জার্মানিতে প্লান্ট
১৯ এপ্রিল ২০১৩আধুনিক সমাজে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকর বর্জ্য জমা হয়৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে ওষুধপত্র, নানা রকম তরল পদার্থ এবং কীটনাশক৷ এগুলির ঠিকমতো বিনাশ করতে চাই বিশেষ ধরনের প্লান্ট৷ তারই একটি জার্মানির উত্তরাঞ্চলের ‘সাভা'৷
এখানে যা কিছু আসে, প্রথমেই সেগুলো পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ গাবেষণাগারের কর্মী পরীক্ষা করে দেখেন, এখানে যা কিছু আনা হচ্ছে, তার সাথে তালিকার মিল আছে কি না৷ তারপর তিনি পোড়ানোর তাপমাত্রা ঠিক করে দেন৷ এই প্লান্ট চালাতে যে উত্তাপ লাগে, তার পুরোটাই আবর্জনা পুড়িয়ে সৃষ্টি করা হয়৷
বিপজ্জনক বর্জ্যগুলো শুধুমাত্র জার্মানি থেকে নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও আসে৷ বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সব সময় মারাত্মক বর্জ্য দূর করার উপযোগী প্রযুক্তি থাকে না৷ এখানকার বর্জ্যের ৯৯ শতাংশই আসে কল-কারখানা থেকে৷ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে গন্ধক এবং ক্লোরিন থাকে, যেগুলো বাড়িঘরের আবর্জনার সাথে সাধারণ চুল্লিতে পোড়ানো যায়না৷ কারণ সাধারণ চুল্লি সাফাই করা খুবই কঠিন কাজ৷
ল্যাবরেটরি থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর ট্রাক থেকে এখন বর্জ্য নামানো হয়৷ এই গর্তে সব ধরণের আবর্জনা ফেলা হয়৷ গবেষণাগার থেকে ঠিক করে দেওয়া হয় কোন চুল্লিতে কী ফেলা হবে৷ ক্রেনের চালক সেই অনুযায়ী বাছাই করে নেন৷
রাসায়নিক কারখানা থেকে আসা বিপজ্জনক তরল বর্জ্যগুলোকেও এখানে পোড়ানো হয়৷ সেগুলোকে সরাসরি বিশেষ ট্যাঙ্কের মধ্যে পাম্প করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়৷ তাই সেই তরলের পরিবেশের সঙ্গে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না৷
বিষাক্ত বর্জ্যগুলোকে এয়ারটাইট পিপায় করে সাভা-য় আনা হয়৷ একটি লিফট দিয়ে সেগুলোকে সরাসরি চুল্লিতে পাঠানো হয়৷ এখানকার তাপমাত্রা প্রায় ১,১০০ ডিগ্রি৷ কেবলমাত্র এই তাপেই সব বিষাক্ত পদার্থ বিনষ্ট হয়৷
ঘুরে চলা পাইপটিকে একটু বাঁকা করে রাখা হয় – যাতে আবর্জনা শেষ পর্যন্ত চলে যেতে পারে৷ না ঘুরলে এমন উত্তাপে পাইপ আস্তে আস্তে গলে পুড়ে যেতে পারে৷ তাছাড়া এইভাবে ঘোরার ফলে সব অংশেই সমানভাবে তাপ ছড়িয়ে পড়ে৷
পরিবেশের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো বিষাক্ত ধোঁয়া৷ তাই এগুলোকে সাতটি স্তরে পরিষ্কার করা হয়৷ সবশেষে পড়ে থাকে কিছু পদার্থ বা ধাতুর রেশ, যেগুলো আবার রাস্তা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়৷
লম্বা চিমনির মতো পাইপের মধ্যে বিষাক্ত ধুলিকণা জমা করা হয়, যা আলাদা করে আবার নষ্ট করতে হয়৷ যেটুকু নির্গমন ঘটে, তার উপর কড়া নজর রাখে কর্তৃপক্ষ৷ সরাসরি কম্পিউটারের মাধ্যমে তারা সব তথ্য পেয়ে যায়৷ গোটা বিশ্বে অন্য কোনো প্লান্টে এত কম নির্গমন হয় না৷ জাতীয় কর্তৃপক্ষ যে মাত্রা স্থির করে দিয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক হারে ক্ষতিকারক পদার্থ এখান থেকে নির্গত হয়৷
অবশিষ্ট উত্তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে লাগানো হয়৷ বর্জ্যের প্লান্টের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত বিদ্যুৎ অঞ্চলের গ্রিডে পাঠানো হয়৷ পরিচ্ছন্ন পরিবেশের জন্য জার্মানির সেরা প্রযুক্তির উদাহরণ এটা৷
এসবি/ডিজি