1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় ফের চালু মেট্রো রেল

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

টানা ১৭৫ দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে কলকাতায় ফের চালু হলো মেট্রো রেল৷ কিন্তু নিয়মিত যাত্রীরা এখনও স্বচ্ছন্দ নন৷ আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করেই চলবে মেট্রো৷

https://p.dw.com/p/3iRcL
ছবি: DW/Bubhu

২৫ মার্চ দেশ জুড়ে লক ডাউন জারি হওয়ার পর থেকে এতদিন টানা বন্ধ ছিল ভূগর্ভস্থ মেট্রো রেল৷ সম্প্রতি দিল্লিতে চালু হওয়ার পর এবার কলকাতাতেও চালু হল গণ পরিবহণের এই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম৷ তবে কোভিড সংক্রমণ এড়াতে এক গুচ্ছ বিধিনিষেধ নিয়ে৷ মেট্রোর যাত্রাপথের সমস্ত স্টেশন এবং সবকটি ট্রেনের কামরা জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি প্রতিটি স্টেশনের প্রবেশপথে পুলিশকর্মীরা যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষার জন্য ‘‌থার্মাল চেকিং’ শুরু করেছেন৷ রাখা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় স্যানিটাইজার যন্ত্র, যা থেকে হাত জীবাণুমুক্ত করে নিতে হচ্ছে৷ স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষার সময় যাত্রীরা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন, সেদিকে নজর রাখছেন সিআরপিএফ কর্মীরা৷ ‘‌নো কনট্যাক্ট’ নীতি মেনে টিকিট বা টোকেন আপাতত বাতিল করে কেবলমাত্র স্মার্ট কার্ড দিয়েই সফর করা যাবে৷ স্মার্ট কার্ড রিচার্জ করা, অর্থাৎ টাকা ভরার জন্য নির্দিষ্ট কাউন্টার ছাড়া অনলাইন ব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে৷ কামরার মধ্যে টানা বসার আসনে একজনের পর দ্বিতীয় জনের জায়গা ছেড়ে বসতে হবে পরের যাত্রীকে৷ আসনগুলি সেভাবেই চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে লাল রঙের সতর্কচিহ্ন ছাপা স্টিকার দিয়ে৷ দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম৷ দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াতে হবে৷ এছাড়া বলাই বাহুল্য, প্রত্যেক যাত্রীর মুখ মাস্কে ঢেকে রাখা এখন বাধ্যতামূলক৷

মেট্রো চড়তে খুব একটা সাহস পাচ্ছি না: দীপঙ্কর ভদ্র, যাত্রী

কিন্তু এত সাবধানতা সত্ত্বেও কি ভরসা পাচ্ছেন যাত্রীরা?‌ রবিবার মেডিকেল জয়েন্ট এন্ট্রান্সের পরীক্ষার্থীদের সুবিধের কথা ভেবে সীমিত সময়ের জন্য চালু ছিল মেট্রো৷ সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ৭৪টি ট্রেন যাতায়াত করে যাত্রী পেয়েছে মোট ১,৬৪৮ জন৷ সোমবার সাধারণ যাত্রীদের জন্যে চালু হলেও এখনই ফের যাত্রীদের যাতায়াত পুরোদমে শুরু হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ যেমন বললেন দীপঙ্কর ভদ্র৷ একটা সময় মেট্রো রেল ছাড়া তাঁর চলতই না৷ এখন তিনি ভরসা পাচ্ছেন না৷ বললেন, ‘‌‘‌সাহসটা এখনও ঠিক কুলিয়ে উঠতে পারছি না৷ যেটা সবথেকে বেশি (‌ভয়)‌ হচ্ছে, নিজের বাবা–মা আর বয়স্ক দাদুর জন্য৷ তাঁদের শরীরটা এমনিই ভাল নেই, বিশেষ করে দাদুর৷ কাজেই আমার থেকে যদি (‌ওদের)‌ কেউ ইনফেক্টেড হয়, তা হলে সেটা আমার কাছে বেশি কষ্টের৷ সেজন্য এখনও আমি মেট্রো চড়তে খুব একটা সাহস পাচ্ছি না৷’’ দীপঙ্কর জানাচ্ছেন, যতদিন না করোনাকে রোখার উপায় বেরোচ্ছে, তিনি গণ পরিবহণ এড়িয়েই চলবেন৷ যতদিন করা যায়৷

মেট্রো বরাবরই লসে চলে: ইন্দ্রাণী ব্যানার্জি, মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক, কলকাতা মেট্রো

কিন্তু নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে, কম যাত্রী নিয়ে মেট্রো চালাতে গেলে এক একটি ট্রেনে অনেক কম লোক সফর করতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে কি ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হবে? কলকাতা‌ মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী ব্যানার্জি জানালেন, বরং ঠিক উল্টো৷ আপাতত ট্রেনের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু একদিকে স্টেশন এবং রেলের কামরা স্যানিটাইজ করার খরচ, অন্যদিকে কম যাত্রী, তাতে মেট্রোর যে আর্থিক ক্ষতি হবে, সেটা পূরণ করার কথা কী ভাবা হয়েছে?‌ইন্দ্রাণীদেবীর বক্তব্য, ‘‌‘‌মেট্রো বরাবরই লসে চলে৷ মেট্রোর অপারেটিং রেশিও যেটাকে বলা হয়, মেট্রোকে ১০০ টাকা রোজগার করার জন্য মোটামুটি ২৩০ টাকা খরচা করতে হয়৷ সুতরাং আমরা সবসময়ই দেশের মানুষের জন্য সামাজিক পরিষেবা‌দিয়ে থাকি৷ এটাও সেরকমভাবেই, নিত্যযাত্রীদের সুবিধের কথা ভেবে, কলকাতার মানু্ষের জন্য মেট্রো চলে বরাবর, এবং সেই মানসিকতা নিয়েই মেট্রো চলবে৷’’

তবে কলকাতার মেট্রো রেল ফেল চালু হওয়ার একটা অন্য তাৎপর্যও অবশ্যই আছে৷ যে করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে অবশেষে স্বাভাবিক জনজীবনে ফেরার চেষ্টা করছে শহর৷ এটাই বা কম কী!‌ 

গত ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...