ক্যালের ‘জঙ্গলে’ অস্তিত্বের সংগ্রাম
ইউরোটানেলের দিকে যাবার রাস্তা আর উদ্বাস্তুদের ‘জঙ্গল মহল’-এর মধ্যে কিছুটা এলাকা খালি করার চেষ্টা করছে পুলিশ৷ উদ্বাস্তুরা তাদের ঝোপড়ি বাঁচানোর চেষ্টা করছেন৷
পুনর্বাসন প্রচেষ্টা
নিরপেক্ষ স্বেচ্ছাসেবীরা ক্যালের ‘জঙ্গল মহলের’ বাসিন্দাদের তাদের ঝোপড়ি সরিয়ে নিতে সাহায্য করছেন, কেননা রিফিউজিদের ক্যাম্পের পাশ দিয়েই চলে গেছে ইউরোটানেল মুখী একটি হাইওয়ে৷ সেই হাইওয়ে আর ক্যাম্পের মধ্যে অন্তত ১০০ মিটার এলাকা ফাঁকা রাখতে চায় পুলিশ৷
২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা
নীচে ক্যাম্প, ওপরে হাইওয়ে৷ হাইওয়ে ধরে ইউরোটানেল অভিমুখে যাওয়া ট্রাকগুলোয় ওঠার চেষ্টা করে ক্যাম্পের অধিবাসীরা, যাদের একমাত্র স্বপ্ন হলো কোনোমতে ব্রিটেনে পৌঁছনো৷ চতুর্দিকে পুলিশ, অনেকে ধরাও পড়ে, তা সত্ত্বেও তারা নাছোড়বান্দা৷ ২১ বছর বয়সি সিরীয় মোহাম্মেদ শাখ বলেন, ‘হয় ট্রাকে করে ইংল্যান্ডে যাব; নয়ত ট্রেনে করে ইংল্যান্ড যাব; নয় বোটে করে ইংল্যান্ড যাব৷’
যে করে হোক
বাফার জোন যে ঠিক কবে তৈরি হবে, তা জানা নেই৷ ইতিমধ্যেই একাধিক নোটিশ পার হয়ে গিয়েছে৷ স্বেচ্ছাসেবীরা যে কোনো উপায়ে ঝোপড়িগুলোকে খুলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন – নয়ত নাকি বুলডোজার দিয়ে সেগুলোকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে!
ঝোপেঝাড়ে
কেয়ারফরক্যালে স্বেচছাসেবক গোষ্ঠীর সদস্যরা ঝোপঝাড়, আবর্জনা, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে মলমূত্র পরিষ্কার করে উদ্বাস্তুদের জন্য নতুন বসতি তৈরি করার চেষ্টা করছেন৷ ফরাসি মহিলা রুথ বলেন, ‘‘আমি যখন আফগানিস্তানে ছিলাম, তখন আমি ওদের কাছ থেকে যতটা আতিথেয়তা পেয়েছি, আজ আমি ঠিক সেইরকম সম্মান ও আতিথেয়তা ফিরিয়ে দিতে চাই৷’’
হাল ছেড়ো না
যে এলাকাটা খালি করা হবে, কিছু কিছু উদ্বাস্তু এখনও সেখানে বাস করছেন৷ নতুন বাফার জোন তৈরি হলে দেড় হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার উদ্বাস্তু উৎখাত হবেন৷ সাইফুল্লা বারাতি গত চার মাস ধরে ক্যালেতে আছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি নড়ছি না৷ পুলিশ যদি বাড়ি ভেঙে দেয় তা দিক৷ আমি তাদের সঙ্গে লড়ব না৷’’
কনটেইনার ক্যাম্প
ফরাসি সরকার আপাতত ক্যালের কাছে একটি ক্যাম্প তৈরি করছেন৷ এই ক্যাম্পে প্রায় দু’হাজার মানুষ থাকতে পারবে৷ কিন্তু বহু উদ্বাস্তুরা বলেছেন যে তারা সেখানে যাবেন না, কেননা সেখানে যেতে হলে কর্তৃপক্ষের কাছে আঙুলের ছাপ দিতে হবে – যার ফলে তাদের ফ্রান্সে থাকতে হবে ও ব্রিটেনে যাবার আশা নাকচ হবে৷
‘দেখা যাক, ফ্রান্স কি করে’
মোহাম্মেদ শাখ তাঁর ঝোপড়ির ভিতর থেকে বলছেন, ‘‘ওরা ভাবছে আমরা বোকা, নতুন ক্যাম্পে থাকার জন্য আমাদের আঙুলের ছাপ দেবো৷ ওটা তো একটা জেলের মতো৷ একবার ঢুকলে আর বেরোতে দেবে না; আর আমি তো এ দেশে থাকতে চাই না৷’’
উত্তেজনা বাড়ছে
‘জঙ্গল মহল’ পরিত্যাগ করতে বলার নোটিশ আর পুলিশি নজরদারি বাড়ার ফলে ক্যাম্পের ভেতরে সহিংসতা বেড়েছে, বলে জানিয়েছেন ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার্স-এর মদ ল্য ক্যাঁত্রেক৷ খোসপাঁচড়ার পরেই নাকি রিফিউজিরা নিজেদের মধ্যে মারামারি আর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে বিভিন্ন চোট নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে৷
সমস্যা ছড়াচ্ছে
‘‘লোকজন বুঝতে শুরু করেছে যে, সরকার ক্যালের ‘জঙ্গলের’ আকার ছোট করে ফেলতে পারেন৷ তাই তারা অন্যত্র ‘জঙ্গল’ তৈরি করতে শুরু করেছে’’, বলেন ল্য ক্যাঁত্রেক৷ ক্যালের ১২০ জন বাসিন্দা নাকি সম্প্রতি বেলজিয়ামে একটি নতুন ক্যাম্পে গিয়ে বাসা গেড়েছেন৷ ‘‘মোট কথা, কিছু মানুষ ক্যালে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন৷ কাজেই সমস্যা অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে৷’’