1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রুদের কেবিনে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে জলদস্যুরা

১৪ মার্চ ২০২৪

জিম্মিকৃত এমভি আবদুল্লাহ জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলে পৌঁছানোর পর জলদস্যুরা জাহাজের ব্রিজ থেকে ক্রুদের কেবিনে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাজটির একজন নাবিক৷ ভাইয়ের কাছে পাঠানো ভয়েস মেসেজে তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/4dWYc
জলদস্যুর গ্রাফিতি
২০১১ সালে আন্তর্জাতিক অভিযানের মুখে সোমালিয়ার জলদস্যুদের তৎপরতা কমলেও সম্প্রতি তা আবার বেড়েছে ছবি: picture-alliance/dpa

বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টার এমন খবর জানিয়েছে৷ তবে নিরাপত্তার স্বার্থে ঐ নাবিকের নাম, পরিচয় তারা প্রকাশ করেনি৷ ভয়েস মেসেজে নাবিক জানান, তারা সুস্থ থাকলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত৷

বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে নাবিকের ছোট ভাই এই ভয়েস মেসেজ পেয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান৷ নাবিক বলেন, ‘‘গতকাল একটি নেভি জাহাজ এসেছিল৷ আজকেও একটি নেভি জাহাজ এসেছিল৷ মোট দুইটি সুসজ্জিত জাহাজ আমাদের রেসকিউ করতে চেয়েছিল৷''

তবে তা সম্ভব হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওরা (জলদস্যুরা) আমাদের জিম্মি করে রাখে, আমাদের মাথায় বন্দুক ধরে রাখে৷ নেভির বড় বড় ফ্রিগেট দেখেই ওরা আমাদের জিম্মি করে৷ এসব বড় জাহাজ দেখেও ওরা ভয় পায় না৷''

এখন পর্যন্ত জলদস্যুরা কাউকে আঘাত করেনি বলে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেছেন, ‘‘তবে, আমি যেখানে ঘুমাই সেখানে পাশ ফিরলেই দেখতে পাই যে আমার দিকে বড় বড় মেশিনগান তাক করে রেখেছে৷ এই অবস্থায় ঘুম যা হওয়ার হচ্ছে। তারপরও মানসিকভাবে চাপে থাকলেও সুস্থ থাকার চেষ্টা করছি৷''

জাহাজে থাকা খাবার তাদের সঙ্গে জলদস্যুরাও খাচ্ছে এবং এর ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আলহামদুলিল্লাহ, এখনো খাবার আছে৷ কিন্তু, যেহেতু জলদস্যুরাও আমাদের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে, আমাদের পানি ব্যবহার করছে, আমাদের খাবার আর কতদিন যাবে সেটা বলতে পারছি না৷ আর হয়তো ১০-১৫ দিন বড়জোর যেতে পারে৷ এরপর খাবার শেষ হয়ে গেলে আমরা খুব কষ্টে পড়ে যাব৷ পানি শেষ হয়ে গেলে খুব কষ্টে পড়ে যাব৷''

সোমালিয়া উপকূলে পৌঁছানোর পর ক্রু সদস্যদের সঙ্গে জলদস্যুদের ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে জানিয়ে  তিনি বলেন, 'আজকে আমরা সোমালিয়া এলাম৷ ওদের সঙ্গে আমাদের একটু ভালো রিলেশন হয়েছে৷ ওদের বলে কয়ে আমরা একটু কেবিনে এলাম৷ কিন্তু আবার ব্রিজে চলে যেতে হবে৷''

সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষ তাদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে এবং গণমাধ্যম নিয়মিত তাদের খবর প্রকাশ করছে বলে খানিকটা আশ্বস্ত রয়েছেন বলে পরিবারকে জানিয়েছেন তিনি৷ বলেন, 'আমি আশা করি শিগগির পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবো৷ ঈদের আগে যেন পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারি, সেটাই আমরা চাই৷''

সোমালিয়ার উপকূলে নোঙর করেছে জাহাজটি

এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মো. শাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ গারাকাদ বন্দরের কাছে নোঙর করেছে৷ বৈদেশিক একটি শিপিং কোম্পানির সূত্র থেকে তারা এই খবর পেয়েছেন বলে জানান৷

এমভি আবদুল্লাহর মালিকানাধীন সংস্থা কেএসআরএম গ্রুপের গণমাধ্যম বিষয়ক কর্মকর্তা মিজানুল ইসলামও গারাকাদ বন্দরে জাহাজটি নোঙরের কথা ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন৷

তিনি বলেন, ‘‘গতকাল রাত পর্যন্ত আমাদের নাবিকদের সঙ্গে যা কথা হয়েছে, আমরা তাদের কাছ থেকে জেনেছি, তারা নিরাপদ আছেন, সুস্থ আছেন৷ তবে জলদস্যুদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ আমাদের এখনও স্থাপন হয়নি৷ আমরা আশা করছি জলদস্যুরা যেহেতু সেফ জোনে পৌঁছে গেছে, অচিরেই তারা হয়তো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন৷ আমরাও বিভিন্ন থার্ড পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি৷ আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আছে আমাদের যেসব নাবিক জিম্মি অবস্থায় আছেন, তাদের অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের তরফ থেকে যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, আমরা সেগুলো নিয়েছি৷''

লক্ষ্য রাখছে ইইউ নেভাল ফোর্স

এদিকে গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌ সেনা দপ্তর জানিয়েছে তাদের একটি নৌযান এমভি আব্দুল্লাহকে অনুসরণ করছিল৷ বিবৃতিতে তারা বলেছে, ‘আটলান্টা অপারেশনের' অংশ হিসেবে একটি ইউরোপীয় জাহাজকে তারা নিযুক্ত করেছিল৷ মঙ্গলবার জাহজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ে৷ তাতে ২৩ জন ক্রু সদস্য রয়েছেন৷  তারা নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছে ইইউ নেভাল ফোর্স৷

বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, তাদের ‘অপারেশন আটলান্টা' এই ব্যাপারে বাংলাদেশ ও সোমালিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে৷ এছাড়াও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে ভারতের নৌ বাহনীসহ অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গেও আলাপ চলছে বলে জানানো হয়েছে৷

পশ্চিম ভারতীয় মহাসাগর ও লোহিত সাগরে নিরাপত্তা রক্ষায় ইইউ নৌ বাহিনীর অভিযানের নাম অপারেশন আটলান্টা৷

জাতিসংঘের হিসাবে ২০১১ সালে সবচেয়ে বেশি ১৬০টি জাহাজে হানা দেয় সোমালিয়ান জলদস্যুরা৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আন্তর্জাতিক জলসীমানায় উপস্থিতি বৃদ্ধির কারণে এই সংখ্যা কমতে থাকে৷ তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের তৎপরতা আবার বেড়েছে৷ গত ডিসেম্বরে অন্তত দুইটি জাহাজে জলদস্যুদের হানা দেয়ার খবর মিলেছে৷

এফএস/কেএম (দ্য ডেইলি স্টার, এপি)