1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কেন গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন প্রতিনিধি দলের সফর

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সফর নতুন দরজা খুলে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

https://p.dw.com/p/4ke6p
বাংলাদেশ সফরে একটি বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি দল
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটু উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছেছবি: Public Information Department of the Bangladesh government

তাদের কথা, এই সফর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ ছাড়াও আঞ্চলিব ভূরাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

তিন দিনের সফরে ঢাকায় রয়েছেন উচ্চ পর্যায়ের একটি মার্কিন প্রতিনিধি দল। শনিবার তারা ঢাকায় আসেন। এই দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকায় দেশটির অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্য অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু অবশ্য ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে।এ দলে ইউএসএআইডি-এর এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌরও রয়েছেন।

রবিবার তারা  বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয় রবিবার সকালে।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে  অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশ পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন।”

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গাসংকট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।

দুই দেশের মধ্যে এখন সহযোগিতা ও সহমর্মিতা  থাকবে: সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির

পররাষ্ট্র সচিবের ব্রিফিং:

প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর  বিকালে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন ব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের জানান, "বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্কার নিয়ে সরকারের ধারণা ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে এতে যুক্ত হতে পারে, তা নিয়ে ঢাকা সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”

পররাষ্ট্রসচিব জানান, "অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলোর বিষয়ে প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়েছে। সরকারের সংস্কার পরিকল্পনা সম্পর্কে তারা জানতে চেয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সংস্কারের বিষয়টি এ সরকারের বিশেষ অগ্রাধিকার বলে তাদের জানানো হয়েছে। আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহযোগিতার ক্ষেত্র, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা, রোহিঙ্গা সংকটসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।”

পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, "জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা বড় আকারে আর্থিক খাতে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছি এবং পাচার হওয়া অর্থসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশেষায়িত জ্ঞান রয়েছে, সেটি হয়তো আমরা ব্যবহার করব, কিন্তু আলাপ-আলোচনা সবে শুরু হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসার আগে দিল্লি সফর করেছেন। এই সফরে ভারত থেকে কোনো বার্তা নিয়ে এসেছেন কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, "এ বিষয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশন আছে এবং ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশন আছে। আমরা যদি দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই, এগুলো আমাদের জন্য প্ল্যাটফর্ম।''

এদিকে ইউএসএআইডি-এর এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর জানান তারা বাংলাদেশের অগ্রাধিকার খাতে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দেবেন। আর বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন:

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতা নাগরিক অধিকার, গণতন্ত্র, ভোটাধিকার নিয়ে আগে থেকেই কথা বলে আনছিলো। এখন একটি স্বৈরাচারি সরকারের পতন এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতে তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক গুরুত্ব আছে। মার্কিনিরা যেটা চেয়েছিলো সেটা এখন আমরাই করছি। ফলে দুই দেশের মধ্যে এখন সহযোগিতা ও সহমর্মিতা  থাকবে। আর ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব । এটাও দুই দেশের সম্পর্কের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ  বিষয়।”

যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু বলেছে তারা বাংলাদেশকে অলআউট  সাপোর্ট করবে: অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন

তার কথা, "ডোনাল্ড লু ভারত সফর করে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি যদি বাংলাদেশ সফর করে ভারতে যেতেন তাহলে হিসাবটি সহজ ছিলো। তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে ভারতের সঙ্গে কথা কলত। কিন্তু তারপরও আমি মনে করি তারা বাংলাদেশ সফরের পরও বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের অবস্থান কী হতে পারে তা নিয়ে নিশ্চয়ই তারা ভারতকে বলবে। বাংলাদেশকে ভারতের চাপমুক্ত রাখতে নিশ্চয়ই তাদের একটা ভূমিকা থাকবে। আর বাংলাদেশও ভারতের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে সু সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। সেটা প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন।”

তিনি বলেন, এবারের ভিজিটের প্রধান বিষয় হলো বাংলাদেশের অর্থনীতি। বাংলাদেশের রিজার্ভের সংকট আছে , অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় জটিলতা আছে, রপ্তানির সংকট আছে। তারা মূলত এবার বাংলাদেশের অবস্থা দেখছেন। তার ভিত্তিতে তাদের সহায়তার হাত বাড়বে বলে মনে করছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা পুরোটা তারা দেখছেন। তারা আসলে মূল্যায়ন করছেন তারা অর্থনৈতিক সংস্কারসহ অন্যান্য সংস্কারের বিষয়গুলো দেখছেন। এটা আসলে  দুয়ার খোলার সফর।”

সিরডাপের পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, "এই সফরের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ব্যবসা বাণিজ্যে সহায়তা করতে চায়। তাদের সঙ্গে যারা সহযোগী আছে তারাও সহায়তা করতে চায়।  বাংলাদেশ একটা ট্রানজিশনের মধ্য দিয়ে  স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।” তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু বলেছে তারা বাংলাদেশকে অলআউট  সাপোর্ট করবে। আঞ্চলিক কূটনীতি, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কসহ এখানে আরো অনেক বিষয় আছে। ”

তার কথা, "আমাদের অর্থনীতির যে চাপটা আছে  সেটা কমাতে বিভিন্ন উৎস থেকে আমাদের ধার করতে হবে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র ২০০ মিলিয়ন ডলারের একটা অনুদান দিয়েছে। আমাদের রপ্তানি সেখানে ১০ ভাগ কমে গেছে। সেটাও বাড়বে বলে আশা করি। ঢাকায় অ্যামেরিকান চেম্বার অব কমার্সের বৈঠকে তারা ব্যবসা বাণিজ্যের নানা দিকে সহযোগিতার কথা বলেছেন।  সব মিলিয়ে এই সফর অনেক ইতিবাচক।”