কলকাতায় সবজি, তেল, চালের দাম আকাশছোঁয়া, বিপাকে সাধারণ মানুষ
উৎসবের মরসুমে কলকাতায় সবজি, ভোজ্যতেল, চাল-ডালের দাম অনেকটাই বেড়ে গেছে৷ সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে৷
সাধের লাউয়ের দাম সধ্যের বাইরে
কলকাতার বাজারে সবজি কিনতে গেলেই প্রায় ছ্যাঁকা লাগছে৷ সবজির দাম ৫০ থেকে একশ শতাংশ বা তারও বেশি বেড়ে গেছে৷ লাউয়ের কথাই ধরুন৷ কিছুদিন আগে ৪০ টাকায় যে লাউ পাওয়া যেত, এখন তা ৬০ টাকার কমে পাবেন না৷ দিল্লিতে পাঁচশ গ্রাম ওজনের লাউয়ের দাম ৪০ টাকার বেশি৷
বরবটির দাম বেড়েই চলছে
বরবটি কিছুদিন আগে পাওয়া যেত ৫০ টাকা কেজি দরে৷ এখন তা বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা কেজি৷ বরবটির দাম ১২০ শতাংশ বেড়েছে৷ দিল্লিতে বরবটির দাম ১৫০ টাকা কেজি৷ লঙ্কার দামও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
পিছিয়ে নেই বেগুন
‘নাই কোনো গুণ’ বলে যে বেগুনকে নিয়ে মজা করা হয়, তার দামও এখন দেড়শ টাকা কেজি৷ কিছুদিন আগেও ৭০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছিল৷ দিল্লিতে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে একশ টাকা কেজি দরে৷
ঢ্যাঁড়সের দাম
ঢ্যাঁড়স কলকাতার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে৷ কিছুদিন আগে ছিল ৪০ টাকা৷ আর দিল্লিতে তার দাম উঠেছে একশ টাকা কেজি৷
অধরা ফুলকপি
বাজারে এখন ফুলকপি উঠে গেছে৷ কিন্তু দাম শুনে আর কেনার সাহস হচ্ছে না সাধারণ মানুষের৷ একটা ফুলকপির দাম ৮০ টাকা৷ দিল্লিতে তিনশ থেকে পাঁচশ গ্রাম ওজনের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়৷ ফুলকপিও এখন বড়লোকের খাদ্য৷
ক্যাপসিকামও ধরাছোঁয়ার বাইরে
বাঙালির হেঁসেলে এখন ভালো করেই ঢুকে গেছে ক্যাপসিকাম৷ কলকাতায় অনেকে বলেন সিমলা মরিচ৷ সেই ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা কেজি৷ দিল্লিতে তার দাম দুইশ টাকা কেজি৷
আলু-পেঁয়াজের গল্প
আলু ছাড়া তো পশ্চিমবঙ্গ বা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় থাকা বাঙালির হেঁসেল অচল৷ কলকাতায় সেই আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি দরে৷ আর দিল্লিতে তার দাম ৫০ টাকা কেজি৷ পেঁয়াজ তো আলুকেও টপকে গেছে৷ কলকাতা ও দিল্লি দুই জায়গাতেই তা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে৷
চাল, ডালও পিছিয়ে নেই
চাল ও ডালের দাম প্রতি কেজিতে অন্ততপক্ষে পাঁচ টাকা বেড়েছে৷ এটা এই মাসের কথা নয়, চালের দাম প্রায় প্রতি মাসেই বেড়ে চলেছে৷ তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডালের দাম৷ দিল্লিতে মুগ ডালের প্যাকেট প্রায় দুইশ টাকা কেজি৷ মুসুর ডাল ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি৷
তেলের ঠ্যালা
শুধু সবজির দাম বেড়েছে তা তো নয়, যা দিয়ে সবজি রান্না করতে হবে, সেই ভোজ্য তেলের দামের সঙ্গে তাল মেলাতে পারা যাচ্ছে না৷ দিল্লিতে মাস দুয়েক আগেও সরষের তেলের এক লিটারের বোতল পাওয়া যেত ১০৯ টাকায়৷ এখন তার দাম ১৬০ টাকা৷ কলকাতায় সরষের তেলের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ৷ রিফাইনড তেল, সয়াবিন, পাম তেলের দাম ১২০ টাকা লিটার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫৮ টাকা বা তার বেশি৷
ব্যবসায়ী সমিতির নেতা যা বললেন
বিজয় সাউ হলেন মানিকতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তর পূর্বে জেলা কমিটির সম্পাদক৷ সবজি, চাল, তেলের এই লাগামছাড়া দাম নিয়ে তার ব্যাখ্যা, জানিয়েছেন, তেলের দাম বাড়ার কারণ হলো কেন্দ্রীয় সরকার তেলের ওপর কর-মাসুল বাড়িয়েছে এবং তেলের সংকটও আছে৷ সবজির দামের কারণ, প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা৷ একই কারণে চাল ডালের দাম বেড়েছে৷ তিনি বলেছেন, বাজারে জোগানও কম৷
পাঁচশ টাকার সবজিতে দুই দিন চলছে
সবজির এই দাম সবার বাজেট বিগড়ে দিয়েছে৷ উৎসবের মরসুমে এমনিতেই নতুন পোশাক কেনার খরচ আছে৷ তার উপর খাওয়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়েছে৷ ক্রেতা ঈপ্সিতা বিশ্বাস বললেন, তিনি একা মানুষ৷ তাতেই চারশ-পাঁচশ টাকার সবজিতে দুই দিনও চলে না৷
সবজি ডুবে গেছে
মনোজ দেবনাথ সবজি বিক্রি করেন৷ তিনি জানিয়েছেন, অতি-বৃষ্টি ও বন্যায় সবজি নষ্ট হয়েছে৷ যে সব জায়গা থেকে সবজি আসত, তার অর্ধেক জলের তলায় চলে গেছিল৷ প্রচুর সবজি নষ্ট হওয়ায় এত দাম বেড়েছে৷ অথচ, পেঁয়াজ যেখান থেকে আসে, সেখানে বন্যা হয়নি৷ তা সত্ত্বেও পেঁয়াজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে৷
খরচ ছাঁটাই করতে হচ্ছে
আয় এক, অথচ খরচ প্রচুর বেড়ে গেলে যা করতে হয়, কলকাতা, দিল্লির মানুষকে তাই করতে হচ্ছে৷ তারা সবজির খরচ ছাঁটাই করছেন৷ কম কিনছেন৷ সুবিমল কান্তি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তিনি এখন কম সবজি কিনছেন৷ নিজের সামর্থ্য অনুসারে খরচ করছেন৷
ফলন কম বলে
তেল বিক্রেতা উজ্জ্বল ঘোষ,জানিয়েছেন, গতবছর সর্ষের ফলন অনেক কম হয়েছে যতক্ষণ না নতুন করে সরষে বাজারে আসছে, ততদিন দাম কমবে না৷