কোন মন্ত্রীকে কী মন্ত্রণালয় দিলেন মোদী
রোববার সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রীরা শপথ নিয়েছিলেন। তার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর তাদের মধ্যে মন্ত্রণালয় বন্টন করলেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর হাতে
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের হাতে রেখেছেন পার্সোনেল, পেনশন, অ্যাটমিক এনার্জি, মহাকাশ, সব গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও যেসব মন্ত্রণালয় অন্য কোনো মন্ত্রীকে দেয়া হয়নি, সেই সব মন্ত্রণালয়।
আবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
গত পাঁচ বছরের মতো এবারও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামলাবেন অমিত শাহ। সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ে কোনোরকম পরিবর্তনের মধ্য়ে যাননি মোদী। তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগীকে তার পছন্দের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই দিয়েছেন।
রাজনাথ সিং প্রতিরক্ষায়
গতবারের মতো এবারও রাজনাথ সিং-ই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামলাবেন। রাজনাথকে এবার প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন মোদী। এদিনও মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজনাথ সিং মোদীর পাশে বসেছিলেন। রোববার তিনিই মোদীর পরই শপথ নেন। রাজনাথকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করে মোদী বুঝিয়ে দিলেন, তিনি গতবারের সফল ও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের দপ্তর বদল করতে চান না। কোনো পরীক্ষার মধ্যে যেতে চান না।।
জয়শঙ্করই পররাষ্ট্রমন্ত্রী
এস জয়শঙ্করও তার পুরনো মন্ত্রণালয় পেয়েছেন এবং তিনিই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলাবেন। মোদী সরকার ২-এর পুরো সময়টা ধরেই তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন। অত্যন্ত কঠিন আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে তার কাজে মোদী সন্তুষ্ট ছিলেন। এদিন জয়শঙ্কর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। তখনই বোঝা যাচ্ছিল, তিনি পুরনো মন্ত্রণালয়ই পাবেন।
পুরনো মন্ত্রণালয়ে নীতিন গড়করি
নীতিন গড়করি তার পুরনো মন্ত্রণালয় সড়ক পরিবহন পেয়েছেন। দ্বিতীয় মোদী সরকারে যে মন্ত্রীরা ভালো কাজ করেছেন বলে বিজেপি নেতারা মনে করেন, নীতিন তার মধ্যে অন্যতম। দুই রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় টামটা ও হর্ষ মালহোত্রা ওই মন্ত্রণালয়ের কাজে নীতিনকে সাহায্য করবেন।
সীতারামনই অর্থমন্ত্রী
নির্মলা সীতারামনই আগের মতো অর্থমন্ত্রী থাকছেন। এবার পর্যাপ্ত অর্থ নেই বলে নির্মলা লোকসভা ভোটে দাঁড়াননি। কিন্তু এখানেও গতবারের ধারাবাহিকতা ভাঙতে চাননি মোদী। তার এবারের মন্ত্রিসভায় ধারাবাহিকতার উপরেই জোর দেয়া হয়েছে। কোনো চমকের মধ্যে যাননি মোদী।
শিবরাজ সিং চৌহান কৃষি ও গ্রামোন্নয়নের দায়িত্বে
এবার শরিক দলগুলি, বিশেষ করে জেডি ইউ কৃষি মন্ত্রণালয় চেয়েছিল। কিন্তু শিবরাজ সিং চৌহানকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন মোদী। মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কৃষির বিষয়ে অভিজ্ঞ। কৃষকদের সমস্যা বোঝেন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা বিজেপি-র উপর ক্ষুব্ধ। অভিজ্ঞ শিবরাজের হাতে তাই কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন দেয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতীরাজ পেয়েছেন জেডিইউ নেতা লালন সিং।
চিরাগ পাসোয়ানের হাতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ
শরিক দলের নেতা চিরাগ পাসোয়ানকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রণালয়ের ভার দেয়া হয়েছে। তিনি যুব নেতা। রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগের দল এবার পাঁচটি আসনে জিতে এসেছে।
কিরণ রিজিজু সংসদীয় ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে
গতবার প্রহ্লাদ জোশী ছিলেন সংসদীয়মন্ত্রী, কিন্তু এবার তাকে এই মন্ত্রণালয় দেয়া হয়নি। অরুণাচলের নেতা কিরণ রিজিজু এই দায়িত্ব পেয়েছেন। কিরণ রিজিজুর সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাদের সম্পর্ক ভালো। এবার বিরোধীদের শক্তি অনেকটাই বেড়েছে। তাই এখানে আর ধারাবাহিকতা বজায় রাখেননি মোদী। এছাড়া কিরণ রিজিজুর হাতে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। উপরের ছবিতে প্রেমা খান্ডুর সঙ্গে কিরণ রিজিজু(ডানদিকে)।
নাড্ডা স্বাস্থ্য, ধর্মেন্দ্র প্রধান মানব সম্পদে
বিজেপি সভাপতি হওয়ার আগে জে পি নাড্ডা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সামলাতেন। তাকে সেই মন্ত্রণালয়ই দেয়া হয়েছে। এছাড়া তার হাতে থাকছে সার ও রসায়ন মন্ত্রণালয়। ধর্মেন্দ্র প্রধান আগের মতোই মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সামলাবেন।
তথ্য ও সম্প্রচার এবং রেলে অশ্বিনী বৈষ্ণব
গতবার তথ্য ও সম্প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন অনুরাগ ঠাকুর। এবার অনুরাগ ভোটে জিতলেও মন্ত্রী হতে পারেননি। তার জায়গায় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হলেন অশ্বিনী বৈষ্ণব। তার হাতে রেল মন্ত্রণালয়ও আগের মতো থাকছে। জেডি ইউ রেল মন্ত্রণালয়ও চেয়েছিল। কিন্তু এই মন্ত্রণালয় বিজেপি নিজের হাতেই রাখছে। এছাড়া তার হাতে আইটি ও ইলেকট্রনিক্স মন্ত্রণালয়ও দেয়া হয়েছে।
খাট্টার বিদ্যুৎমন্ত্রী, পেট্রোলিয়ামে হরদীপ সিং
হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার বিদ্যুৎমন্ত্রণালয় পেয়েছেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেন মোদী। তিনি সেই মন্ত্রণালয় শরিক দলের হাতে ছাড়েননি। হরদীপ সিং পুরীও পেট্রোলিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ই সামলাবেন।
প্রথম সই
তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নরেন্দ্র মোদী প্রথম যে ফাইলে সই করলেন, সেটা হলো কৃষকদের অর্থ দেয়া নিয়ে। দেশজুড়ে কৃষকরা চারমাস পরপর দুই হাজার টাকা করে পান। কৃষক সম্মান নিধির সেই অর্থ যাতে কৃষকদের কাছে পৌঁছায়, সেই ফাইলেই সই করেন প্রধানমন্ত্রী।
কংগ্রেসের প্রশ্ন
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, কৃষকদের টাকা দেয়ার কথা ছিল জানুয়ারিতে। কিন্তু নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে ফেব্রুয়ারিতে দেয়া হয়। পরের কিস্তির টাকা এপ্রিল/মে মাসে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা জুনে দেয়া হচ্ছে। এমন ধারণা তৈরি করা হচ্ছে, কৃষকদের জন্য কতটা ভাবেন প্রধানমন্ত্রী। তাহলে এমএসপি-কে কেন আইনি রূপ দেয়া হচ্ছে না, কেন কৃষকদের ঋণ মকুব করা হচ্ছে না?
একনাথ শিন্ডের দলের দাবি
একনাথ শিন্ডে কেন্দ্রে একজন পূর্ণমন্ত্রী ও দুইজন রাষ্ট্রমন্ত্রী চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা তা পাননি। তাদের একজন স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রমন্ত্রী পেয়েছে। তারা তা নিয়ে খুশি নয়। দলের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তারা তাদের দাবি বিজেপি-র শীর্ষনেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছিলেন।
অজিত পাওয়ার প্রত্যাখ্যান করলেন
এনসিপি অজিত পাওয়ার মাত্র একটি লোকসভা আসনে জিতেছে। তাদের রাজ্যসভায় একজন সদস্য আছে। তাদের একটি রাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ দিতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অজিত পাওয়ার জানিয়ে দেন, তাদের পক্ষ থেকে মন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল প্রফুল্ল প্যাটেলের। তিনি আগে পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন। এখন তিনি কী করে রাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন? তারা বরং অপেক্ষা করবেন, কিন্তু এই প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না।