1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নুরের উপর হামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩০ নভেম্বর ২০২০

গত ডিসেম্বরে ডাকসু ভবনে নুরুল হক নুর ও তার সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় কোনো সাক্ষীর জবানবন্দি না দিয়েই চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া হয়েছে৷ তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, আহতদের মেডিকেল সার্টিফিকেট না পাওয়ায় কারুর সাক্ষী নেয়া হয়নি৷

https://p.dw.com/p/3m1bz
নুরুল হক নুর
গত ডিসেম্বরে ডাকসু ভবনে হামলার পর নুরুল হক নুরছবি: bdnews24.com

তবে সাক্ষী না নিলেও ওই দিনের ঘটনাকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি, ঠেলাঠেলি, ধাক্কধাক্কির এক পর্যায়ে কয়েকজন পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন ৷

গত বছরে ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলা হয়৷ এতে অন্তত ৩০ জন আহত হন৷ আহতদের মধ্যে নুরসহ কয়েকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নেন৷ ঘটনার দুই দিন পর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলামসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রইছ হোসেন৷ পরে নুরও আলাদা একটি মামলা করেন৷ মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনসহ ৩৭ জনকে আসামি করা হয়৷ পুলিশ নুরের মামলা আলাদাভাবে না নিয়ে দুইটি এজাহার একসাথে তদন্ত করে৷ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ডিবিকে৷

আহতদের মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি: তদন্ত কর্মকর্তা

গত ১০ অক্টোবর  তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির ইন্সপেক্টর শাহ মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে মামলার আসামিদের অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেছেন৷ ১৩ জানুয়ারি সিএমএম আদালতে শুনানি হবে৷

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমি এই মামলায় আহতদের মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি৷ নুরের কাছে তাদের হাসপাতালে ভর্তির কাগজপত্রও চেয়েছি৷ হাসপাতাল আমাকে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়নি৷ লিখিত আবেদন করেও পাইনি৷ তারা বলেছে ভর্তি স্লিপ না পেলে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেয়া সম্ভব না৷ আর এই মামলায় মেডিকেল সার্টিফিকেট না পেলে আর কোনো তদন্ত করে লাভ নাই৷ আমাকে মামলা তো শেষ করতে হবে৷ তাই চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছি পরে কখনো যদি মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তাহলে মামলা পুনরুজ্জীবিত করা যাবে৷’’

তিনি স্বীকার করেন এই মামলায় তিনি আহত বা প্রত্যক্ষদর্শীদের কোনো সাক্ষ্য নেননি৷ তার দাবি, ‘‘মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া এই ধরনের মামলার তদন্ত করে কোনো লাভ নাই৷ সার্টিফিকেটই মূল৷ সেটা যখন পাওয়া যায়নি তাই সাক্ষীও নেইনি৷’’

নুরুল হক নুর বলেন, ‘‘আমাদের চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই ঢাকা মেডিকেল থেকে জোর করে বের করে দেয়া হয়৷ আমাদের শুধু ওষুধ লিখে দেয়া হয়েছে৷ আর কোনো কাগজ দেয়া হয়নি৷ আমাদের যে এত টেস্ট করানো হলো তার কোনো ডকুমেন্ট দেয়া হয়নি৷ আর তদন্ত কর্মকর্তা মাত্র একদিন আমাকে ফোন করেছিলেন৷’’

নুরের কথা, ‘‘হাসপাতালে তো আমাদের ভর্তির রেকর্ড আছে৷ তাহলে মেডিকেল সার্টিফিকেট কেন হাসপাতাল দিতে পারবে না৷ আসলে উপরের চাপে এরকম করা হয়েছে৷ আমরা এই সরকারের আমলে বিচার নাও পেতে পারি৷ কিন্তু যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে একদিন আমাদের ওপর সব হামলারও বিচার হবে৷

‘‘আর মেডিকেল সার্টিফিকেট যদি কোনো কারণে না-ই পাওয়া যায় তারপরও তো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে, সাক্ষী আছে৷ আমরা আহতরা আছি৷ সেটা ধরেও তো তদন্ত করা যেত৷  

এই সরকারের আমলে বিচার নাও পেতে পারি: নুরুল হক নুর

‘‘আমার মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে, আরো একটি ছেলের মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায়৷ ফারাবি আইসিইউতে ছিলো৷ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদিবের কিডনি ড্যামেজ হওয়ার পথে ছিলো৷ আমরা ছোট ভাই এক সপ্তাহ ধরে সেন্সলেস ছিলো৷ তারপরও তদন্ত কর্মকর্তা এটাকে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা কীভাবে বলে?’’ প্রশ্ন নুরের৷

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি পরিচালক ছিলাম না৷ আমার কাছে আবেদনও করা হয়নি৷ আমি যোগ দিয়েছি কয়েকদিন হলো৷ তবে তদন্ত কর্মকর্তা যদি এখন আবেদন করেন আমি চেষ্টা করব একটা ব্যবস্থা করার৷’’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভর্তি এবং চিকিৎসার সব রেকর্ড থাকে৷ রোগীর ছাড়পত্র পাওয়া না গেলেও তারিখ ধরে সব রেকর্ড বের করা সম্ভব৷’’

কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আমার কাজ শেষ৷ যদি আবার মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়া যায় তাহলে আদালত নতুন কাউকে তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন৷’’

আর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু বলেন, ‘‘মেডিকেলে সার্টিফিকেটকে আইনে বলা হয় মতামত৷ আর প্রত্যক্ষদর্শী বা আলামত হলো মূল সাক্ষ্য প্রমাণ৷ মেডিকেলে সার্টিফিকেট মামলা তদন্তের জন্য অপরিহার্য নয়৷ মেডিকেল সার্টিফিকেট পাওয়া যায়নি এই অজুহাতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য না নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয়া যায় না৷’’

নুর বলেন, ‘‘শুরুতে আমরা মামলা করতে চাইলেও মামলা করতে দেয়া হয়নি৷ পুলিশ মামলা করে৷ তখনই এই মামলার পরিণতি বোঝা গেছে ৷ তারপরও আমরা এর বিরুদ্ধে আদালতে যাব৷’’

প্রসঙ্গত, ঘটনার চার দিন পর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিএম সাব্বির নুরসহ ২৯ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন৷ নুরের মামলার পর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি মামুনসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তারা আগেই জামিনে ছাড়া পান৷