কাঁওয়ার যাত্রায় কেন দোকান মালিকের নাম লিখতে বলা হচ্ছে?
২৬ জুলাই ২০২৪কাঁওয়ার যাত্রা মানে শ্রাবণ মাসে শিবমন্দিরে গিয়ে গঙ্গাজল ঢালার জন্য যাত্রা। হিন্দিবলয়ে খুবই জনপ্রিয় এই যাত্রা। সেই যাত্রা নিয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথ সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, কাঁওয়াররা যে পথ দিয়ে যাবেন, সেই পথের পাশে সব দোকানের মালিকের নাম বোর্ডে লিখে রাখতে হবে। এরপর উত্তরাখণ্ড সরকারও একই সিদ্ধান্ত নেয়। মধ্যপ্রদেশে উজ্জয়িনী পুরসভাও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এরপর এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্তের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে এবং তিনটি রাজ্য সরকারকে হলফনামা দেয়ার নির্দেশ দেয়। উত্তরপ্রদেশ সরকার সুপ্রিম কোর্টকে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে।
কী বলছে উত্তরপ্রদেশ সরকার?
উত্তরপ্রদেশ সরকারের যুক্তি, কাঁওয়ার যাত্রা যাতে শান্তিপূর্ণ হয় এবং সুশৃঙ্খলভাবে চলে, তার জন্য এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কাঁওয়াররা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছিল, দোকান ও রেস্তোরাঁর নাম নিয়ে তারা বিভ্রান্ত হচ্ছে। সরকার এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিক। তার জবাবেই সরকার ওই নির্দেশ দিয়েছিল।
সরকার জানিয়েছে, কাঁওয়ার যাত্রা খুবই কঠিন যাত্রা। একবার পবিত্র গঙ্গাজলের বাঁক কাঁধে তুলে নিলে তা আর মাটিতে নামানো যায় না। ডাক কাঁওয়ারিরা কোনো বিশ্রাম পর্যন্ত নেন না। এর জন্য বেশ কয়েক বছরের প্রস্তুতি নিতে হয়।
সরকারের বক্তব্য, রাজ্য সরকার কোনো দোকানদার বা খাবার বিক্রেতার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে না। একমাত্র আমিষ খাবার বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে। বাকিরা আগের মতোই তাদের ব্যবসা করতে পারবে। শুধু স্বচ্ছতার জন্য ও বিভ্রান্তি এড়াতে এই অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গত ২২ জুলাই থেকে কাঁওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে।
আইনজীবীর বক্তব্য
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অশ্বিনী উপাধ্যায় বলেছেন, ''রাজ্য সরকার যে নির্দেশ দিয়েছে, তা আইনি ও সাংবিধানিক। ক্রেতাসুরক্ষা আইন অনুযায়ী উৎপাদকের নাম জানার অধিকার ক্রেতার আছে। খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুসারে ক্রেতার এটা জানার অধিকার আছে, খাবার কে বানিয়েছে, কে বিক্রি করছে।''
উজ্জয়িনীর মেয়র মুকেশ তাতোয়াল বলেছেন, ''কোনো ক্রেতা যদি মনে করেন, তাকে প্রতারণা করা হয়েছে, তাহলে তো তার জানা দরকার কার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন।''
কেন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা?
সাংবাদিক রাজদীপ সরদেশাই ইন্ডিয়া টুডে-তে লিখেছেন, ''উত্তরপ্রদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তে উত্তরপ্রদেশে রাস্তার ধারের দোকান ও রেস্তোরাঁর মধ্যে বিভেদের বীজ বপন করে দেবে। এতবছর ধরে যাত্রার সময় খাবার নিয়ে তো কোনো গোলমাল হয়নি। এখন এই সিদ্ধান্তে সামাজিক অস্পৃশ্যতা বাড়বে।''
কেন এই সিদ্ধান্ত?
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''এই সিদ্ধান্তের পিছনে বিজেপি-র অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও কাজ করছে। ২০২১ সালে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্ব যোগীকে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু যোগী তাতে রাজি হননি। তিনি দ্বিতীয়বার জিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী হন। যোগীকে দুই উপ-মুখ্যমন্ত্রীর নিঃশব্দ বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি পছন্দের মুখ্যসচিব পাননি। রাজ্য সভাপতি, সাংগঠনিক সচিব সবাই তার বিরোধী। লোকসভা নির্বাচনে খারাপ ফলের জন্য যোগীকে দায়ী করা হচ্ছে। এই অবস্থায় যোগীও এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যার বিরোধিতা বিজেপি নেতারা করবেন না। তিনি দলের ভিতরে তার অবস্থান আরো শক্ত করতে পারবেন।''
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এনডিটিভি)