1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকাই পছন্দ প্রশান্ত কিশোরের

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

তিনি যে দলের জন্য কাজ করেন, সেই দল সরকার গড়লে হস্তক্ষেপ করতে চান৷‌ আর শাসক দল হলে শুরু থেকেই নাক গলান প্রশাসনে৷ এই নিয়েই সম্পর্কের অবনতি হয়েছে নরেন্দ্র মোদী, রাহুল গান্ধী ও নীতিশ কুমারের সঙ্গে৷

https://p.dw.com/p/3Y0Qt
ছবি: Imago Images/Hindustan Times

 এখন সরসারি রাজনীতিতে আসার প্রহর গুনছেন প্রশান্ত কিশোর৷

বছর সাতেক হলো ভারতীয় রাজনীতিতে জয় নিশ্চিত করতে এক নতুন নামের উদয় হয়েছে৷ লোকমুখে ‘‌ম্যাজিশিয়ান’ হয়ে উঠেছেন৷ তিনি রাজনৈতিক কৌশলী প্রশান্ত কিশোর৷ নরেন্দ্র মোদী, নীতিশ কুমার, অমরিন্দর সিং এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালদের জয়ের পেছনে প্রশান্ত কিশোরের নেপথ্য ভূমিকা ভারতে বহুচর্চিত৷ এখন কাজ করছেন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তামিলনাড়ুর ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিনের হয়ে৷ এঁরা প্রত্যেকেই মোটা টাকার বিনিময়ে পিকে-‌র কেম্পানি ‘‌আইপ্যাক’-‌এর সাহায্য নিয়েছেন৷

সদ্য তিনি ‘‌বিনা পয়সায়’ সহযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেন বিহারের সিপিআই যুব নেতা কানহাইয়া কুমারের দিকে৷ পিকে-‌র সংস্থা ‘‌আইপ্যাক’-‌এর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার৷ বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, তিনি যে দলের হয়ে কাজ করেন সেই দল ক্ষমতায় ফিরলে অনেক সময় পেশাদারিত্বের সীমা লঙ্ঘন করে রাজনীতির আঙিনায় ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন পিকে৷ ‘‌বাড়তি ক্ষমতা’ পেতে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন বলেও অভিযোগ উঠেছে৷ অদূর ভবিষ্যতে তিনি তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন বলেও জল্পনা রয়েছে৷

আগামী দুই-‌তিন মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার কয়েকটি আসনে নির্বাচন হবে৷ সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পিকে-‌কে রাজ্যসভায় পাঠালে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ এতসবের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, পেশাদার রাজনৈতিক কৌশুলী প্রশান্ত কিশোরকে ‘‌জেড ক্যাটাগরি’ নিরাপত্তা দিতে চলেছে সরকার, যা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে৷

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের কিছু আগে নরেন্দ্র মোদীকে নানা কৌশল জুগিয়েছেন৷ মোদীর ইমেজ বিল্ডিংয়ে সফলও হয়েছেন৷ সেই সূত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির সঙ্গে সুসম্পর্কের সুবাদে পরের বছর ২০১৫ সালে বিহার বিধানসভা জনতা দল (‌ইউনাইটেড)‌ প্রধান নীতিশ কুমারের হয়ে কাজ করে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসিয়েছেন৷ পরে নীতিশের দলে উচ্চপদে বসেছেন৷ গতমাসে সেই পদ কেড়ে নিয়ে তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে৷ এর জন্য অবশ্য সরকারি কাজে তার অত্যধিক হস্তক্ষেপকে দায়ী করেন অনেকে৷

‘ক্ষমতাবানদের সঙ্গে মেলামেশা করতে করতে উনি নিজেও ক্ষমতার স্বাদ পেতে চান বোধহয়’

‌ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বললেন, ‘‌‌‘‌ভারতের মতো দেশে, যেখানে বেশিরভাগ ভোটার অর্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত সেখানে যে কোনো নির্বাচনে বাজার কেন্দ্রিক প্রচার, প্রসার ও বিপননের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে৷ সেক্ষেত্রে প্রশান্ত কিশোরের মতো কৌশুলীরা গুরুত্ব পাচ্ছেন৷ কিন্তু পরবর্তী কালে প্রশান্ত কিশোর তাঁর সীমা লঙ্ঘন করতে চান৷ সরকারের কাজ-কর্মে হস্তক্ষেপ করতে চান৷ আসলে ক্ষমতাবানদের সঙ্গে মেলামেশা করতে করতে উনি নিজেও ক্ষমতার স্বাদ পেতে চান বোধহয়৷ গন্ডগোলটা সেখানেই৷’’ তা পর্যবেক্ষণ, এখনো পর্যন্ত এগিয়ে থাকা দলগুলির হয়ে কাজ করে বেশি সাফল্য পেয়েছেন তিনি৷ উত্তর প্রদেশে পিছিয়ে থাকা দল কংগ্রেসের হয়ে কাজ করতে শুরু করলেও মাঝপথে ছেড়ে দিয়েছেন৷

অন্যদিকে, চলতি বছরের শেষে বিহার বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের দুশ্চিন্তা বাড়াতে চলেছেন পিকে৷ পিকে-‌র সঙ্গী হতে পারেন সিপিআই নেতা কানহাইয়া কুমার৷ পিকে-‌র সঙ্গে কানহাইয়ার যোগাযোগ বেশ কিছুদিন আগে থেকেই৷ পেশাদার পিকে-‌র পাওনাগন্ডা নিয়ে সংশয় ছিল কানহাইয়ার৷ সেই সমস্যা মিটেছে৷ এখন পিকে ও কানহাইয়া মূলত বিহারের যুব সম্প্রদায়কে নিজেদের দিকে টানতে চাইছেন৷ পিকে-‌র সঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ও আম আদমি পার্টি প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সখ্য রয়েছে৷ কংগ্রেসকে অনায়াসে সঙ্গে পেতে পারেন তাঁরা৷ কেজরিওয়াল জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত দিল্লির বাইরে রাজনীতি করবেন না তিনি৷ বিহারে বামপন্থি সিপিআই, সিপিএম, সিপিআই (‌এমএল)‌ দলগুলিও সঙ্গে থাকবে৷ আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদ যাদবের পুত্র তেজস্বী যাদব কিছুতেই কানহাইয়া কুমারকে জায়গা ছাড়তে না চাইলেও কংগ্রেস ও বাম দলগুলি একজোট হয়ে এনডিএ-‌র উপর চাপ সৃষ্টি করলে আরজেডি-‌কে নিজেদের সঙ্গে পেতে বাধ্য করা যেতে পারে৷ অতীতে নীতিশ কুমার ও লালুপ্রসাদ যাদবের মধ্যে জোটের অন্যতম কারিগর ছিলেন প্রশান্ত কিশোরই৷