গাজী টায়ারসে উদ্ধার কার্যক্রম বিপজ্জনক, স্বজনদের অপেক্ষা
২৯ আগস্ট ২০২৪বৃহস্পতিবার দুপুর বারোটার দিকে ছয়তলা ভবনটির বেজমেন্টে প্রবেশ করে ফায়ার সার্ভিস৷ কিন্তু সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি বলে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নানকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে দ্য ডেইলি স্টার৷
মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ভবনটিতে একটি বেজমেন্ট থাকার তথ্য আমাদের কাছে ছিল৷ সেখানে কেউ আটকা পড়েছিলেন কিনা সেটা দেখতে দুপুর ১২টার দিকে আমাদের একটি দল অনুসন্ধান চালায়৷ বেজমেন্টে আগুন পৌঁছায়নি, জায়গাটি অক্ষত রয়েছে৷ কিন্তু অনুসন্ধানে সেখানে কোনো ভিকটিমের খোঁজ মেলেনি৷''
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে ভবনটির চতুর্থ ও পঞ্চম তলার মেঝে ধসে পড়েছে৷ এ অবস্থায় পুরো ভবনে অনুসন্ধান বা উদ্ধার অভিযান চালানো যাচ্ছে না৷
অভিযান চালানো খুবই বিপজ্জনক: বিশেষজ্ঞ
বৃহস্পতিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান৷ নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের আহ্বানে সকাল নয়টায় তিনি ভবনটি পর্যবেক্ষণে আসেন বলে জানিয়েছে দৈনিক প্রথম আলো৷
পরে রাকিব আহসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা ভবনের চারপাশ ঘুরে দেখেছি৷ ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারের (মই) সাহায্যে যতটা সম্ভব বাইরে থেকে ভবনের ভেতরে দেখেছি৷ ড্রোনের সাহায্যে ধারণ করা ভিডিও ও ছবি পর্যবেক্ষণ করেছি৷ আগুনটা আসলে অনেকক্ষণ সময় ধরে প্রায় তিন দিনের মতো জ্বলেছে৷ বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল থাকায় তাপও অনেক বেশি হয়েছে, যা ভবনটির অবস্থা দেখলে বোঝা যায়৷ ভবনটি শুধু পুড়ে যায়নি, পুড়ে ভেঙে গেছে৷ রডগুলো বেরিয়ে গেছে৷ ছয়তলা ভবনটির চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার মেঝে ভেঙে তৃতীয় তলার মেঝেতে পড়ে গেছে৷ ভাঙা অংশগুলোর ওজনে তৃতীয় তলাও বেঁকে গেছে৷ কলামগুলো বেশির ভাগ ফেটে গেছে। এ ফাটল আমরা বাইরে থেকে যতটা দেখতে পাই, আগুন লাগার ফলে ভেতরটাতেও ততটাই ফাটল থাকে৷ ওপরের দিকে আগুন বেশি জ্বলায় সেখানে ক্ষতি বেশি হয়েছে৷ এখন নিচের দিকে উদ্ধার অভিযান চালানোর চেষ্টা করা হলে ওপর থেকে ভেঙে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে৷''
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত দলের প্রধান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ছাইফুল ইসলাম, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল হকসহ তদন্ত দলের সদস্যরাও তার সাথে ভবনটি পর্যবেক্ষণ করেন৷
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘‘আমরা চারতলা পর্যন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠে দেখেছি, ড্রোন ও টার্ন টেবিল ল্যাডার দিয়ে ছাদসহ পুরো ভবন দেখেছি৷ চার, পাঁচ ও ছয়তলার ফ্লোর ভেঙে তিনতলায় পড়েছে৷ তিনতলার ফ্লোর বাঁকা হয়ে গেছে৷ খালি চোখে যতটুকু দেখা গেছে, তাতে কোনো হতাহত আমাদের চোখে পড়েনি৷ প্রতিটি ফ্লোরের রড বের হয়ে গেছে, কলাম ফুলে গেছে, বিম বাঁকা হয়ে গেছে৷ এমন অবস্থায় ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ চালানোর সুযোগ নেই৷''
পঞ্চম দিনের মতো স্বজনদের অপেক্ষা
এদিকে পঞ্চম দিনের মতো ভবনটির বাইরে নিখোঁজ স্বজনেরা অপেক্ষা করছেন৷ যদিও প্রিয়জনদের অক্ষত লাশ পাওয়ার আশা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে৷
ঐ ভবনে কতজন নিখোঁজ রয়েছেন সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷ মঙ্গলবার ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ পরিচালক মো. ছালেহ উদ্দিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্থানীয় লোকজন নিখোঁজ ব্যক্তিদের ১৭৪ জনের তালিকার কথা বললেও আমাদের জানা নাই৷” মঙ্গলবার ওই এলাকায় নিখোঁজদের নিয়ে কাজ করা ছাত্ররা ৯৯ জনের নাম, ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি টানিয়ে দেয়। তাদের ‘নিখোঁজ' বলা হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের জনসংযোগ জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহজহান শিকদার বলেন, ‘‘আমরা কোনো নিঁখোঁজের তালিকা করিনি৷ আমরা আগুন লাগার পর ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছি। কোনো মৃতদেহ আমরা এখনো পাইনি৷''
গত ২৫ আগস্ট রাত ১০টার দিকে গাজী টায়ার কারখানার ছয়তলা ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে৷ এরপর থেকে শত শত মানুষ এসে সেখানে জড়ো হন৷ গত ২৪ আগষ্ট রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী, গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জের আদালত তার ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন৷ খবর পেয়ে অনেক মানুষ কারখানাটিতে গণহারে লুটপাট চালায়৷ আগুন লাগার সময়ও লুট করতে গিয়ে শতাধিক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েন বলে স্থানীয়রা জানান৷
গাজী টায়ার কারখানাটি রূপঞ্জের রপসী এলাকায়৷ ৯৬ বিঘা জমির ওপরে ২০১৩ সালে টায়ারের কারখানাটি করা হয়৷ কারখানায় দুই হাজার ৩০০ শ্রমিক কাজ করতেন৷ ছয় তলা ভবনটির প্রথম তিনটি ফ্লোরে ফ্যাক্টরি এবং বাকি তিনটি ফ্লোরে গোউাউন ছিল৷ এখানে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি৷
এফএস/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার, প্রথম আলো)