গণআন্দোলনে ভূমিকা রাখা কার্টুনের প্রদর্শনী
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন পর্যন্ত মানুষকে প্রভাবিত করেছে ও হাস্যরস জুগিয়েছে বিভিন্ন কার্টুন৷ সেগুলো নিয়ে ঢাকায় চলছে ‘কার্টুনে বিদ্রোহ’ শীর্ষক প্রদর্শনী৷ চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত৷
৮২ কার্টুনিস্ট, ১৭৫টি কার্টুন
কার্টুনে সরস ভঙ্গিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন নবীন-প্রবীণ কার্টুনিস্টরা৷ সরকার পতনের ঐক্য গঠনে এই কার্টুনের ভূমিকা কম নয়৷ ৮২ জন কার্টুনিস্টের এমন ১৭৫টি কার্টুন নিয়ে ১৬ আগস্ট থেকে ঢাকায় শুরু হয়েছে ‘কার্টুনে বিদ্রোহ’ শীর্ষক এক প্রদর্শনী৷ বাংলাদেশ কার্টুনিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, দৃক এবং ডিজিটাল মাধ্যম ‘ই-আরকি’ যৌথভাবে এর আয়োজন করেছে৷
দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়
প্রদর্শনীর সমন্বয়ক ফৌজিয়া আফরোজ ডয়চে ভেলেকে জানান, ২০ আগস্ট পর্যন্ত প্রদর্শনীর প্রথম পাঁচদিনে প্রায় ১০ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এখানে তাদের সামনে ফিরে এসেছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের উত্তাল সময়৷ এটি তারা এক ধরনের উদযাপন হিসেবে নিয়েছেন৷’’
শিশু-কিশোরদের আনন্দ
কার্টুনে রাজনৈতিক অসঙ্গতির সঙ্গে রয়েছে হাস্যরস৷ বেশিরভাগ কার্টুনে কিছু লেখা নেই, কিন্তু সেসব বিদ্রূপ বোঝা যায় অনায়াসে! বড়দের পাশাপাশি সোনামনিদের কাছে এগুলো উপভোগ্য লাগছে৷ অভিভাবকদের হাত ধরে প্রদর্শনীতে এসেছে বেশ কিছু শিশু-কিশোর৷
কলকাতার কার্টুনিস্টের স্কেচ
কার্টুনিস্ট আহসান হাবিব, মেহেদী হক, মানিক-রতন, মোরশেদ মিশু, সৈয়দ রাশেদ ইমাম তন্ময়, রিশাম শাহাব তীর্থ, মাহতাব রশিদ, আরাফাত করিম, মেহরাব সিদ্দিক সাবিত, আনিসুল ইসলাম সামির, দেবাশীষ চক্রবর্তী, অদ্রিতা জামান, নাতাশা জাহানসহ ঢাকার কার্টুনিস্টদের পাশাপাশি প্রদর্শনীতে রয়েছে কলকাতার কৌশিক সরকারের আঁকা স্কেচ৷ এতে ফুটে উঠেছে গুলিতে নিহত হওয়ার আগে রংপুরের আবু সাঈদের প্রতিবাদের মুহূর্ত৷
মুগ্ধ, পানি লাগবে... পানি
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-র প্রয়াত শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর প্রতি সম্মান জানিয়েছেন আয়োজকরা৷ গ্যালারির একপাশে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে ‘মুগ্ধ, ‘পানি লাগবে... পানি?’ লেখা ১৭টি পানির বোতল৷ গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর আগে পানির বোতল হাতে রাজপথে ছিলেন তিনি৷
দড়ি ধরে মারো টান!
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিক্যাচার করা তিনটি কাট-আউট রাখা হয়েছে গ্যালারিতে৷ এরমধ্যে একটিতে লেখা ‘স্টেপ ডাউন হাসিনা’৷ হাসিনার এই কাট-আউটে কয়েকটি দড়ি বাঁধা৷ অনেকে দড়ি টান দেওয়ার ভঙ্গিতে ছবি তুলেছেন৷
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী
দর্শনার্থী জাহিন ফেরদৌস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রায় এক মাস কঠিন সময় পাড়ি দিতে হয়েছে আমাদের৷ এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কার্টুন প্রদর্শনী উদযাপন করছি৷ এখানে এসে মনে হচ্ছে, আমাদের সবারই চাওয়া ছিল এক৷ দুঃশাসনের অবসান হওয়ার আনন্দ উপভোগের ঐক্য দেখে খুব ভালো লাগছে৷’’
দর্শনার্থীদের মনোভাব প্রকাশ
প্রদর্শনীতে আসা দর্শনার্থীরা যেন নিজেদের মনোভাব প্রকাশ করতে পারেন সেজন্য রয়েছে কমেন্ট বুক৷ শেখ হাসিনার সরকার পতন ও তার দেশত্যাগ নিয়ে ব্যাঙ্গাত্মক কথা লিখেছেন অনেকে৷ কেউ কেউ আন্দোলনের বিভিন্ন স্লোগান তুলে ধরেছেন কমেন্টে৷
সংহতি দেয়াল
গ্যালারির দুই পাশে দুটি সংহতি দেয়ালিকা রাখা আছে৷ ছাত্র-জনতার আন্দোলন, জেন-জির জয়গান ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং সাবেক সরকারের সমালোচনা করে মনের আনন্দে দেয়াল দুটি ভরে ফেলেছেন দর্শনার্থীরা৷
‘কার্টুনিস্টদের প্রতি এক ধরনের সম্মান এই প্রদর্শনী’
দৃক গ্যালারির কিউরেটর এ এস এম রেজাউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কার্টুন সবসময়ই জনপ্রিয় মাধ্যম৷ দুঃখজনক হলেও সত্যি, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন চাপ ও সেন্সরশিপ থাকায় কার্টুনিস্টরা আঁকা কমিয়ে দিয়েছিলেন৷ তবে গণ-আন্দোলনে তরুণ কার্টুনিস্টরা ভয় ভেঙে প্রচুর এঁকেছেন৷ তাদের প্রতি এই প্রদর্শনী এক ধরনের সম্মান বলা যায়৷ দর্শকদের সঙ্গে কার্টুনিস্টদের সম্মিলন ঘটানো এই প্রদর্শনীর বড় সফলতা৷’’
প্রদর্শনীর সময় বাড়লো
ঢাকার পান্থপথে দৃকপাঠ ভবনের লেভেল-৮-এ দৃক গ্যালারিতে ১৬ আগস্ট ‘কার্টুনে বিদ্রোহ’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়৷ ২৩ আগস্ট এর সমাপনী হওয়ার কথা থাকলেও দর্শকদের অনুরোধে সময়সীমা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷ প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেখা যাবে কার্টুন প্রদর্শনী৷
রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ নয়!
গ্যালারিতে ঢোকার প্রবেশপথের পাশে অস্থায়ী বুটিক শপে জুলাই গণঅভুত্থানের চিত্রকর্ম সংবলিত পোস্টার বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়৷ ধোয়া ওঠা চায়ের কাপের সঙ্গে ‘রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ নয়’ লেখা টি-শার্ট ৪৫০ টাকা, টোট ব্যাগ ৩৫০ টাকা ও নোটবুক ৩৫০ টাকা৷ এই তিনটি পণ্য একসঙ্গে কিনলে পড়বে ৭৯৯ টাকা৷