মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত জানান, ‘‘গ্রামীণ ব্যাংকের নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় পরিবর্তন করা হবে৷ বিধিমালায় বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের৷ ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে অন্য কাউকে এই দায়িত্ব দেয়া হবে৷''
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রামীণ ব্যাংকের নির্বাচন করতে চায় না৷ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তারা এটা করতে পারে না৷'' উল্লেখ্য, গত ৬ই এপ্রিল গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালক নির্বাচনের বিধিমালা জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ৷ বিধিমালায় বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় ছয় মাস৷ সে হিসাবে নির্বাচনের সময় শেষ হচ্ছে আগামী ৫ই অক্টোবর৷
-
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
সিলভিয়ার গল্প
বাড়িতে বাড়িতে চিঠিপত্র বিলি করতে করতেই জার্মানির সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার একটি বিষয় লক্ষ্য করেন৷ অনেক বাড়ির ছাদে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল৷ তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, এসব প্যানেল পরিষ্কার করা হয় কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণের সন্ধান পান তিনি৷
-
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
দু’হাজার ইউরো দিয়ে শুরু
সিলভিয়া আবিষ্কার করেন, সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ তেমন কেউ করছে না৷ অথচ মাত্র দু’হাজার ইউরো দিয়ে মেশিন কিনে এই কাজ করা সম্ভব৷ কিন্তু সাধারণ ব্যাংক এত কম টাকা ঋণ দিতে রাজি নয়৷ সিলভিয়া তখন ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নেন৷
-
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত উন্নত অর্থনীতির কারণে জার্মানিকে ক্ষুদ্রঋণের অনুপযুক্ত মনে করা হতো৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন৷ ২০১০ সালে জার্মান সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এদেশে চালু হয় ক্ষুদ্রঋণ তহবিল৷ এই তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার হার দ্রুতই বাড়ছে৷
-
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে ৬০টি প্রতিষ্ঠান
জার্মান মাইক্রোফিন্যান্স ইন্সটিটিউটের ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে বর্তমানে ৬০টির বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দিচ্ছে৷ তাদের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ তিন হাজার থেকে ২০ হাজার ইউরোর মধ্যে৷ (প্রতীকী ছবি)
-
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
চাহিদা বাড়ছে
শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপেই ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে৷ মার্কিন পত্রিকা ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের’ এক জরিপ বলছে, ইউরোপে ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ শুধু স্পেনেই এই সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নিয়েছেন ৭৫ হাজার ব্যবসায়ী৷ (ফাইল ফটো)
-
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
সুদের হার লাভজনক নয়
ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ দানের ক্ষেত্রে সুদের হার এখন মাত্র দশ শতাংশ৷ এই হার ঋণদাতাদের জন্য লাভজনক নয়৷ তবে সরকার এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সহায়তা দিচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
-
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
সন্তুষ্ট সিলভিয়া
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ শুরু করা সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার কিন্তু সন্তুষ্ট৷ শুরুর দিকে বছরে আশিটির মতো কাজের অর্ডার পেতেন তিনি৷ এখন সেই অর্ডারের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে৷ একেকটি অর্ডার থেকে তাঁর আয় তিন থেকে চারশো ইউরো৷ ফলে ঋণের টাকা শোধ করা কোনো বিষয়ই নয়৷
-
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
ক্ষুদ্রঋণের জনক মুহাম্মদ ইউনূস
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ বিশ্বের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করে গ্রামীণ ব্যাংক৷ অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ক্ষুদ্রঋণের ধারণা কাজে লাগিয়ে আশির দশকে ব্যাংকটি গড়ে তোলেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক দেশে সাফল্য দেখিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম / ইয়োহানা শ্মেলার
বিধিমালা জারির পর গত মাসে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে তাগিদ দেয়া হয়৷ এরপরই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে গিয়ে দেখা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান জানিয়ে দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ড. আতিউর রহমান৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ‘‘শুধু গ্রামীণ ব্যাংক নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যাংকেরই পরিচালক নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চায় না৷''
আদালতের রায় মেনে ২০১১ সালের মে মাসে
ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংক থেকে চলে যাওয়ার পর, এখনো গ্রামীণ ব্যাংকে এমডি নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার৷ বরং ভারপ্রাপ্ত এমডি দিয়ে চলছে গ্রামীণ ব্যাংকই৷ প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এমডি নিয়োগ দিয়ে আসছিল৷ পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়৷ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের নয়জনই ঋণগ্রহীতা সদস্য৷ বাকি চারজন সরকার মনোনীত সদস্য৷ ঋণগ্রহীতা সদস্যরা মাঠপর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন এবং সবাই ড. ইউনূসের সমর্থক বলে পরিচিত৷ এর ফলে সরকার নিজের পছন্দের এমডি নিয়োগ দিতে পারছিল না৷ এর পরেই ২০১২ সালের আগস্টে গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ সংশোধন করা হয়৷ সংশোধনীতে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এমডি নিয়োগের বাছাই কমিটি গঠনের একক ক্ষমতা দেয়া হয় চেয়ারম্যানকে৷
বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের দুই হাজার ৫৬৭টি শাখা
কিন্তু পরের দুই বছরে ঋণগ্রহীতা নারী পর্ষদ সদস্যদের আপত্তিতে এমডি নিয়োগের বাছাই কমিটিও গঠন করা সম্ভব হয়নি৷ বেশ কয়েকটি পর্ষদ সভায় গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান একতরফাভাবে বাছাই কমিটি পাস করার চেষ্টাও করেও সফল হননি৷ অন্যদিকে নারী পর্ষদ সদস্যরা চেয়েছিলেন, বাছাই কমিটির প্রধান যেন ড. ইউনূসকে করা হয়৷
শেষ পর্যন্ত এমডি নিয়োগে সফল না হতে পেরে পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন বিধিমালাই পরিবর্তন করা হয় গত এপ্রিলে৷ আর নতুন বিধিমালায় নির্বাচনের দায়িত্ব দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে৷ এখন বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছে৷ প্রসঙ্গত, বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের দুই হাজার ৫৬৭টি শাখা, ২৬৬টি এলাকা এবং ৪০টি অঞ্চল রয়েছে৷ প্রতিটি শাখায় গড়ে ৫৬টি করে কেন্দ্র আছে৷ ব্যাংকের মোট কেন্দ্রের সংখ্যা এক লাখ ৪৩ হাজার ৬৫৷ এছাড়া ব্যাংকের মোট সদস্য ৮৬ লাখের ওপরে, যাঁদের ৯৫ ভাগই নারী৷