1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌খুলছে কলকাতার বইপাড়া

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৫ মে ২০২০

টানা দু'‌মাসের লক ডাউনের পর, সোমবার থেকে আবার খুলল কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া। যদিও দীর্ঘ কর্মবিরতির কারণে প্রকাশক, মুদ্রক, কারিগর, সবারই আর্থিক ক্ষতির মাত্রা বাড়িয়ে তুলেছে ঘূর্নিঝড় আমফান।

https://p.dw.com/p/3cjIT
Indien Sturm Amphan Markt Straße vor der  Überschwemmung
ছবি: DW/S. Bandopadhyay

সোমবার, ২৫ মে থেকে খুলে গেল কলকাতার বইপাড়া। সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের বিক্রিতে যা এশিয়ার বৃহত্তম এবং বইয়ের সামগ্রিক কেনাবেচার হিসাবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বই বাজার। সোমবার পশ্চিমবঙ্গে ঈদের ছুটি বলে কার্যত মঙ্গলবার থেকে আবার সক্রিয় হবে বইপাড়া। শুরু হবে গত দু'‌মাস ধরে বন্ধ থাকা প্রকাশনার কাজ। কিন্তু বইয়ের ক্রেতারা কি এসে পৌঁছতে পারবেন?‌ অনেক কর্মীও হয়ত আসতে পারবেন না, যেহেতু লোকাল ট্রেন এখনও বন্ধ। বাস–ট্রাম, ইত্যাদি গণ পরিবহণও খুব কম সংখ্যায় রাস্তায় বেরোচ্ছে। তা হলে লক ডাউন পুরোপুরি উঠে যাওয়ার আগেই কেন কলেজ স্ট্রিট খুলে দেওয়া হল?‌

চিরঞ্জিৎ দাস

বাংলা প্রকাশনা ব্যবসার অন্যতম নবীন শরিক ‘‌অরণ্যমন'‌–এর কর্ণধার চিরঞ্জিৎ দাস জানাচ্ছেন, খোলার একটা কারণ হচ্ছে, এখনও অনেক বইয়ের দোকানের লোক আসতে পারেনি। তারা যাতে অ্যাট লিস্ট আসতে পারে, সেই কারণেই খোলা হচ্ছে। ঝড়–বৃষ্টি এবং বইপাড়ায় জল জমে যাওয়ার পর, অনেকেরই বন্ধ দোকানে জলে–ভেজা বই পড়ে আছে। ‘‌‘‌এখনও বহু দোকানদার আসতে পারেনি। বা আসার ভরসা পাচ্ছে না।'‌'‌ বললেন চিরঞ্জিৎ। যদিও তিনি সময়মত ব্যবস্থা নিতে পেরেছিলেন। জানালেন, ‘‌‘‌আমাদের একটা বইও ড্যামেজ হয়নি। ওই লক ডাউনের মধ্যেই গিয়ে বই ওপরের দিকে তুলে দিয়েছিলাম। ফলে দোকানে জল ঢুকেছে, কিন্তু নষ্ট হয়নি। অনেকে (‌সেটা)‌ করতে পারেনি, আসতে পারেনি। আর এতটা (‌ঝড়জল)‌ হবে, সেটাও বুঝতে পারেনি। আমাদের পাশের একটা বইয়ের দোকানের চাল উড়ে গিয়েছিল। এবার চাল উড়ে যাওয়া মানে, যতই গুছিয়ে রাখুক, কিছু করার নেই। ওপর দিয়ে ফুল ফোর্সে জল ঢুকেছে।'‌'‌

ফলে দীর্ঘ দু মাস লক ডাউনের কারণে মৃতপ্রায় বইপাড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা মেরেছে ঘূর্নিঝড় আমফান। ঝড়ের তাণ্ডব থামার পর বইপাড়ার রাস্তায় জমে থাকা জলে রাশি রাশি বইয়ের পাতা ভেসে বেড়ানোর ছবি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। মানুষ উদ্বিগ্ন হয়েছেন এবং বই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত বেরোজগার কারিগরদের এবং ছোট প্রকাশকদের ক্ষতিপূরণ দিতে অর্থ সংগ্রহের একাধিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে তার পর। একমাত্র বাকি ছিল পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড। দু'‌দিন দেরিতে হলেও, সক্রিয় হয়েছে তারাও।

সুধাংশু শেখর দে

গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক এবং পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকাশনা সংস্থা দে'‌জ পাবলিশিংয়ের কর্ণধার সুধাংশু শেখর দে জানালেন, ‘‌‘‌গিল্ডের (‌থেকে)‌ করতে গেলে তো আমাদের সব্বাইকে ধরে করতে হয়। সবাইকে ধরে, জানিয়ে–বুঝিয়ে ব্যাপারটা করতে হবে। কালকেই ব্যাপারটা মাথায় এল, যে এটা করা উচিত গিল্ডের থেকে। তা হলে গিল্ডের থেকেও একটা ফান্ড দেওয়া যাবে মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে, যে রকম ১০ লাখ টাকা আমরা দিয়েছিলাম, এই করোনা আসার সময়। সে রকম এই ফান্ডেরও কিছু আমরা বের করব, প্লাস বাইরে থেকে যেটা ডোনেশন আসবে সেটা নিয়ে, পরবর্তী সময়ে যাদের যাদের যেরকম ক্ষতি হয়েছে— বিশেষ করে এই স্টল হোল্ডাররা, যারা বই কেনে–বেচে, তাদেরই ক্ষতিটা বেশি দেখছি। প্রকাশক যারা, যাদের গোডাউনে বই (‌থাকে)‌, তাদের ক্ষতি আরও বেশি। মানে যাদের দোতলা, তিন তলায় অফিস, বা বাড়ি, তাদের বেশি ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বাইন্ডিংখানার ক্ষতি হয়েছে, প্রেসের ক্ষতি হয়েছে।'‌'‌

কাজেই বইপাড়াকে ফের সচল করার পাশাপাশি লক ডাউন এবং ঘূর্নিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের কাজও চলছে সমান তালে। খারাপ সময় কাটিয়ে কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া কত তাড়াতাড়ি আবার ছন্দে ফিরতে পারে, সেটাই এখন দেখার।