এবোলায় (বানানভেদে ইবোলা) সংক্রমিত রোগী প্রথম পাওয়া গিয়েছিল পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনিতে৷ দেশটিতে সামান্য জ্বর দিয়ে শুরু হয়ে প্রাণঘাতী হয়ে ওঠা এ রোগ মহামারীর রূপ নিতে বেশিদিন লাগেনি৷ মার্চে শুরু, আগস্ট শেষ হতে না হতে গিনি তো বটেই, পাশের দেশ সিয়েরা লিওন, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া এবং সেনেগাল থেকেও প্রতিদিন আসছে মৃত্যুর খবর৷
গত পাঁচ মাসে এবোলা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ফলে জ্বরে ভুগে অন্তত ১৯’শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর৷
খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবোলা...
ব্রিটেনের বিমান কর্তৃপক্ষ ‘ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ' এবং ফ্রান্সের ‘এয়ার ফ্রান্স' লাইবেরিয়া, গিনি, সিয়েরা লিওন এবং নাইজেরিয়ায় সব ফ্লাইট বাতিল করে দিয়েছে৷
একদিকে আতঙ্ক গ্রাস করছে সারা বিশ্বকে, অন্যদিকে চলছে এবোলা ভাইরাস এবং সংক্রমিত রোগীদের থেকে অন্যদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা৷ সেরকমই এক উদ্যোগের ফসল ডির্ক ব্রোকমান এবং ডির্ক হেলবিং উদ্ভাবিত কম্পিউটার৷ বার্লিনের হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রোকমান এবং জুরিখের ফেডারেল ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজির হেলবিং কম্পিউটারের যে মডেলটি তৈরি করেছেন, তা হিসেব করে বলে দিতে পারে ভাইরাস ভৌগোলিকভাবে কোনদিকে ছড়াচ্ছে, কোন কোন দেশে দ্রুত পৌঁছাতে পারে৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান মার্গারেট চান এবোলাকে মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি অন্যতম ঘাতক জ্বর হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছেন যে, আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে রক্তপ্রদাহজনিত এই জ্বর৷ তাই বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যবিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন তিনি৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি
মারাত্মক এবোলা ভাইরাসের আক্রমণে পশ্চিম আফ্রিকার কয়েকটি দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭১১৷ গিনিতে গত মার্চে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এবোলা ভাইরাসের প্রকোপ কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
লাইবেরিয়ায় জরুরি অবস্থা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হিসেবে বিশ্বে এই ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দেশ লাইবেরিয়ায় বৃহস্পতিবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে৷ এতে সরকার বিভিন্ন কঠোর ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে৷ প্রাণঘাতী এবোলা ভাইরাস এখন আফ্রিকা থেকে বিশ্বের অন্যান্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
আক্রান্ত অন্যান্য দেশের নাগরিক
স্পেনের একজন প্রবীণ ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক মারাত্মক অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে গেছেন৷ তিনি এবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ সৌদি আরবে একজন রোগীর মৃত্যুর কারণও এবোলা বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা৷ নাইজেরিয়াতেও একজন নার্স এবোলার সংক্রমণে মারা গেছেন৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
এবোলা সংক্রমণের লক্ষণ
এবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মারাত্মক জ্বর এবং কারও কারও অবিরত রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে৷ সঙ্গে থাকে মাথা, পেশী এবং তলপেটে তীব্র ব্যথা৷ রোগীর একদিকে ক্ষুধা কমে যায়, অন্যদিকে শুরু হয় পাতলা পায়খানা৷ সাধারণত শরীর থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন তরল পদার্থের মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটে৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
আক্রান্ত চিকিৎসক
বলা বাহুল্য, আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যাকারীর মধ্যে ভাইরাসটি সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ লাইবেরিয়াতে যেমন এবোলা রোগীদের পরিচর্যাকারী দুই মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর, তাঁদের চিকিৎসার জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
সংক্রমণের আশঙ্কা
মূলত কোনো প্রাণী বা মানুষের রক্ত, বীর্য, যোনিরস বা দেহ নির্গত অন্য কোনো তরলের সংস্পর্শে এ রোগ ছড়ায়৷ বলা বাহুল্য, অনিয়ন্ত্রিত এবং অনিরাপদ যৌন মিলনেও এ রোগের সংক্রমণ হয়ে থাকে৷ অর্থাৎ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এইডস রোগের সঙ্গে এবোলার মিল রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পশ্চিম আফ্রিকায় এবোলা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার প্রধান কারণ উড়ন্ত খ্যাঁকশিয়াল৷ এই প্রাণীটি ভাইরাসটি বহন করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ এমনকি সংক্রমিত প্রাণীটি যখন ফলমূল ও অন্যান্য প্রাণী খাচ্ছে, তখন সেসব খাদ্যের অবশিষ্ট অংশ থেকেও ছড়িয়ে পড়ছে এবোলা৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
সংক্রমণের ঝুঁকি
তার মানে শুধু মানুষ থেকে মানুষে নয়, মানুষ যখন এবোলায় আক্রান্ত প্রাণীর রক্ত বা মাংসের সংস্পর্শে আসে, তখনও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে৷ বরং সেক্ষেত্রে ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি বলে জানান চিকিৎসকরা৷ তাই খ্যাঁকশিয়াল থেকে অন্য প্রাণী বা ফলমূল হয়ে সহজেই মানুষের মধ্যে এবোলা ভাইরাস তার বংশবৃদ্ধি করে৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যু
এবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর অবধারিত৷ সেজন্যই তো একে মহামারি বলে আখ্যা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
বড় সমস্যা
বলা বাহুল্য, আফ্রিকায় বন্য প্রাণী খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে৷ সব বাজারেই এ সব মাংস পাওয়া যায়৷ গবেষকদের ধারণা, এ ধরনের বন্য প্রাণীর মাংস থেকে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবোলা৷ তার সঙ্গে অনিরাপদ যৌন মিলন তো রয়েছেই!
-
মহামারি ইবোলা ভাইরাস
পরীক্ষামূলক ওষুধ এখনই নয়
এবোলা সংক্রমণ নিরাময়ের উপায় এখনো আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি৷ যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করার সময় এখনো আসেনি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ কারণ মার্কিন দুই স্বাস্থ্যকর্মীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগে তাঁদের উন্নতির ধরণে তারতম্য দেখা গেছে৷
লেখক: অমৃতা পারভেজ
অবশ্য বিমানে চড়ে মানুষ একদিনের মধ্যেই বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে যেতে পারে বলে তাঁদের কম্পিউটারের অনুমান যে ভুল প্রমাণিত হতে পারে তা-ও আগেভাগেই বলে রেখেছেন তাঁরা৷ পাশাপাশি স্বীকার করেছেন, বিশ্বের নানা দেশের বিমানবন্দরগুলোতে যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তা অত্যাবশ্যক৷
ব্রোকমান এবং হেলবিং অবশ্য মহামারী রোগের বিরুদ্ধে এর আগেও লড়েছেন৷ এইচওয়ানএনওয়ান বা সোয়াইন ফ্লু, ইকোলাই এবং সিভিয়ার রেসপিরেটরি সিনড্রম, অর্থাৎ সার্স নিয়েও কাজ করেছেন তাঁরা৷
রোগের বিস্তার রোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার সেই অভিজ্ঞতা জার্মানি আর সুইজারল্যান্ডের দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে অতি আত্মবিশ্বাসী করে তোলেনি৷ তাই উদ্ভাবিত কম্পিউটারটির সীমাবদ্ধতার দিকটিও তুলে ধরেছেন৷ ব্রোকমান বলেছেন, ‘‘আমাদের কম্পিউটারটি বেশ ভালো৷ তবে একটি জিনিস এটিতে নেই আর তা হলো ‘ফিডব্যাক'৷ এ বিষয়টিরও সন্নিবেশ ঘটানোর চেষ্টা করবো আমরা৷ তাতে অবশ্য কিছুটা সময় লাগবে৷''