1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গোবর থেকে শুষ্ক রিসাইক্লিং সার

২২ জানুয়ারি ২০১৮

তরল গোবর সার হল্যান্ড বা জার্মানির কৃষিতে অপরিহার্য৷ কিন্তু ঐ সার যেমন দুর্গন্ধ, তেমনই তার পরিবহণ থেকে শুরু করে অপসারণ পর্যন্ত খরচের অন্ত নেই৷ কিন্তু তরল সার থেকে যদি শুকনো, আকরিক, রিসাইক্লিং সার তৈরি করা যায়?

https://p.dw.com/p/2rGsJ
ছবি: picture alliance/F. May

জার্মানে বলে ‘গ্যুলে’, ইংরেজিতে তার নাম স্লারি বা লিকুইড ম্যানিওর৷ জার্মানিতে মাঠে এই তরল গোবর সার দেবার মুশকিল হলো এই যে, বহু দূর থেকে ট্যাংকে করে সেই সার আনতে হয়, কেননা জার্মানিতে গরুবাছুরের খামারের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে৷ স্টুটগার্টের এক গবেষক ও তাঁর সহযোগীরা তরল সার পরিবহণের সমস্যার এক সহজ সমাধান বের করেছেন৷

ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারফেসিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির ড. জেনিফার বিলবাও জানালেন, ‘‘তরল গোবর সারে প্রচুর পানি থাকে৷ সেই পানি বয়ে নিয়ে যাওয়ার খরচ আছে৷ অপরদিকে অনেক এলাকার মাটিতে নিউট্রিয়েন্টের প্রয়োজন৷ কাজেই আমাদের আইডিয়াটা ছিল, তরল সার থেকে নিউট্রিয়েন্টগুলো বের করে, শুধু সেগুলোকেই অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে৷’’

ল্যাবরেটরিতে তারা সেটা ইতিমধ্যেই পরীক্ষা করে দেখেছেন৷ তরল সারে কিছুটা অম্ল দিয়ে পানি থেকে নিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর পদার্থগুলি আলাদা করা হয়৷ তারপর পানিটা ছেঁকে নিউট্রিয়েন্টগুলি বের করে নেওয়া হয়৷ বাকি পানি থেকেও মূল্যবান ফসফরাস ও ফসফেট ইত্যাদি ছেঁকে বের করা হয়৷ অ্যামোনিয়া হিসেবে যে নাইট্রোজেন পাওয়া যায়, তা অ্যামোনিয়াম সালফেট সারে পরিণত করা হয়৷ সেটা ঠিক কীভাবে করা হয়, সেটাই হল ব্যবসার চাবিকাঠি৷ কিন্তু গোটা প্রক্রিয়াটা থেকে বের হয় স্বচ্ছ একটি লিকুইড ও একটি গন্ধবিহীন, মিহি পাউডার৷

ড. বিলবাও বললেন, ‘‘আমরা তরল সার থেকে নানা পণ্য উৎপাদন করেছি, যেমন অ্যামোনিয়াম সালফেট, যা কিনা একটা নাইট্রিক সার৷ এছাড়া আছে ফসফেট ও সবশেষে এই সব আকরিক পদার্থ, যা আমরা গ্র্যানুলেট হিসেবে তৈরি করি, কেননা তা মাঠে ছড়ানো আরো সহজ হয়৷’’

রিসাইক্লিং সার কি রাসায়নিক সারের মতো কার্যকর?

প্রক্রিয়াটা চাষিদের পক্ষে স্বভাবতই ভালো৷ কিন্তু এই রিসাইক্লিং সারের ক্ষেত্রেও কি সেকথা প্রযোজ্য? সে প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেছে হোহেনহাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের হটহাউস তথা নার্সারিতে৷ এখানে ঐ কৃত্রিম সার ও তার কার্যকরিতা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে৷ সেখানকার কৃষি বিজ্ঞানী আন্ড্রেয়া এহমান জানালেন, ‘‘আমরা এখানে বিভিন্ন ধরণের গাছে তরল সার থেকে পাওয়া ফসফেট সার দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছি – যেমন এক্ষেত্রে রাইগ্রাস, যা এক ধরণের ঘাস৷ প্রথম টবটিতে কোনো সার দেওয়া হয়নি৷ কিন্তু অন্য দু'টি টবের ঘাসগুলো প্রায় একই পরিমাণ বেড়েছে, যদিও তাদের একটিতে তরল সার দেওয়া হয়েছে ও অপরটিতে তরল সার থেকে পাওয়া রাসায়নিক ফসফেট৷’’

কিন্তু কৃষি তো আর নার্সারি বা হটহাউসে হয় না, চাষের কাজ হয় চাষের ক্ষেতে৷ আন্ড্রেয়া এহমান বললেন, ‘‘আমরা সাইলোর ভুট্টা আর শীতের গম শস্য নিয়ে মাঠে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি – প্রথমত এখানে হোহেনহাইমে, দ্বিতীয়ত স্পেনে, আমাদের প্রকল্প সহযোগীদের সঙ্গে, যেখানকার আবহাওয়া সম্পূর্ণ আলাদা৷ এক্ষেত্রেও আমরা দেখাতে পেরেছি যে, তরল সার থেকে নিষ্কাশিত রিসাইক্লিং সার কৃষিক্ষেত্রেও আকরিক সারের মতোই সমান কার্যকরি৷’’

কাজেই গরুবাছুরের খামারগুলোর গোবর থেকে শুকনো আকরিক সার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হতে দৃশ্যত আর খুব বেশি বাকি নেই৷ ড. বিলবাও জানালেন, ‘‘শুধুমাত্র সার বেচে আপাতত এই প্রক্রিয়ার খরচ ওঠে না৷ কিন্তু খামারচাষিদের ঐ ‘গ্যুলে' বা তরল সার অপসারণের জন্য যে পরিমাণ ব্যয় করতে হয়, সেকথা ভাবলে আমরা ইতিমধ্যেই বলতে পারি যে, খামারে গ্যুলে রিসাইক্লিং যন্ত্র বসানোটা লাভজনক হতে পারে৷’’

উইন-উইন পরিস্থিতি: খরচ কমবে, দুর্গন্ধ কমবে, মাটি ও ভূগর্ভস্থ পানিতে নাইট্রেটের পরিমাণ কমবে৷ কাজেই লাভ ছাড়া কোনো লোকসান নেই৷

টোমাস ভাগনার/এসি