ছবিটা ভয়ংকর। করোনার টিকা ধনী দেশের কাছে বিক্রি করে ফাইজার, বায়োনটেক, মডার্না প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার ডলার লাভ করছে। প্রতিদিন তাদের সম্মিলিত লাভের পরিমাণ ৯ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের মতো। পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স (পিভিএ) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই হিসাব দিয়েছে। তার পাশাপাশি তারা জানিয়েছে, ধনী দেশগুলি যখন অঢেল ভ্যাকসিন কিনে টিকা প্রস্তুতকারকদের লাভবান করছে, তখন গরিব দেশের মাত্র দুই শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন।
পিভিএ টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলির আয়ের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে তদের এই বিপুল লাভের কথা জানিয়েছে। অথচ, এই কোম্পানিগুলি শয়ে শয়ে কোটি টাকার সরকারি সাহায্যও পেয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি তাদের অনুরোধ করেছিল যে, তারা যেন গরিব দেশগুলিকে প্রযুক্তি হস্তান্তর করে। তাহলে লাখ লাখ মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হবে। সেই অনুরোধে কান দেয়নি এই কোম্পানিগুলি।
ওই কোম্পানিগুলির তুলনায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও জনসন অ্যান্ড জনসনের মনোভাব একেবারেই আলাদা। তারা লাভ ছাড়াই ভ্যাকসিন বিক্রি করেছে। তবে তারাও এখন জানিয়েছে, করোনার প্রকোপ কমেছে। তাই তারা নীতিবদলের কথা ভাবছে।
-
‘টিকা সহজলভ্য না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির’
টিকার বৈষম্য
আইএমএফের সবশেষ তথ্য বলছে, অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলো এরই মধ্যে গড়ে ৩৯ দশমিক সাত শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়েছে৷ উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো টিকা দিয়েছে ১১ শতাংশ মানুষকে৷ অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো মাত্র এক দশমিক দুই শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে৷
-
‘টিকা সহজলভ্য না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির’
অর্থনৈতিক সহায়তা
অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে ব্যাপক হারে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়া হয়েছে৷ কোনো কোনো দেশে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ সহায়তা বলবৎ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷ বেশিরভাগ উদীয়মান দেশে ২০২০ সালেই সহায়তা শেষ হয়ে গেছে৷ অন্যদিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জনগণের কাছে তেমন একটা সহায়তাই পৌঁছায়নি৷
-
‘টিকা সহজলভ্য না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির’
প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব
এপ্রিলের পর অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ৷ কিন্তু উদীয়মান ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রবৃদ্ধি একই মাত্রায় নিম্নগামী হওয়ায় ২০২১ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ছয় শতাংশই থাকছে৷ বিশ্বজুড়ে মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার সম্ভব নয় বলেও মনে করেন আইএমএফের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গিতা গোপীনাথ৷
-
‘টিকা সহজলভ্য না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির’
মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা
বিভিন্ন দেশে মহামারির প্রথম ধাক্কার পর ধীরে ধীরে ব্য়বসা-বাণিজ্য খুলে দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তারপরও অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লেগেছে তার প্রভাবে বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারক এবং রাজনীতিবিদরা মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা করছেন৷ তবে আইএমএফের বিশেষজ্ঞ অবশ্য মনে করছেন, মহামারি থেমে গেলে অগ্রসর অর্থনীতির দেশগুলোতে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷
-
‘টিকা সহজলভ্য না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির’
দ্বিমুখী সমস্যা
নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে অবশ্য কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে দীর্ঘদিন৷ একদিকে মূল্যস্ফীতি, অন্যদিকে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে প্রবৃদ্ধি হুমকির মুখে পড়বে৷ অনিয়মিত পণ্য সরবরাহ এবং বাড়িভাড়া বৃদ্ধিও দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতিতে প্রভাব ফেলবে৷
-
‘টিকা সহজলভ্য না হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির’
টিকার সাম্যের আহ্বান
টিকার বৈষম্য দ্রুত কমিয়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ৷ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে ধাক্কা সামলানোর অবস্থায় আনতে ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের সব দেশে অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার আহ্বান সংস্থাটির৷ এজন্য যেসব দেশে বাড়তি টিকা রয়েছে, তাদের অন্তত একশো কোটি ডোজ নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে দিতে হবে৷ টিকা উৎপাদন ও প্রস্তুতকারীদেরও এসব দেশে আগে টিকা সরবরাহ করতে হবে৷
পিভিএ-তে অক্সফার্ম, ইউএনএইডস, আফ্রিকান অ্যালায়েন্সেও সামিল হয়েছে। তারা দাবি করেছিল, কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস বা মেধাসত্ত্ব অধিকার বাতিল করা হোক। কিন্তু জার্মানি ও যুক্তরাজ্য তাতে রাজি হয়নি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, সব দেশের করোনা মোকাবিলার উপর সমান জোর দিতে হবে। কিন্তু ধনী ও গরিব দেশগুলির এই ছবিই বুঝিয়ে দিচ্ছে, বাস্তবে তা হচ্ছে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে
বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা জানিয়েছে, এখন যে করোনা হচ্ছে, তার ৯৯ দশমিক পাঁচ শতাংশের ক্ষেত্রে ডেল্টা প্রজাতির করোনা ভাইরাস দায়ী। সারা বিশ্বের ছবি এক। করোনার অন্য ভাইরাসকে পিছনে ফেলে ডেল্টাই মারাত্মক হয়ে উঠেছে।
একমাত্র দক্ষিণ অ্যামেরিকাতে গামা, লাম্বডা ও মু প্রজাতির ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সেটা বাদ দিলে বাকি সব দেশে ডেল্টারই তাণ্ডব চলছে।
জিএইচ/এসজি(এপি, এফপি, রয়টার্স)