আয়ারল্যান্ডের প্রিমিয়ার লেও ভারাদকরের মতে, এটা এমন এক গণভোট যা গোটা প্রজন্মে একবার হয়৷ গর্ভপাতের পক্ষে ও বিপক্ষে যে বিপুল বিতর্ক চলছে, তার মধ্যে প্রিমিয়ারের মন্তব্যে সবাই নিশ্চয়ই একমত হবেন৷
আইরিশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী অনুসারে গর্ভপাতে প্রায় নিষেধাজ্ঞাই জারি হয়েছে দেশটিতে৷ একাধিক ঘটনায় গর্ভপাতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করা গেলেও এখনও এ কাজ আয়ারল্যান্ডে বেআইনি৷ এর মধ্যে উল্লেখ করা যায় ১৯৯২ সালের একটি ঘটনা৷ ধর্ষিতা এক নাবালিকা যে সংবাদমাধ্যমে ‘এক্স’ নামে পরিচিত, সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় আত্মঘাতী হয়৷ তখনও বিতর্ক হয়েছিল, গর্ভাবস্থা যদি মায়ের জীবনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তাহলে কেন গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া যাবে না?
-
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে পাঁচটি ভ্রান্ত ধারণা
‘ইন্ট্রাইউটেরাইন কন্ট্রাসেপশন’ সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা লোপ করে
অনেকেই ‘ইন্ট্রাইউটেরাইন কন্ট্রাসেপশন’ বা আইইউসি ব্যবহার করতে চান না, কেননা তাদের ধারণা জরায়ুর মধ্যে টি-শেপের একটি ডিভাইস বসানো হলে ভবিষ্যতে চাইলেও সন্তান জন্মদেয়া কঠিন হয়ে পড়বে৷ কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, এটা ভিত্তিহীন ধারণা৷ আর ভবিষ্যতে আইইউসি পদ্ধতি ব্যবহার করা নারী অন্যদের মতোই সন্তান নিতে পারবেন৷ এই পন্থা যেকোন বয়সের, এমনকি যাদের কোনো সন্তান নেই এমন নারীদের জন্যও কার্যকর৷
-
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে পাঁচটি ভ্রান্ত ধারণা
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলে ওজন বাড়ে
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির জটিল রাসায়নিক গঠন যা ভ্রুণের বৃদ্ধি রোধ করে, কারো কারো ক্ষেত্রে ওজন বাড়াতে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে তার মানে এই নয়, যে কোনো নারী, যিনি কিনা বড়ি গ্রহণ করেন, তার ওজন বেড়ে যাবে৷ ওজন আরো অনেক কারণে বাড়তে পারে৷
-
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে পাঁচটি ভ্রান্ত ধারণা
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণে মাঝেমাঝে বিরতি দিতে হয়
মেয়েরা চাইলে যতদিন খুশি ততদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেতে পারেন, কারণ এটা পুরোপুরি নিরাপদ৷ আর যখন গর্ভবতী হতে চাইবেন, তখন পিল ছাড়লেই চলবে৷ তবে আপনার চিকিৎসক যে বড়ি খেতে বলেন, সেটা খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ৷
-
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে পাঁচটি ভ্রান্ত ধারণা
যাদের ওজন বেশি বা ধূমপান করেন, তাদের বড়ি খাওয়া উচিত নয়
যারা অনেক ধূমপান করেন, তাদেরক্ষেত্রে সাধারণ বড়ি কাজ নাও করতে পারে৷ কারণ বেশিমাত্রায় ধূমপান সাধারণ বড়ির কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়৷ তবে তাদের জন্য উচ্চমাত্রার বড়ি রয়েছে যা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা যেতে পারে৷
-
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে পাঁচটি ভ্রান্ত ধারণা
ইসি বড়ি আর গর্ভপাত বড়ি একই জিনিস
‘এমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপশন’ বা ইসি বড়ি গর্ভপাত বড়ি নয়৷ এটি গর্ভধারণ প্রতিরোধ করে এবং অরক্ষিত যৌনমিলনের পাঁচদিন পর অবধি গ্রহণ করা যায়৷ আর একজন নারী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর যদি ইসি বড় গ্রহণ করেন, তবে তা কোনো ফল বয়ে আনবে না৷
এরপরেও একাধিক ঘটনা সামনে এসেছে, কিন্তু গর্ভপাত আয়ারল্যান্ডে বেআইনিই রয়ে গিয়েছে৷ অথচ অনেকক্ষেত্রেই মহিলারা গর্ভপাতের অধিকার চেয়ে আসছেন – ধর্ষণের ফলে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ, গর্ভে থাকা শিশুর জন্মের পর মৃত্যুর আশঙ্কা ইত্যাদি৷ এই আইন কার্যকর করতে সরকারও যথেষ্ট সক্রিয়৷ সম্প্রতি এক মহিলা গর্ভপাতের লক্ষ্যে অন্য দেশে আশ্রয় প্রার্থনার চেষ্টা করেছিলেন৷ কিন্তু তাঁকে যেতে দেওয়া হয়নি৷ অনেকক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে অমানবিক পদক্ষেপও দেখা গিয়েছে৷ গর্ভের প্রাণকে হত্যা করা যাবে না, এই যুক্তিতে ২০১৪ সালে মস্তিষ্কের মৃত্যুর পরও এক মহিলাকে কৃত্তিম উপায়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল৷ সে সময় তিনি ১৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন৷ গর্ভস্থ শিশুর বাঁচার উপায় ছিল না৷ তবু মৃত মায়ের শিশুরও বেআইনিভাবে মৃত্যু হবে – এই আশঙ্কায় চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন৷
প্রয়োজন আইনের
আয়ারল্যান্ড এখন গর্ভপাতের পক্ষে ও বিপক্ষে দুই শিবিরে বিভক্ত৷ হ্যাঁ-পন্থিরা অষ্টম সংশোধনী বাতিলের দাবি তুলেছেন৷ আয়ারল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাইমন হ্যারিস এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখা করে বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন ন'জন আইরিশ মহিলা যুক্তরাষ্ট্রে যান ভ্রূণের পরিসমাপ্তি ঘটাতে৷ অন্যদিকে কমপক্ষে তিনজন আইরিশ মহিলা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই বড়ি খেয়ে গর্ভের ভ্রূণকে নষ্ট করার চেষ্টা করেন৷ এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে আইনি রূপরেখা থাকা দরকার৷’’
হ্যারিস ও তাঁর সহযোগীরা অষ্টম সংশোধনী বাতিল করে বিষয়টা পার্লামেন্টের হাতে ছেড়ে দিতে চান৷ অর্থাৎ পার্লামেন্টই ঠিক করবে গর্ভপাতের ক্ষেত্রে কী আইন হওয়া উচিত৷
গর্ভপাত বিরোধী গোষ্ঠীর আইনজীবী ক্যারোলিন সিমন্স বলেন, ‘‘অষ্টম সংশোধনী একজন চিকিৎসককে গর্ভস্থ শিশুর প্রাণ কাড়তে বাধা দেয়, এবং এই কারণেই আমরা এর পক্ষে ভোট দিয়েছি৷’’ তাঁর মতে, গর্ভস্থ শিশু থাকার জন্য মায়ের শারীরিক সমস্যা হচ্ছে বা জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে, এমন প্রমাণ নেই৷ গর্ভপাতের ফলে সরাসরি ও পরিকল্পনামাফিক ভাবে একটি শিশুকে হত্যা করা হয়৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
জার্মান নারী আন্দোলনের ‘কোকিল’
লুইজে অটো-পিটার্স (১৮১৯-১৮৯৫) ছিলেন জার্মানিতে নারী আন্দোলনের একজন পথিকৃৎ ও ‘সাধারণ জার্মান নারী সমিতি’-র যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা (১৮৬৫)৷ লেখিকা হিসেবে তাঁর ডাকনাম ছিল ‘গানের পাখি৷’
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
হেলেনে লাঙ্গে
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ অবধি জার্মানিতে মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়াশুনার বিশেষ চল ছিল না৷ ১৮৯০-এর দশকে মেয়েদের স্কুল শিক্ষার দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়, তার পুরোভাগে ছিলেন শিক্ষক ও নারীবাদী হেলেনে লাঙ্গে (১৯৪৮-১৯৩০)৷ মহিলাদের ভোটাধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন তিনি৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
প্রোলেতারীয় নারী আন্দোলনের জননী
শ্রমিক সংগঠনে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব, মহিলাদের ভোটাধিকার ও গর্ভপাতের অধিকারের দাবিতে সক্রিয় ও সোচ্চার ছিলেন ক্লারা সেটকিন (১৮৫৭-১৯৩৩)৷ ক্লারা সেটকিন সে আমলেই জার্মান দায়রা আইনের ২১৮ নং ধারাটির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন৷ গর্ভপাতবিরোধী এই ধারাটির বিরুদ্ধে গত শতাব্দীর সত্তরের দশকেও জার্মানিতে তুলকালাম হয়ে গেছে৷ আন্তর্জাতিক নারী দিবস প্রতিষ্ঠাতেও ক্লারা সেটকিনের অবদান ছিল৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
আনিটা আউগ্সপুর্গ
আনিটা আউগ্সপুর্গ (বাঁয়ে) ও তাঁর সঙ্গিসাথীরা সামাজিক রীতিনীতির পরোয়া করতেন না৷ আউগ্সপুর্গ তাঁর বান্ধবীর সঙ্গে থাকতেন৷ দু’জনেই মাথার চুল ছোট করে কাটতেন ও পুরুষালি পোশাক পরতেন৷ আইনজীবী হিসেবে তিনি জার্মানিতে মহিলাদের ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছেন (যে অধিকার শেষমেষ ১৯১৮ সালে আদায় হয়)৷ যৌনকর্মীদের অধিকারের জন্যও তিনি সক্রিয় ছিলেন৷ তাঁর সমিতি একাধিক আন্তর্জাতিক মহিলা সংগঠন সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট ছিল৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
নাৎসি আমল
নাৎসিরা ছিল নারীমুক্তিবিরোধী৷ তাদের চোখে নারী অধিকার গোষ্ঠীগুলি ছিল ইহুদি অথবা কমিউনিস্টদের সৃষ্ট৷ নাৎসিদের মতে নারীর ভূমিকা হলো ঘরণী তথা জননীর৷ অপরদিকে পুরুষরা যখন রণাঙ্গণে, তখন এই মহিলাদেরই কলকারখানায় গোলাবারুদ উৎপাদনের কাজে হাত লাগাতে হয়েছে জার্মানিতে৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর
১৯৪৫ সালে জার্মানির অধিকাংশ বড় বড় শহর তখন বিধ্বস্ত৷ সেই ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নতুন করে দেশ গড়ে তোলার কাজে বিশেষ ভূমিকা রাখেন জার্মানি মহিলারা৷ অপরদিকে নারী অধিকার আন্দোলনগুলিও যেন কিংবদন্তির ফিনিক্স পাখির মতো সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে মাথা তোলে৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
গর্ভনিরোধ
১৯৬১ সালে জার্মানিতে গর্ভনিরোধক পিল বা বড়ির চল হয়৷ গোড়ায় শুধু বিবাহিত মহিলাদের এই পিল ব্যবহার করার অনুমতি ছিল; ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশনে লেখা থাকতো, মহিলাদের মাসিকের বেদনা উপশমের জন্য এই পিল দেওয়া হচ্ছে৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
আটষট্টির ছাত্র আন্দোলন
১৯৬৮ সালে গোটা পশ্চিম জার্মানি জুড়ে যে ছাত্র আন্দোলনের অবতারণা ঘটে, তার লক্ষ্য ছিল কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার – এবং সেই সঙ্গে যৌন স্বাধীনতাও বটে৷ কিন্তু গোটা ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব পুরুষ অধ্যুষিত হওয়ায় মহিলারা নারীমুক্তির জন্য পৃথকভাবে পথে নামেন৷ ছবিতে প্রদর্শিত নিশানটিতে লেখা রয়েছে: নারীমুক্তি = শ্রেণীসংগ্রাম৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
গর্ভপাত
২১৮ নং অনুচ্ছেদের দরুণ সত্তরের দশকেও জার্মানিতে গর্ভপাত দায়রা অপরাধ বলে গণ্য হতো৷ ১৯৭১ সালে জার্মানির ‘স্ট্যার্ন’ পত্রিকা ৩৭৪ জন মহিলার নাম ছাপে, যারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে, তাঁরা গর্ভপাত করিয়েছেন৷ তারপর থেকে সংশ্লিষ্ট আইনটি একাধিকবার সংশোধন করা হয়েছে ও বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে ও শর্তে গর্ভপাত বৈধ করা হয়েছে৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
অ্যালিস শোয়ার্ৎজার
জার্মানিতে নারীবাদী আন্দোলনের পথিকৃত অ্যালিস শোয়ার্ৎজার জার্মানির প্রথম নারীবাদী পত্রিকা ‘এমা’ প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৭ সালে৷ মহিলাদের জন্য সৃষ্ট পত্রিকাটিতে ফ্যাশন ও গ্ল্যামারের চেয়ে রাজনীতির উপরই বেশি জোর দেওয়া হতো৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
কর্মের স্বাধীনতা
ভাবলেও আশ্চর্য হতে হয়, ১৯৭৭ সাল অবধি জার্মানিতে মহিলারা স্বামীর অনুমতি না নিয়ে চাকুরি করতে পারতেন না৷
-
জার্মানিতে নারী আন্দোলন: এক সুদীর্ঘ ইতিহাস
পথ যদি না শেষ হয়
শুধু জার্মানিতেই নয়, সারা বিশ্বে নারী আন্দোলন বহু লক্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বটে, কিন্তু এখনও অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে৷ জার্মানির সংসদ বা বড় বড় শিল্পসংস্থাগুলিতে আগের মতোই পুরুষদের আধিপত্য৷ জার্মানিতে আজও অনেক ক্ষেত্রে মহিলাকর্মীরা পুরুষ সহকর্মীদের মতো একই কাজ করে কম বেতন পান৷ আর যৌন হয়রানি তো আছেই৷ কাজেই প্রত্যেক নারী দিবসের উপজীব্য হওয়া উচিত – আগের নারী দিবসের দিকে অগ্রণী হও৷
বিদেশের প্রভাব?
আয়ারল্যান্ডের এই বিতর্ক নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের৷ বাইরে থেকে অর্থসাহায্য মিলছে, হ্যাঁ ও না পন্থিরা পরস্পরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছে৷ একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী মার্কিন সংস্থার সাহায্য নিয়ে সেই ভোটারদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে, যাঁরা এখন দোলাচলে রয়েছেন৷ তাদের লক্ষ্য ছিল, এই ভোটারদের কাছে পৌঁছে তাঁদের ভোটদানে বিরত থাকায় প্রভাবিত করা৷
কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের বিতর্ক সামনে আসায় সব অনলাইন সংস্থাই এবার সতর্ক৷ ভোটারদের যাতে প্রভাবিত করা সম্ভব না হয়, সে জন্য ফেসবুক আইরিশ গণভোট সংক্রান্ত সব প্রচার তাদের ওয়েবসাইটে বন্ধ করে দিয়েছিল৷ ইউটিউবেও প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা মূলত না পন্থিরা ব্যবহার করছিল৷
গুগলের এই সিদ্ধান্তে অখুশি না-শিবির গণভোটে কারচুপি করার অভিযোগ তুলেছে অনলাইন সংস্থাটির বিরুদ্ধে৷ গর্ভপাতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে এই গুগলই তাদের বড় ভরসা ছিল৷ সেই পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভোটের ফল প্রভাবিত হবে বলে মনে করছে তারা৷
ভবিষ্যতের আইন নিয়ে সংশয়
গণভোটের পর কী হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে আয়ারল্যান্ডে৷ সরকার একটি খসড়া বিল প্রকাশ করেছে, যাতে বলা হয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হবে৷ কিন্তু লেও ভারাদকরের সরকারের পার্লামেন্টে এক-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন রয়েছে৷ পার্লামেন্টে বিল এলে ক্ষমতাসীন দল সব সদস্যকে মুক্ত মনে ভোট দিতে বলেছে৷ দ্বিতীয় শক্তিশালী গোষ্ঠী ফিয়ানা ফেল-ও একই অবস্থান নিয়েছে৷
শুক্রবারের গণভোটে আয়ারল্যান্ডের নারী অধিকারের একটি দিগন্ত খুলে যেতে পারে৷ আবার পাশ্চাত্যের একটি রক্ষণশীল শাসনের হাত মজবুত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে৷ গর্ভপাত নিয়ে ভবিষ্যত কী হতে চলেছে, তার গতি ঠিক করে দেবে গণভোটের ফলাফলই৷
গভন রেলি/পিএস
-
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
কোরানে উল্লেখ নেই, তবে...
কোরান শরিফে স্পষ্টভাবে গর্ভপাতের বিষয়ে কিছু বলা নেই৷ তবে কিছু নির্দেশনা আছে যেগুলো গর্ভপাতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে বলে ইসলামি বিষয়ে পণ্ডিতরা মনে করেন৷
-
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
ভ্রুণই জীবন
সূরা আল-মায়দাহের ৩০তম আয়াতে বলা হয়েছে, ‘‘যে বা যারা একটি আত্মার জীবনকে হত্যা থেকে বিরত থেকেছে, সে বা তারা যেন সব মানুষের জীবনকে হত্যা থেকে বিরত থেকেছে৷ যে বা যারা একটি আত্মাকে হত্যা করেছে, সে বা তারা যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করেছে৷’’ আর অধিকাংশ মুসলিম পণ্ডিত মনে করেন, গর্ভে থাকা ভ্রুণকেই ইসলাম জীবন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷
-
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
মায়ের জীবন রক্ষা
যদি মায়ের প্রাণ হুমকির মুখে থাকে তাহলে গর্ভপাত সমর্থন করে ইসলাম৷ মুসলিম আইন ‘দু’টি মন্দ জিনিসের মধ্যে যেটি কম মন্দ তাকে’ বেছে নেয়ার প্রতি সমর্থন জানায়৷ এক্ষেত্রে গর্ভপাতকেই ‘কম মন্দ’ মনে করা হয়৷ এর পক্ষে কয়েকটি যুক্তি হচ্ছে মা-ই ভ্রুণের ‘জন্মদাতা’, মায়ের জীবন আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত, মায়ের অন্যান্য দায়িত্ব আছে, মা একটি পরিবারের অংশ এবং মাকে মরতে দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভ্রুণও মরে যায়৷
-
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
দারিদ্র্যতার ভয়ে গর্ভপাত
কেউ যদি মনে করেন আগত শিশুকে লালনপালন করা তার পক্ষে হয়ত সম্ভব হবে না এবং সেই ভয়ে ভ্রুণকে মেরে ফেলেন, তাহলে সেটি মহাপাপ বলে বিবেচিত হবে৷ সুরা আর ইসরার ৩২ আয়াত বলছে, ‘‘তোমরা তোমাদের সন্তানকে দারিদ্রতার ভয়ে হত্যা করো না৷ আমরা তোমাকে এবং তোমার সন্তানকে দেখেশুনে রাখি৷ তাই তাদের হত্যা করে সত্যিকার অর্থেই একটি মহাপাপ৷’’
-
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
ত্রুটি ধরা পড়লে
গর্ভধারণের চার মাসের মধ্যে যদি নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভ্রুণ ত্রুটি নিয়ে বাড়ছে এবং এর সমাধান সম্ভব নয়, এবং এই সমস্যা পরবর্তীতে শিশুর জীবন দুর্বিসহ করে তুলতে পারে, তাহলে সেক্ষেত্রে গর্ভপাত সমর্থন করেন অনেক পণ্ডিত৷ এক্ষেত্রে অন্তত দু’জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে৷ অবশ্য এক্ষেত্রেও গর্ভপাতের পক্ষে নন এমন পণ্ডিতও আছেন৷
-
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
চার মাস পর...
গর্ভধারণের সময় ১২০ দিন পেরিয়ে গেলে গর্ভপাত সমর্থন না করার পক্ষে মোটামুটি পণ্ডিতদের মধ্যে মিল রয়েছে৷ তবে এক্ষেত্রে যদি ভ্রুণের ত্রুটি মায়ের জীবন হুমকির মুখে ফেলে দেয় তাহলে অন্য কথা৷
-
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
মুসলিম দেশের জরিপে বাংলাদেশ শীর্ষে
২০১৩ সালে প্রকাশিত পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশের প্রায় ১৮ শতাংশ মুসলিম নাগরিক নৈতিক বিবেচনায় গর্ভপাত সমর্থন করেন৷ অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন বাংলাদেশি মুসলমানের মধ্যে একজন গর্ভপাতের পক্ষে৷ ৩৭টি দেশের মসুলমানদের উপর পরিচালিত এই জরিপে বাংলাদেশেই গর্ভপাতের পক্ষে সবচেয়ে বেশি মানুষ পাওয়া গেছে৷ আরও জানতে উপরের ‘+’ চিহ্নে ক্লিক করুন৷
-
ইসলাম ধর্মে গর্ভপাত আলোচনা, গবেষণার তথ্য
ভ্রুণ কি ব্যথা পায়?
২০০৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্রুণের বিকাশের প্রাথমিক পর্যায়ে তার মধ্যে ব্যথা, এমনকি তার আশেপাশে কী ঘটছে, তা বোঝার মতো নার্ভাস সিস্টেম গড়ে ওঠে না৷ আরেক গবেষণা বলছে, ব্যথা পাওয়ার জন্য যে ‘নিউরো-অ্যানাটোমিকাল অ্যাপারেটাস’ প্রয়োজন তা গড়ে ওঠার কাজ গর্ভধারণের ২৬ সপ্তাহ আগে সম্পূর্ণ হয় না৷ অবশ্য এই বিষয়ে বিতর্ক এখনও থেমে নেই৷ দু’টি গবেষণা সম্পর্কে আরও জানতে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
লেখক: জাহিদুল হক