বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মানুষ সবে কিছুটা সাফল্য পাচ্ছে, ঠিক তখনই সেই ভাইরাসের আরো ছোঁয়াচে স্ট্রেন বা সংস্করণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগকে হুমকির মুখে ফেলছে৷ বিশেষ করে ব্রিটেন থেকে করোনারনতুন সংস্করণ কমপক্ষে বিশ্বের ৬০টি দেশে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ এক সপ্তাহ আগেও সংখ্যাটি ছিল ৫০৷ আরো ছোঁয়াচে বলে পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেন ২৩টি দেশে শনাক্ত হয়েছে৷
নতুন এই চ্যালেঞ্জের মুখে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে উঠেছে৷ গত সাত দিনে গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা রেকর্ড ৯৩,০০০ ছুঁয়েছে৷ একই সময় প্রায় ৪৭ লাখ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে৷ এমন পরিস্থিতির জন্য করোনা ভাইরাসের নতুন দুই সংস্করণ কতটা দায়ী, সে বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য না পাওয়া গেলেও সংশয় কাটছে না৷
এমন প্রেক্ষাপটে করোনার টিকাকরণ কর্মসূচিতে আরো গতি আনার জন্য চাপ বাড়ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন চলতি বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে কমপক্ষে ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে টিকা দেবার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ কিন্তু বাস্তবে ইইউ-সহ বিশ্বের অনেক দেশেই টিকা সংগ্রহ ও বিতরণের ক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷
চীন করোনা সংকট প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সফল হলেও সে দেশে সংক্রমণের হার আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ গত তিন সপ্তাহ ধরে এমন প্রবণতা দেখা যাওয়ায় চীনের সরকার বিশেষ করে বিদেশ থেকে আসা মানুষের উপর নজরদারি বাড়াচ্ছে৷
করোনা সংকটের সরাসরি অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘের একাধিক সংখ্যার সূত্র অনুযায়ী বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়েছে৷ করোনা মহামারির জের ধরে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবং খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলায় এমন খাদ্য সংকট দেখা যাচ্ছে৷ বুধবার প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী চলমান মহামারির ফলে প্রায় ১৯০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যকর খাদ্য কিনতে পারছেন না৷ গোটা বিশ্বে সব মিলিয়ে প্রায় ৬৮ কোটি ৮০ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে বলে রিপোর্টে অনুমান করা হচ্ছে৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকেই এশিয়া মহাদেশে বাস করেন৷ আফগানিস্তানে প্রতি ১০ জনের মধ্যে এক জন অপুষ্টির শিকার৷ করোনা সংকটের ফলে সার্বিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে৷
জাতিসংঘের সূত্র অনুযায়ী করোনা মহামারির ফলে খাদ্য সরবরাহের পথে একাধিক বাধা সৃষ্টি হয়েছে৷ সে কারণে শুধু দরিদ্র মানুষ নয়, সম্পন্ন পরিবারের পক্ষেও খাদ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও অনেক পরিবারকে ফুড ব্যাংকের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে৷ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, শিশু কল্যাণ সংস্থা ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্মিলিতভাবে এক রিপোর্টে এমন করুণ চিত্র তুলে ধরেছে৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
-
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
সাধারণ প্রতিক্রিয়া
যেকোন টিকারই সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে৷ যেমন, শরীরে ইনজেকশন দেয়ার স্থানটি লাল হয় বা ফুলে যায়৷ তিনদিনের মধ্যে অবসাদ, জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ব্যাথা হতে পারে৷ তবে এর কোনটিই দীর্ঘস্থায়ী নয়৷ শরীরে টিকার কার্যকারিতা শুরু হলে অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হওয়ায় এমন প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক৷ অনুমোদন পাওয়া করোনা ভ্যাকসিনগুলোর ক্ষেত্রেও এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে৷
-
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
গুরুতর প্রতিক্রিয়া
বিরল হলেও কিছু ক্ষেত্রে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা থাকে৷ যেমন, যুক্তরাজ্যে টিকা কর্মসূচি চালুর পর ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুইজনের অ্যালার্জি দেখা দেয়৷ দেশটির কর্তৃপক্ষ এ ধরনের সমস্যা যাদের আছে তাদেরকে সতর্ক করেছে৷ তবে সার্বিকভাবে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কারণেই করোনার বিভিন্ন টিকার অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি, যুক্তরাজ্যের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
-
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
টিকার উপাদান
সাধারণত টিকায় দুর্বল বা মৃত ভাইরাস থাকে৷ যার মাধ্যমে শরীর সেই ভাইরাসের বিপরীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে৷ তবে করোনার টিকাগুলোর মধ্যে কয়েকটি প্রথমবারের মতো এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি৷ এতে কোন ভাইরাস থাকে না৷ তার বদলে কোভিড-১৯ এর জীবাণুর ব্লুপ্রিন্ট বা প্রতিরূপ থাকে৷ তাই দুই ধরনের টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দুই রকম হতে পারে৷
-
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বায়োনটেক-ফাইজার
অনুমোদন পর্যায়ে বায়োনটেক-ফাইজার উদ্ভাবিত টিকার গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ কোন কোন ক্ষেত্রে টিকা গ্রহীতা সাময়িক অবসাদ আর মাথা ব্যাথায় ভুগেছেন৷ এমআরএনএ ভ্যাকসিনটির ব্যবহার শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে একজন ও ব্রিটিনে দুইজনের ত্বক লাল হওয়া এবং শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছিল৷ যাদের অ্যালার্জি সমস্যা রয়েছে তাদেরকে সতর্ক করেছে বিট্রিশ মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি৷
-
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মডার্না
বায়োনটেক-ফাইজারের মতোই এমআরএনএ ভিত্তিক মডার্নার টিকাটি৷ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই টিকাগ্রহীতাদের তেমন কোন সমস্যা হয়নি৷ হালকা যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে সেগুলো ছিল সাময়িক৷ তবে ১০ শতাংশ অবসাদে ভুগেছেন বলে জানিয়েছে একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক প্যানেল৷ অল্প কয়েকজন রোগী অ্যালার্জি ও মুখের স্নায়ু নিষ্ক্রিয় হওয়ার মতো জটিলতায় ভুগেছেন৷ তবে কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি৷
-
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকা
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে একজন মেরুদণ্ডের প্রদাহে ভুগেছেন৷ সেপ্টেম্বরে এই ঘটনার পর কিছুদিন ট্রায়াল বন্ধ ছিল৷ কিন্তু পরে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল পরীক্ষার পর জানিয়েছে সেটির কারণ ভ্যাকসিন নয়৷ এছাড়া টিকাটি নেয়ার পর ইনজেকশনের স্থানে ও পেশিতে ব্যথা, মাথাব্যাথা ও অবসাদগ্রস্ততার মতো সাধারণ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে৷ তবে বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা তুলনামূলক কম ছিল৷
-
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
স্পুটনিক ফাইভ
তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরুর আগে গত আগস্টেই নিজেদের টিকা স্পুটনিক ফাইভ এর অনুমোদন দেয় রাশিয়া৷ দুই ধরনের পরিবর্তিত অ্যাডেনোভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে এতে৷ রুশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জ্বর, মাথাব্যাথার মতো টিকাটির কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে৷ তবে কোন গুরুতর প্রতিক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি৷ তবে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য প্রকাশ না করার অভিযোগ রয়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে৷
-
করোনা ভ্যাকসিনের যত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত যত তথ্য জানা গেছে সেগুলোর কোনটিই আসলে পরিপূর্ণ চিত্র তুলে ধরছে না৷ দীর্ঘ মেয়াদে টিকাগুলোর ব্যবহার মানবদেহে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে তা অজানা৷ সেটি হয়ত সামনের মাস বা বছরগুলোতেই পরিস্কার হবে৷