কলকাতায় এক হকারের একাধিক ডালা নিয়ে সমস্যায় পুরসভা
কলকাতায় হকার-চিহ্নিতকরণের পরই নতুন সমস্যায় পড়েছে পুরসভা। এক হকারের নামে একাধিক ডালা রয়েছে।
হকার নীতি তৈরির নির্দেশ
লোকসভা নির্বাচনের পর কলকাতা শহর তথা রাজ্যের হকার নীতি ঠিক করতে বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পদক্ষেপে কলকাতা পুরসভাকে শহরের জন্য একটি হকার নীতি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।
পুরসভার সমীক্ষা
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর কলকাতা শহরে বৈধ হকার ঠিক করতে ডিজিটাল সমীক্ষাও চালিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। অবশেষে কলকাতা শহরের বৈধ হকারদের শংসাপত্র দেওয়ার কাজ শুরু করার বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুর প্রশাসন।
কলকাতা পুরসভার এলাকায় ৫৪ হাজার হকার
কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, পুজোর আগে শহরের হকারদের নিয়ে সমীক্ষা করেছিল পুরসভা। সেখানে ৫৪ হাজার ১৭৮ জন হকারের নাম নথিভুক্ত করা হয়। কোন হকার কোন এলাকার ফুটপাতের কোথায় কতটা জায়গা নিয়ে বসে আছেন, সমীক্ষায় তার লোকেশন জিপিএস ট্যাগিং করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের আধার ও প্যান কার্ডের কপি নেওয়া হয়েছিল। সেই সব শর্ত পূরণ করে এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের পালা।
সমস্যা আছে
তবে কলকাতা পুরসভার সমীক্ষা অনুযায়ী যে ১৪ হাজারের কিছু বেশি হকারের বসার জায়গা নিয়ে সমস্যা রয়েছে, তাঁদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পুরসভা সূত্রে খবর, ফুটপাতের নির্দিষ্ট জায়গায় স্টল গড়ে ব্যবসা করছেন কমবেশি ৪০ হাজার হকার। তাঁদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাকি ১৪ হাজার হকার নিয়ে জটিলতা রয়েছে।
একজনের একাধিক ডালা
এই অংশের হকারদের কারও একাধিক ডালা থাকার সন্ধান পাওয়া গেছে। কেউ রাস্তার দিকে মুখ করে ব্যবসা করছেন, কেউ আবার একই নামে ফুটপাতের দুই দিকে স্টল করেছেন।
জায়গা দখল করতে গিয়ে
কেউ আবার বিভিন্ন মোড়ে বা ফুটপাতে নির্দিষ্ট জায়গা না ছেড়ে ব্যবসা করছেন দিনের পর দিন। আপাতত তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া হবে না বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর। পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দ্রুতই ওই ১৪ হাজার হকার নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কলকাতা পুরসভা।
একজনকে একটি ডালা
পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, এক নামে একাধিক ডালা বসিয়ে বিকিকিনির আড়ালে ব্যবসা খুলে বসেছেন অনেকে। এমন ব্যক্তিকে কেবলমাত্র একটি ডালা দেওয়া হতে পারে।
রাতে ডালা ফেলে রাখা যাবে না
আরও একটি সমস্যা ইদানিং দেখা যাচ্ছে। রাতে হকারেরা শহরের পথে তাঁদের ডালা রেখে চলে যাচ্ছেন। তাই নতুন নিয়ম আনতে চলেছে কলকাতা পুরসভা। হকারেরা আর রাতে ডালা ফেলে রেখে চলে যেতে পারবেন না। সঙ্গে করে নিয়ে যেতে হবে ডালা-সহ ব্যবসায়িক জিনিসপত্র।
মেয়রের কাছে ফোন
শনিবার 'টক টু মেয়র' কর্মসূচি চলাকালীন বাগড়ি মার্কেট এলাকা থেকে ফোন আসে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের কাছে। ফোনেই এক ব্যক্তি অভিযোগ জানান যে, বাগড়ি মার্কেট এলাকায় হকারেরা রাতে তাঁদের ডালা রেখে চলে যাওয়ায় এলাকা সাফাইয়ের কাজে সমস্যা হচ্ছে। তাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
মেয়রের সিদ্ধান্ত
মেয়র জানিয়েছেন, এ বিষয়ে শীঘ্রই কলকাতা পুরসভা একটি নির্দেশিকা জারি করবে। যেখানে জানিয়ে দেওয়া হবে, কোনো হকার তার ডালা-সহ ব্যবসায়িক সরঞ্জাম রাতে কোনও ফুটপাথে রেখে যেতে পারবেন না। বেচাকেনা করার পর তাঁদের সেই সব জিনিস নিয়ে চলে যেতে হবে। পরদিন আবারও ডালা রেখে ব্যবসা করতে পারবেন তাঁরা। কোনও কারণে এই নির্দেশ না মানা হলে পুরসভা হকারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে বলেই জানাচ্ছেন এক আধিকারিক।
নীতি সব এলাকার জন্য
পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘শহরে কোনও নীতি তৈরি হলে তা গোটা শহরের জন্যই প্রযোজ্য হয়। তাই বাগড়ি মার্কেট এলাকার জন্য হকারদের নীতি তৈরি হলে, তা গোটা শহরের হকারদের জন্যই কার্যকর হবে বলেই আমরা মনে করছি।’’
হকারদের বক্তব্য
হকারদের বক্তব্য, ''ভোটের আগে সরকার মিষ্টি কথা বলে আর ভোট চলে গেলেই আমাদের ভয় দেখাতে শুরু করে। এত বছর ধরে এখানে বসছি, বৈধ কাগজ পাওয়া আমাদের অধিকার।''
শুধু যাওয়া-আসা
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ''অনেক সময়ই দেখা যায়, উপরমহলের নির্দেশের পর হকার উচ্ছেদ করা হয়। তার কিছুদিন পর তাদের আবার বসতে দেয়া হয়। তবে এবার যথাস্থানে দেয়ার জন্য টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। এই ঘটনা সমানে ঘটে।''