1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কে শক্তিশালী, মশা না মেয়র?​​​​​

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মশা ক্ষুদ্র৷ কিন্তু এই মশা নিয়ে অতীতে নাকাল হয়েছেন ঢাকার দুই সিটির মেয়র৷ এবারো কি তারা নাকাল হবেন? না মশা মেরে নিজেদের শক্তির জানান দেবেন৷

https://p.dw.com/p/3YeVq
BdTD Bangladesch Denguefieber
ফাইল ছবিছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশঙ্কাও মশা নিয়ে৷ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নতুন দুই মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি তার এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘এখন থেকেই মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে সবাইকে৷ মশা আপনার ভোট যেন খেয়ে না ফেলে সেটা আপনাকে নিশ্চয়ই দেখতে হবে৷ মশা ক্ষুদ্র হলেও এটা অনেক শক্তিশালী৷ এটা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে৷''
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র মশাকে অযথা শক্তিশালী বলেননি৷ গত বছর ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছিল৷ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি৷ মেয়রদের পরাজিত করে এডিস মশা তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবেই গত বছর ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৬৬ জন৷ আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন৷ গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়৷ দেশে প্রথম ডেঙ্গু ধরা পড়ে ২০০০ সালে৷ সেই থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ৭৬ জন৷ আর ২০১৯ সালে এক বছরেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন৷
তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি সুখবর পাওয়া যায়৷ ১১ মাসের মাথায় ওই দিন দেশের ১১টি সরকারি এবং বেসরকারি ২৯টি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগী ছিলনা এবং নতুন করেও কেউ ভর্তিও হননি৷
কিন্তু এই সুখবরে খুব বেশি খুশি হওয়ার কারণ নেই৷ কয়েকদিন আগে ঢাকায় ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকায় মশার ঘনত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা৷ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি৷ সামনে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার ‘উত্তম প্রজনন কাল'৷ তখন আসলে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রতিক জরিপে ঢাকার ১০০টি জায়গার মধ্যে ১৩টি জায়গায় এডিস মশা ও লার্ভার উচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে৷
এদিকে ঢাকার বায়ু বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত৷ সার্বিক পরিবেশও নাজুক অবস্থায় রয়েছে৷
আইন অনুয়ায়ী ঢাকা দক্ষিণের মেয়র দায়িত্ব পাবেন ১৪ মে'র পর আর উত্তরের মেয়র ১৬ মে'র পর৷ তাহলে তারা কি বসে থাকবেন? যদি বসে না থাকেন তাহলে কাজ করবেন কিভাবে?

যেখানে এডিস, সেখানেই যাবো: আতিকুল

বসে থাকবেন না আতিকুল
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন তিনি দায়িত্ব পাওয়া পর্যন্ত বসে থাকবেন না৷ আগামী সোমবার থেকেই তিনি মাঠে নামছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আগামী পরশু দিন থেকে দেখবেন৷ আমি সবাইকে নিয়ে মশক নিধন ও পরিবেশের জন্য কাজ শুরু করবো৷ যেখানে এডিস মশা সেখানেই যাবো৷ প্রচার চালাবো৷''

আর তার এই কাজে দায়িত্ব পাওয়া না পাওয়া কোনো সমস্যা নয় বলে জানান তিনি৷ সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবেন৷ মশাকে এবার পরাজিত করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এবার চেষ্টার কোনো ত্রুটি হবেনা৷''

আমরা বসে নেই: মোস্তাফিজুর

উত্তরের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা জানান, তাদের এবছরের মশা নিয়ন্ত্রণের সব পরিকল্পনা করা আছে৷ কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা নতুন মেয়রকে জানিয়েই সব কাজ করছি৷ তার পরামর্শ নিচ্ছি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘মশা নিধন করতে না পারলে মানুষতো বিরক্ত হয়ে গালি দেবেই৷ প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন ঠিক বলেছেন৷ আমাদের প্রমাণ করতে হবে মশার চেয়ে অমরা শক্তিশালী৷''


তাপসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সাঈদ খোকন
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এরইমধ্যে নতুন মেয়র ফজলে নূর তাপসকে সিটি কর্পোরেশনে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘‘বর্তমান মেয়র ফোন করেছিলেন নতুন মেয়রকে৷ সাঈদ খোকন চান ফজলে নূর তাপস মশক নিধনসহ নগরীর অন্যান্য বিষয়ে যেন তাঁর পরামর্শ দেন৷ তাঁর পরামর্শ বাস্তবায়নে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই৷ তাতে আমাদের কাজের গতি আরো বাড়বে৷ তিনি সময় দিলেই এই বৈঠক হবে৷ নতুন মেয়র মহোদয় ২৭ ফেব্রুয়ারির পর বৈঠকে রাজি হয়েছেন৷ এখন যেকোনো দিন এই বৈঠক হবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘তবে আমরা বসে নেই৷ ২০২০ ঢাকা দক্ষিণের মশক নিধনের পরিকল্পনা আমরা আগেই করে ফেলেছি৷ আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে৷''
জানাগেছে, সাঈদ খোকন এখন দেশের বাইরে আছেন৷ তিনি ফিরে এসেই তাপসের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ তবে এনিয়ে তাপসের বক্তব্য জানা যায়নি৷


সদিচ্ছা থাকলে কাজে কোনো সমস্যা হবেনা
দুই মেয়র কবে দায়িত্ব পাবেন সেটাকে কাজের জন্য কোনো সমস্যা মনে করেন না নগর বিশেষজ্ঞ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন৷ তিনি মনে করেন তারা এখন বসে থাকলে যখন দায়িত্ব পাবেন তখন ঢাকার মশা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে৷ তাই তাদের উচিত এখন সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে কাজের চাপ দেয়া, পরামর্শ দেয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘এতে আইনে কোনো সমস্যা নেই৷ দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন৷ নতুন মেয়ররা তাদের সাথে বসতে পারেন৷ আর দক্ষিণে তো মেয়র সাঈদ খোকন আছেনই৷ ফজলে নূর তাপস সরসরি তার সাথে বসে তিনি কী চান তা জানাতে পারেন৷''

তিনি মনে করেন নতুন দুই মেয়র কোনো অসহযোগিতার মুখে পড়বেন না৷ সেরকম হলে তারা সেটা নগরবাসীকে জানাতে পারেন৷

কয়েকমাস আগের এই ছবিঘরটি দেখুন: