান, ২৩ বছর বয়সি আবদেল রহমানকে একটি বগির তলায় ঢুকতে সাহায্য করছে৷ নিরাপত্তা প্রহরীদের বিবৃতি অনুযায়ী, ম্যাসিডোনিয়া পুলিশ নাকি ঠিক ঐ জায়গাতেই তাদের তল্লাসি শুরু করে৷
গন্তব্য অজ্ঞাত
মালগাড়িগুলির টাইমটেবল জানা নেই বলে উদ্বাস্তুরা অনেক সময় জানেন না, ট্রেনটা কোথায যাচ্ছে৷ কাজেই অভীপ্সিত উত্তরে না গিয়ে, ট্রেন হয়তো এথেন্সে গিয়ে থামতে পারে৷
শেষ নির্দেশ
আলজেরিয়ার এক অভিবাসী তাঁর বন্ধুকে মালগাড়িতে লুকানোর পন্থা বুঝিয়ে দিচ্ছেন৷ ট্রেনটিতে লোহালক্কড় বোঝাই করা হয়েছে৷ পথে শ্বাসরোধ ও জলাভাবের বিপদ আছে৷
এক লাফে...
অভিবাসী তরুণরা বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মীদের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পালাচ্ছে৷ প্রাইভেট সিকিউরিটি কনট্রাক্টরের নিযুক্ত লোকজন এখানে টহল দিয়ে থাকে৷
রসদ ঠিক রেখো
মহম্মদ কাছের সফটেক্স উদ্বাস্তু শিবির থেকে খাবারদাবার ও পানি নিয়ে যাচ্ছেন তার বন্ধুবান্ধবদের জন্য - যারা ইতিমধ্যেই মালগাড়িটায় লুকিয়েছেন৷
যাদের দেখার কথা
গ্রিক রেলওয়ে কর্মীরা দুপুরের লাঞ্চব্রেকে তাস খেলছেন৷ পানাজ্যোটিস (ডানদিকে) গত ৩৩ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন৷ ‘‘প্রায় এক বছর ধরে এই ব্যাপারস্যাপার চলেছে, তবে গত গ্রীষ্ম থেকে প্রায় প্রতিদিন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে৷ ওরা যায়, আবার এক দিন পরে ফিরে আসে৷ এভাবে পালানোটা খুবই বিপজ্জনক, কিন্তু আমরা ওদের থামাতে পারি না৷একবার দেখেছিলাম, এক সিরীয় মা তাঁর বাচ্চাটিকে নিয়ে একটি পেট্রোলের ওয়াগনে ঢুকবার চেষ্টা করছেন৷’
ওয়ার্নিং
গ্রিক কর্তৃপক্ষ আরবি ভাষায় নোটিশ টাঙিয়েছেন, বিদ্যুতের তারের ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে৷ গত নভেম্বর মাসে এক আলজেরীয় অভিবাসী ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারান৷
প্রতিবেদন: দিমিত্রিস তোসিদিস (থেসালোনিকি)/ এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী