dw.com এর বেটা সংস্করণ ভিজিট করুন৷ আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি! আপনার মতামত সাইটটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারে৷
করোনার কবলে পড়া দুই বছর বাদ দিয়ে ২০১৯ সালের সাথে তুলনা করলেও এবারের ঈদ অর্থনীতির ‘আকার’ শতকরা ২০ ভাগ বেড়েছে এবং এর প্রভাব ঈদ পরবর্তী অর্থনীতিতেও পড়বে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
এবার ঈদের কেনাকাটা, পর্যটন আর পরিবহণ খাতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে৷ তবে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভের কারণে ঈদ যাত্রার বাহন হিসেবে মোটরসাইকেল আগের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্ব পেয়েছে৷ প্রায় এক কোটি মানুষ এবার ঈদে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরেছেন৷
এবার বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা শহরেও ঈদের কেনাকাটা ছিল দেখার মতো৷ দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা বাজারের সিয়াম ফ্যাশন এবং বস্ত্রালয়ের মিজানুর রহমান বলেন, ‘‘রোজা ৩০টি হওয়া ছিল ব্যবসায়ীদের জন্য বোনাসের মতো৷ একদিন বাড়তি পাওয়া ছিল হিসেবের বাইরে৷ এবার প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করেছেন৷ দুই বছরের করোনার পর আমরা এবার খুশি৷ যদি করোনার আগে ২০১৯ সালের সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে তার চেয়ে এবার ২০-৩০ ভাগ বেশি বিক্রি হয়েছে৷’’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ও এফবিসিআই'র সাবেক পরিচালক মো. হেলালউদ্দিনও একই কথা বলেন৷ তার মতে এবার ঈদের কেনাকাটা করোনার আগের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কমপক্ষে ২০ ভাগ বেশি হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আগে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা, এবার তা এক লাখ ৭০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে৷ এবার বেশি বিক্রি হয়েছে ফুটপাত, ছোট দোকান ও গ্রামাঞ্চলে৷ বড় বড় শপিংমলও ব্যবসা করেছে, কিন্তু বেশি ব্যবসা করেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা৷ আর সাধারণ মানুষ যে যার সাধ্যমতো কেনাকাটা করেছে৷ শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ ঈদে সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করেছেন৷’’ তার কথা, ‘‘এবার পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের দেশীয় ব্র্যান্ডের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়েছে, যা আরেকটি ইতিবাচক দিক৷’’
করোনার পর মানুষের হাতে টাকা এলো কিভাবে? সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘প্রথম কথা হলো, এবার করোনার বিধিনিষেধ নেই৷ ফলে মানুষ চেষ্টা করেছে ঈদে সাধ্যমতো আনন্দ করতে৷ এরপর রেমিটেন্স ভালো এসেছে৷ সরকারি বেসরকারি চাকুরেরা বোনাস পেয়েছেন৷ আর যারা ছোট-বড় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তারা ভালো ব্যবসা করায় তারাও খরচ করেছেন৷ দোকান কর্মচারীরাও কেনাকাটা করেছেন৷ এছাড়া পরিবহণ খাত, পর্যটন খাতও চাঙা হয়েছে, যার প্রভাব ঈদের বাজারে পড়েছে৷’’
এবার ঈদের আগে ২০০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷ তাছাড়া ঈদে দেশের অন্তত এক কোটি মানুষ দেশের অভ্যন্তরে ঈদ পর্যটনে যুক্ত হয়েছেন৷ দেশের বাইরে গেছেন ১৫ লাখ মানুষ৷ এরমধ্যে শুধু ভারতেই গেছেন পাঁচ লাখ৷ এসব তথ্য জানিয়ে প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেলস অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান বলেন, ‘‘এই হিসাবটা ঈদের ৮-১০ দিনের৷ এই সময়ে অভ্যন্তরীণ পর্যটন থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় হবে৷ কিন্তু যারা দেশের বাইরে গেছেন, তাদের মাধ্যমে আবার সাত হাজার কোটি টাকা চলে যাবে৷’’
বাইরে থেকে দেশে পর্যটক আসা এখনো শুরু হয়নি৷ এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ সে ব্যাপারে এখন উদ্যোগ নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশের ভিতরে পর্যটনের পরিবেশ এবার বেশ ভালো৷’’
এবার ঈদের বিনোদনে অভ্যন্তরীণ পর্যটন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করেছে৷ আর শীর্ষে আছে কক্সবাজার ও সুন্দরবন৷ ঈদের দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কিছুটা ছন্দপতন হলেও তা শেষ পর্যন্ত আর থাকেনি৷ গ্রামের মেলা, ঘোরাঘুরি ছিল পুরোমাত্রায়৷ ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলো দেখে কে বলবে এই দেশেও করোনা এসেছিল! ঢাকা চিড়িয়াখানার সামনে টিকিটের জন্য এত দীর্ঘ লাইন আগে কখনো দেখা যায়নি, যদিও শিশু পার্কটি বন্ধ ছিল৷
এবার বাস, ট্রেন, লঞ্চ, উড়োজাহাজ ও অন্যান্য পরিবহণ মিলিয়ে ঈদ যাত্রায় কমপক্ষে ৬০ হাজার কোটি টাকা আয় হয়েছে বলে ধারণা করছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী৷ তার মতে, শুধু সড়ক পথেই ৩০ হাজার কোটি টাকা আয় হওয়ার কথা৷ কিন্তু সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘‘আমরা আশানুরূপ যাত্রী পাইনি৷ যাত্রীদের বড় একটি অংশ মোটরসাইকেলে বাড়ি গিয়েছেন৷ মোটর সাইকেলে রাইড শেয়ারে এবার ঢাকা থেকে রংপুরেও গিয়েছেন অনেকে৷ মোটরসাইকেল কখনো গণপরিবহণ হতে পারে না৷ এরকম চললে সামনে আমরা পরিবহণ ব্যবসায় খারাপ দিন দেখতে পাচ্ছি৷’’
তবে মোজাম্মেল হক চৌধুরী মনে করেন, ‘‘বাস মালিকদের কারণেই এই পরিস্থিতি৷ তাদের মুনাফার লোভে বাড়তি ভাড়ার কারণেই মানুষ বিকল্প হিসেবে মোটরসাইকেল বেছে নিয়েছে৷ আর যানজটের ভয় তো আছেই, যদিও শেষ পর্যন্ত সেটা তেমন হয়নি৷ এবার এক কোটি মানুষ ঈদযাত্রায় মোটরসাইকেল ব্যবহার করেছেন৷’’
অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘করোনা কাটিয়ে ঈদ অর্থনীতির সব খাতই এবার চাঙা হয়েছে৷ মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে৷ সাহসী হয়ে উঠেছে৷ এর প্রভাব পুরো অর্থনীতিতে পড়বে৷ আড়াই মাস পর কোরবানির ঈদ৷ আশা করা যায় সেই ঈদে অর্থনীতি আরো চাঙা হবে৷ কারণ, এবার ব্যবসায়ীরা কিছু পুঁজি সংগ্রহ করতে পেরেছেন, যা তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করতে পারেবন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘করোনার বিধিনিষেধমুক্ত হওয়া ছাড়াও এবার ঈদে সব মিলিয়ে ছুটিও লম্বা ছিল৷ মাত্র তিন দিনের ছুটি হলে ব্যবসায়ীরা ভরসা পেতেন না৷ অর্থনীতি এতটা চাঙা হতো না৷ তাই আমি মনে করি, দুটি ঈদের যেকোনো একটিতে কমপক্ষে ৮-১০ দিন টানা ছুটি থাকলে তা অর্থনীতির জন্য ভালো৷’’