করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে এবার কেন্দ্র-রাজ্য বিতর্ক শুরু হলো ভারতে। ছত্তিসগড়ের সঙ্গে পত্রযুদ্ধ শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। ছত্তিসগড় চিঠি লিখে কেন্দ্রকে জানিয়েছে, ভারত-বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাকসিন যেন তাদের রাজ্যে সরবরাহ করা না হয়। কারণ ওই টিকা নিয়ে তাদের সন্দেহ আছে। পাল্টা চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, কোভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ছত্তিসগড় টিকাকরণে অনেক পিছিয়ে আছে।
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
কতগুলো টিকা অনুমোদন পেয়েছে
ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন বায়োনটেক-ফাইজার, মডার্না ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, এই তিন টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷ এর বাইরে রাশিয়া স্পুটনিক ৫ ও চীন সিনোভ্যাক টিকার অনুমোদন দিয়েছে৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
পার্থক্য
বায়োনটেক-ফাইজার ও মডার্নার টিকা হচ্ছে এমআরএনএ টিকা৷ মডার্নার টিকা ঘরের রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত রাখা যায়৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার মতো মডার্নার টিকাকে পরিবহনের সময় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয় না৷ আর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি ভেক্টর ভাইরাস টিকা, যা সাধারণ রেফ্রিজারেটরে রাখা যায়৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
দ্বিতীয় ডোজে অন্য টিকা?
তিনটি টিকার ক্ষেত্রেই দুটো করে ডোজ দিতে হয় এবং ডোজ দুটো একই টিকার হতে হবে৷ কারণ দুই ডোজে দুই ধরনের টিকা নিলে কী হতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য নেই৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
করোনা হলেও টিকা নিতে হবে?
হ্যাঁ, নেয়া ভালো৷ কারণ একবার সংক্রমিত হলে পরে আর হবে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
কী অবস্থায় টিকা নেয়া যাবেনা?
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় এবং সাধারণ সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে সেই সময় টিকা নেয়া যাবে না৷ কোয়ারান্টিনে থাকার সময়ও টিকা নেয়া যাবে না৷ যাদের কোনো বিষয়ে অ্যালার্জি আছে তাদের বেশিরভাগই টিকা নিতে পারবেন৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
শিশুদের টিকা?
টিকাগুলো ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সিদের দেয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছে৷ শিশুদের টিকা দেয়ার বিষয়ে গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছে জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
গর্ভবতীরা টিকা নিতে পারবেন?
‘জার্মান স্ট্যান্ডিং কমিশন অন ভ্য়াকসিনেশন’ বা স্টিকো গর্ভবতীদের টিকা নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেনা৷ আবার না-ও করছেনা৷ তবে গর্ভবতী মায়েদের মধ্যে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তারা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে ঝুঁকি-লাভ বিবেচনা করে টিকা নিতে পারেন বলে জানিয়েছে স্টিকো৷ এদিকে, এমআরএনএ টিকা গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিশ্বাস করেননা বিশেষজ্ঞরা৷ তবে এ বিষয়ে এখন প্রাণীর উপর গবেষণা চলছে৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?
টিকা নেয়ার পর তিনদিনের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে৷ যেমন টিকার স্থান ফুলে যাওয়া, মাথাব্য়াথা, জ্বর, দুর্বল লাগা ইত্যাদি৷ তবে দুদিনের মধ্যে এগুলো সেরে যাবার কথা৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
অন্য টিকা নিতে কতদিন অপেক্ষা?
ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, রুবেলা কিংবা টিটেনাসের টিকা নিতে চাইলে করোনার টিকা নেয়ার আগে বা পরে ১৪ দিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
টিকা হালাল?
ফাইজার, মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার মুখপাত্ররা টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন তাদের টিকায় শূকরের কিছু নেই৷
-
প্রশ্ন-উত্তরে করোনার টিকা
টিকা নেয়ার পরও হাত ধোঁয়া, মাস্ক পরতে হবে?
টিকা আপনাকে কতদিন রক্ষা করতে পারে সে বিষয়ে এখনও কোনো গবেষণা নেই৷ তাই টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে৷
ভারতে টিকাকরণ শুরু হয়ে গেছে বেশ কিছুদিন হলো। প্রাথমিক ভাবে দুইটি টিকা দেওয়া হচ্ছে প্রথম সারির করোনাযোদ্ধাদের। একটি অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট যে ভ্যাকসিন তৈরি করছে। অন্যটি হলো সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি কোভ্যাকসিন। ভারত-বায়োটেক এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। প্রথম থেকেই কোভ্যাকসিন নিয়ে বিতর্ক। অভিযোগ, তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার আগেই এই ভ্যাকসিনকে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ভারত-বায়োটেকের টিকা সরবরাহ করা হলেও অনেকেই সেই ভ্যাকসিন নিতে চাইছেন না।
তবে এই প্রথম কোনো রাজ্য চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কোভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ করার আবেদন জানালো। ছত্তিসগড়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী টি এস দেও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে একথা জানিয়েছেন। চিঠিটি দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা টুইটারেও দিয়ে দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, মূলত দুইটি সমস্যা আছে টিকাটি নিয়ে। এক, তার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল হয়নি। ফলে টিকাটির কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দুই, টিকাটির গায়ে এক্সপেয়ারি ডেট বা কতদিন টিকাটি কার্যকর থাকবে তা লেখা নেই।
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ইসরায়েল
করোনার টিকা কার্যক্রমে সবার চেয়ে দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে ইসরায়েল৷ বায়োনটেক-ফাইজারের টিকা দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করেছে তারা ১৯ ডিসেম্বর থেকে৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে৷ অর্থাৎ, ১৭ ভাগ জনগোষ্ঠীকে এরই মধ্যে টিকার আওতায় এনেছে ইসরায়েল, যা সবার চেয়ে বেশি৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
সংযুক্ত আরব আমিরাত
পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের সোয়া আট ভাগের বেশি মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছে৷ মোট আট লাখ ২৬ হাজার ডোজ টিকা দিয়েছে তারা এই সময়ের মধ্যে৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বাহরাইন
পারস্য উপসাগরীয় দেশ বাহরাইনের প্রতি ১০০ জনের চারজন এরই মধ্যে টিকা পেয়েছেন৷ এক্ষেত্রে ইসরায়েল ও আরব আমিরাতের পরেই তাদের অবস্থান৷ মোট টিকাপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা ৬৮ হাজারের বেশি৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
যুক্তরাষ্ট্র
করোনার টিকা বিতরণের মোট সংখ্যায় সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র৷ ৫৩ লাখের বেশি মানুষ এরই মধ্যে টিকা নিয়েছেন৷ কিন্তু শতকরা হিসেবে ৬ জানুযারি পর্যন্ত করোনার টিকার আওতায় এসেছেন এক দশমিক ছয় শতাংশ৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন দিয়ে করোনার টিকা কার্যক্রম চালু করে যুক্তরাজ্য৷ তাদের হালনাগাদ তথ্যটি ২৭ ডিসেম্বরের৷ সেই হিসাবে সাড়ে নয় লাখ ডোজ টিকা বিতরণ করেছে তারা, যা মোট জনগোষ্ঠীর সোয়া এক ভাগের বেশি৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
চীন
গত সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি সিনোফার্মের টিকার আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছে চীন৷ শেষ ধাপের ট্রায়ালে আছে আরো কয়েকটি৷ তবে অনুমোদনের আগে পরীক্ষা পর্যায়েই সেসব টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে ৪৫ লাখ মানুষের দেহে৷ বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশটিতে শতকরা হিসাবে সেটি একভাগেরও কম৷ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঁচ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা দেশটির৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
রাশিয়া
ট্রায়াল শেষের আগেই বিশ্বে সবার আগে নিজেদের উদ্ভাবিত টিকার অনুমোদন দিয়ে আলোচনায় আসে রাশিয়া৷ ৫ জানুয়ারির ঘোষণা অনুযায়ী দেশটি এরই মধ্যে ১০ লাখ মানুষকে স্পুটনিক ফাইভ নামের সেই টিকা দিয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর এক ভাগের কম৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
জার্মানি
২৭ ডিসেম্বর থেকে ইউরোপের দেশগুলো একজোটে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে৷ তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পেরেছে জার্মানি৷ পাঁচ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে তিন লাখ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন৷ জনসংখ্যার হিসাবে এটি এক ভাগের প্রায় অর্ধেক৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ইটালি
মোট সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জনসংখ্যার শতকরা হিসাবে জার্মানির চেয়ে ইটালি কিছুটা এগিয়ে৷ করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে বেশি ভোগা দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন লাখ সাত হাজার ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে, যা মোট জনগোষ্ঠীর দশমিক পাঁচ-এক ভাগ৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
ক্যানাডা
১৬ ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়া শুরু করে ক্যানাডা৷ এক লাখ ৬৩ হাজার মানুষ এখন পর্যন্ত সেখানে করোনার প্রতিষেধক পেয়েছেন, যা জনসংখ্যার দশমিক চার-তিন ভাগ৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
স্পেন
৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্পেনে এক ৩৯ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বিতরণ করা হয়েছে, যদিও জনসংখ্যার শতকরা হিসেবে তা উল্লেখযোগ্য নয়৷
-
করোনার টিকাদানে কে কতটা এগিয়ে
বাকি বিশ্ব
ইউরোপের সব দেশেই করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে৷ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশও তড়িঘড়ি করেই কার্যক্রম শুরু করেছে৷ লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা এরই মধ্যে ৫২ হাজার ডোজ বিতরণ করেছে৷ তবে এই দৌড়ে এখনও যোগ দিতে পারেনি সিংহভাগ উন্নয়নশীল ও কোনো অনুন্নত দেশ৷ সব মিলিয়ে বিশ্বের জনসংখ্যার তুলনায় মাত্র দশমিক দুই ভাগ টিকা বিতরণ করা হয়েছে৷
চিঠির উত্তর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। তিনি লিখেছেন, কোভ্যাক্সিন সম্পূর্ণ নিরাপদ। যদিও কীসের ভিত্তিতে কোভ্যাক্সিনকে তিনি নিরাপদ বলছেন, তার ব্যাখ্যা দেননি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, টিকার গায়ে ম্যানুফ্যাকচারিং ডেটও লেখা আছে। অর্থাৎ, উৎপাদনের তারিখ বলা আছে টিকার গায়ে। এখানেই থেমে থাকেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। উল্টে ছত্তিসগড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ছত্তিসগড় অনেকটাই পিছিয়ে আছে। সেখানে এখনো পর্যন্ত মাত্র নয় দশমিক পাঁচ শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন। অর্থাৎ, দুই লাখ নয় হাজার ৫১২ জন। অন্য রাজ্যগুলিতে টিকাকরণ অনেক দ্রুত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ছত্তিসগড়ে এখন কংগ্রেস ক্ষমতায়। সে কারণেই কেন্দ্র-রাজ্য এই সংঘাত শুরু হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা। চিকিৎসকদের মধ্যেও কোভ্যাক্সিন নিয়ে দ্বিমত আছে। চিকিৎসক পার্থপ্রতিম বোস ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, দুইটি ভ্যাকসিনই ভালো। তবে তিনি নিজে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়েছেন। চিকিৎসক সাত্যকি হালদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, কোভ্যাকসিন নিয়ে নানা বিতর্ক আছে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল না হলে সেই টিকা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। সে কারণেই বহু চিকিৎসকও কোভ্যাকসিন নিতে চাইছেন না।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই)