‘‘তবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হলে প্রথমেই একটা আইন করতে হবে'' – ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামীর নিষিদ্ধকরণের ব্যাপারে এমনটাই বলেন রাষ্ট্রের প্রধান এই আইন কর্মকর্তা৷
ডয়চে ভেলে: জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার কথা অনেক দিন ধরেই হচ্ছে৷ অথচ এত কিছুর পরও কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না?
মাহবুবে আলম: যাচ্ছে যে না, তা নয়৷ তবে নিষিদ্ধ করতে হলে একটা আইন তো করতে হবে৷ সেটা পৃথক একটা আইন হতে পারে অথবা যুদ্ধাপরাধী সংক্রান্ত যে আইনগুলো হচ্ছে, সে আইনের মাধ্যমেও হতে পারে৷ তবে আগে আইনটা করতে হবে৷ এরা যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত৷ তাদের সব ধরনের কর্মকাণ্ড, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড – এ সবকিছু নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রকে দেবে আইন৷ সেই আইনটা না হওয়া পর্যন্ত এটা করা যাচ্ছে না৷
আমরা জানি জামায়াত নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একটা আইন আলোচনায় আছে৷ সেটার কতদূর অগ্রগতি হয়েছে?
এই মুহূর্তে সেটার অবস্থা কী, তা বলা কষ্টকর৷
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের ব্যাপারে হাইকোর্টের একটা রায় আছে৷ তা আপিল বিভাগে কি এটা শুনানির জন্য এসেছে?
এখন পর্যন্ত আসেনি৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
জামায়াতের ইতিহাস
১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামে উপমহাদেশে জামায়াতে ইসলামীর যাত্রা শুরু হয়৷ দলটির প্রতিষ্ঠাতা সায়েদ আবুল আলা মওদুদী৷ এরপর ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর গঠিত হয় জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান৷ বাংলাদেশ অংশের নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী, যার প্রধান ছিলেন গোলাম আযম৷ ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়৷ তবে কয়েকমাস পরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছিল৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
সুবিধাবাদী দল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক মামুন আল মোস্তফা সম্প্রতি এক প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘‘১৯৪১ সালে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান সুবিধা পেলেই বদলে ফেলেছে জামায়াত৷’’ তিনি বলেন, অন্য অনেক দলের মতোই যেখানে লাভ দেখেছে, বিনা দ্বিধায় সে পথে গেছে দলটি৷ ‘‘জামায়াত পাকিস্তানের বিরোধিতা করলেও ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব পাকিস্তানে চলে যায়৷’’ আরও জানতে ক্লিক ‘+’৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে জাময়াতে ইসলামী৷ শুধু বিরোধিতা নয়, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আছে দলটির বিরুদ্ধে৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ, তারপর আবার...
স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধ হয়৷ তবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়৷ ১৯৭৬ সালে জিয়াউর রহমান সুযোগ করে দিলে ইসলামিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নামে জামায়াত কাজ শুরু করে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই পালিয়ে যাওয়া গোলাম আযম ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে ফিরে এলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে কাজ শুরু করে৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
নির্বাচনি রাজনীতিতে জামায়াত
জামায়াত বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনে অংশ নেয় ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে৷ সেই বার তারা ১০টি আসন পায়৷ এরপর ১৯৯৬ সালে ৩টি, ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করে ১৭টি আর ২০০৮ সালে দু’টি আসন লাভ করে৷ এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত জামায়াতের দু’জন নেতা মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল গঠন
নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ২০১০ সালে ২৫শে মার্চ যুদ্ধাপরাধের বিচারে মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার৷ ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াত নেতাদের দণ্ড ছাড়াও দলটিকেও যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
মীর কাসেমের ফাঁসি বড় ধাক্কা
যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের জন্য জামায়াত সবসময়ই সক্রিয় ছিল৷ এ লক্ষ্যে প্রচুর অর্থ খরচ করে বিচার বন্ধ ও জামায়াত নেতাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করা হয়৷ এই কাজের নেতৃত্বে ছিলেন মীর কাসেম আলী৷ তিনি মূলত জামায়াতের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান দেখভাল করতেন৷ মীর কাসেম আলির ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জামায়াতের অর্থনৈতিক ভিত্তিতে আঘাত লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
নিবন্ধন বাতিল হয়েছে, দল নয়
সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে৷ ফলে দলটি এখন আর দলীয়ভাবে এবং দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে না৷ তবে দল হিসেবে জামায়াত এখনও বৈধ একটি রাজনৈতিক সংগঠন৷
-
জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ
নতুন আমির কে হচ্ছেন?
যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতার ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ বর্তমানে মকবুল আহমেদই দলটির আমিরের দায়িত্ব পালন করছেন৷
এ ব্যাপারে আপনাদের উদ্যোগ কী?
আদালতে বর্তমানে অবকাশকালীন ছুটি চলছে৷ খুলবে অক্টোবরের শেষ তারিখে৷ কোর্ট খুললে আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে দেখব যে, এটা শুনানির জন্য ‘রেডি' হয়েছে কিনা৷ তারপর যথাযথ পদক্ষেপগুলো নেবো৷
জামায়াত তো দলগতভাবে নির্বাচনে অযোগ্য৷ আমরা দেখেছি, ব্যক্তি পর্যায়ে জামায়াত নেতারা বিভিন্ন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এবং কেউ কেউ নির্বাচিতও হচ্ছেন৷ জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে নিষিদ্ধ করা বা তাঁদের নির্বাচনের বাইরে রাখার ব্যাপারে আপনাদের কোনো চিন্তা-ভাবনা আছে কি?
সেটা করতে হলে দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে৷ শুধু একজন ব্যক্তিকে তো এভাবে নিষিদ্ধ করলে কোনো লাভ হবে না৷ আইন করে দলকে আগে নিষিদ্ধ করতে হবে৷ তাহলেই তার ‘এফেক্ট' সবার ওপর বর্তাবে৷
জামায়াত তো নির্বাচনে নিষিদ্ধ হয়েছে৷ তা তাদের কর্তা-ব্যক্তি যাঁরা আছেন, তাঁদের ব্যাপারে কোনো চিন্তা আছে কি?
কোনো নেতা যদি তাঁর পার্টির প্রতীক নিয়ে দাঁড়ায়, তখন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রশ্ন আসবে৷ এখন তো অনেকটা লুকোচুরির মতো অবস্থা৷ নিজেদের ‘আইডিওলজি' গোপন করে তাঁরা বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ নিচ্ছে৷
আমরা জানি, জামায়াত আর্থিকভাবে খুবই শক্তিশালী জায়গায় আছে৷ জামায়াতের অনেক বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানও আছে৷ এগুলো নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই?
প্রথমেই তো বললাম, এ ব্যাপারে আইন না করে কিছু করা যাচ্ছে না৷ আমাদের দেশ একটা সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক দেশ৷ আমাদের সংবিধানে অনেকগুলো স্বাধীনতা সংরক্ষণ করা আছে৷ সেক্ষেত্রে আইন না করে এটা করা খুবই কঠিন ব্যাপার৷ তাই আগে আইন করতে হবে৷
একদিকে আমরা দেখছি, জামায়াতের ব্যাপারে সরকারের নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা৷ অন্যদিকে জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা সরকারকে কখনও কখনও সহযোগিতাও নিতে দেখি....এ বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
এটা কিন্তু ঠিক না৷ একটা সময় ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে বা বিভিন্ন খেলার ব্যাপারে জামায়াত নানারকম বিজ্ঞাপন দিতো৷ সেটা নিয়ে তখন খুব সমালোচনা হয়েছিল৷ তবে একবারই এমন হয়েছিল৷ এরপর আর এটা দেখিনি৷ অবশ্য সেটাও জামায়াত সরাসরি করেনি৷ ইসলামী ব্যাংক কতগুলো ব্যাপারে অংশ নিয়েছিল৷ জনশ্রুতি আছে, ইসলামী ব্যাংক জামায়াতের৷ ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড অফ ডিরেক্টরে তো এখন পরিবর্তন ঘটেছে৷ এখন সেখানে অনেক ডিরেক্টর আছেন, যাঁরা সরকারের বিভিন্ন পদে আসীন৷
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী?
আইন সংশোধন করা৷ যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত যে দল বা ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, তারা কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না – এই মর্মে স্পষ্ট একটা আইন করতে হবে৷
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে অনেকগুলো রায়ে এই প্রসঙ্গটি এসেছে৷ সেক্ষেত্রে আপনাদের নতুন করে কোনো ভাবনার জায়গা তৈরি হয়েছে কি?
আমি যে কথা প্রথম থেকেই বলছি, একটা আইন করতে হবে৷ এই আইন করবে আমাদের সংসদ৷ আর সরকার এ ব্যাপারে একটা নীতি গ্রহণ করবে৷ প্রশ্ন হলো, সেটা কবে করবে বা আদৌ করবে কিনা, তা নিয়ে৷
এই মুহূর্তে সরকারের কী করণীয়? সে ব্যাপারে আপনার যদি কোনো পরামর্শ থাকে...
এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত৷ এটা করলে কি সরকার লাভবান হবে? এতে কি গণতন্ত্রের মঙ্গল হবে? না এই সমস্ত দলগুলো আবারো ভিন্ন নামে তাদের কর্মকাণ্ড শুরু করার সুযোগ পাবে? এ রকম নানা বিষয় আছে৷ আসলে এটা ‘স্ট্র্যাটেজির' প্রশ্ন এবং নিশ্চয় সরকারের বিবেচনাধীন৷
আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের যে তৎপরতা আমরা দেখছি বা যারা ধরা পড়ছে, তাদের মধ্যেও অনেক জামায়াত-শিবিরের নেতা রয়েছে৷ তাদের ব্যাপারে গোয়েন্দাদের কাছে কি তথ্য রয়েছে?
হ্যাঁ, এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে৷ এই দলে যে ট্রেনিং হতো, নানারকম নির্জন জায়গায় যে তাদের সভা-সমাবেশ হতো, সেখানে অস্ত্র দিয়ে ট্রেনিং দেয়া হতো – এমন খবর আজকে থেকে ১০-১২ বছর আগে থেকেই সংবাদমাধ্যমে আসছে৷ জামায়াতের পক্ষ থেকেও এগুলো কখনও সরাসরি অস্বীকার করা হয়নি৷
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
‘‘জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল’’
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার (০১.০৮.১৩) বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছেন হাইকোর্ট৷ বিচারপতি এম মোয়াজ্জেম হোসেন, ইনায়েতুর রহিম এবং কাজী রেজা-উল-হকের সমন্বয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তাদের রায়ে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেন৷ রায়ে বলা হয়, ‘‘জামায়াতের গঠনতন্ত্র শুধু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকই নয়, জামায়াত একটি সন্ত্রাসী দল৷’’
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
২০০৯ সালের রিটের রায়
রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কয়েকটি সংগঠন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা হাইকোর্টে রিট করেন ২০০৯ সালে৷ রিটে জামায়াতের গঠনতন্ত্র সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করা হয়, জানান ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর৷ সেই রিটের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করলেন আদালত৷
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
আদালতের রায়ের পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং এই মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক জানান, রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন৷ সেজন্য ইতিমধ্যে রায়ের কার্যকারিতার স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে৷
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর চূড়ান্ত স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ‘‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল৷ তবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেদলের কিছু নেতার হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে জামায়াত৷’’
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
ট্রাইব্যুনালে বিচার
জামায়াত যুদ্ধাপরাধের দায় অস্বীকার করলেও ২০১০ সালে গঠিত ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একের পর এক জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হচ্ছে৷ এই ছবিঘর তৈরির দিন (০১.০৮.১৩) অবধি ছয়জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল৷ সর্বশেষ আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে৷
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি
এদিকে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায়ের পর দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি আরো জোরালো হয়েছে৷ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেও সরকার এতটা সাহসী হবে বলে আশা করেন না৷ মুনতাসির মামুনের কথায়, ‘‘জামায়াত একটি যুদ্ধাপরাধী দল৷ ট্রাইব্যুনালের একাধিক রায়ে তা বলাও হয়েছে৷ তাই যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবেও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব৷’’
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
ব্লগারদের সতর্ক প্রতিক্রিয়া
বৃহস্পতিবার আদালত রায় ঘোষণার আগেই ফেসবুকে আরিফ জিবতেক লিখেছেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়টা কিন্তু জামায়াত নিষিদ্ধ নিয়া মামলা না৷ মামলাটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনে জামায়াত আইনসিদ্ধভাবে নিবন্ধিত হয়েছে কিনা, সেটা নিয়ে বিবেচনা৷’’ এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার চাই, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নিয়া আমার মাথাব্যথা নাই৷’’
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
এই দাবি নতুন নয়
পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৪১ সালে জামায়াত প্রতিষ্ঠার পর মোট তিনবার দলটি নিষিদ্ধ হয়েছে৷ ১৯৫৯ এবং ১৯৬৪ সালে পাকিস্তানে এবং ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে৷ ১৯৭৯ সালের ২৫শে মে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জামায়াত প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়৷
-
জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল
সহিংস প্রতিক্রিয়া
হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় ঘোষণার পর সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে জামায়াতের কিছু কর্মী৷ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানিয়েছে, ‘‘বৃহস্পতিবার ঢাকায় গাড়ি ভাঙচুর করেছে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীরা৷’’ এছাড়া পাবনাতেও ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে৷
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম / হারুন উর রশীদ স্বপন
২০০৯ সালের শুরুতে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে৷ অর্থাৎ প্রায় সাত বছর পার হয়ে গেল৷ তারপরও কেন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারছে না?
না, এখানে না পারার প্রশ্ন না৷ ব্যাপারটা হলো স্ট্যাটেজির বা কৌশলগত৷ আজকে যদি জামায়াতকে আপনি নিষিদ্ধ করেন, তাহলে তারা অন্য নামে, অন্যান্য দলের সঙ্গে মিশে তাদের শক্তিটা আরো বৃদ্ধি করতে পারে৷ এই জিনিসগুলো হয়ত বিবেচনায় নিচ্ছে সরকার৷ আমি যতখানি বুঝি, তাদের যে কর্মকাণ্ড, যে আইডিওলজিতে তারা বিশ্বাস করে, সেটা শুধু নাম বন্ধ করে হবে না৷ নামটা বন্ধ করে দিলাম, কিন্তু অন্য কোনো নামে তাদের আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ থাকবে কিনা এবং সেক্ষেত্রে কী করা হবে? এ ধরনের প্রশ্ন আগেই যাচাই করে দেখতে হবে৷
যেমন ধরুন, লাদেনের দলকে যখন ‘ব্যান' করা হলো – তখন আমরা জানতাম যে একজন সন্ত্রাসী ইসলামের নাম ব্যবহার করে নানারকম কাজ করছে৷ লাদেনদের দমন করার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলো৷ অথচ এর পরেই দেখুন ‘ইসলামিক স্টেট' তৈরি হয়ে গেল৷ এই ইসলামিক স্টেট তো লাদেনদের চেয়ে কোনো অংশে কম না, বরং অনেক বেশি৷ কাজেই শুধু নামের ব্যাপারে যদি একটা নিষেধাজ্ঞা দেন, তাহলে হবে না৷ ভেতর থেকে এদের আইডিওলজিক্যাল যে শক্তি আছে, সেটা প্রতিহত করতে হবে৷ নিশ্চয় সরকার এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে৷ সরকার যে তাদের নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেবে বা দিচ্ছে, সে কথা ঠিক না৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, যারা মৌলবাদে বিশ্বাস করে, যারা মনে করে ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠন করা প্রয়োজন, যাদের ‘টার্গেট' হলো ধর্মীয় রাষ্ট্র গঠন করা, তাদের ‘আইডেন্টিফাই' না করলে কোনো ফল হবে না৷ ফলে আজকে তাদের নিষিদ্ধ করলে, তারা যদি অন্য নামে শুরু করে দেয়, অন্য নতুন লোকদের ‘রিক্রুট' করে, তখন তো পরিস্থিতি আরো বিপদজ্জনক হবে৷ তাই না? তবে এ সমস্ত জিনিস বিবেচনায় নিয়েই সরকার এগোচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷