কমলা হ্যারিস: অনেক প্রথমের এক নারী
কমলা হ্যারিস অনেক দিক দিয়েই ‘অ্যামেরিকার ইতিহাসে প্রথম’ হিসাবে নাম লিখিয়েছেন। প্রথম নারী এবং প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি হিসাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন তিনি। প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট কি তিনি হতে পারবেন?
অভিবাসীদের পরিবার
কমলা দেবী হ্যারিস ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ডোনাল্ড জে. হ্যারিস একজন বিখ্যাত মার্কিন-জ্যামাইকান বিজ্ঞানী। মা শ্যামলা গোপালন হ্যারিস একজন বিখ্যাত ভারতীয় বায়োমেডিক্যাল বিজ্ঞানী, যিনি স্তন ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করেছিলেন। এই ছবিটিতে ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে মায়ের ল্যাবে কমলা হ্যারিসকে দেখা যাচ্ছে।
মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক
বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর কমলা হ্যারিস (বামে) এবং তার ছোট বোন মায়া মায়ের সঙ্গেই থাকতেন।কমলার বয়স যখন ১২, তখন তার পরিবার ক্যানাডার মন্ট্রিলে চলে যায়। গোপালন হ্যারিস ২০০৯ সালে ক্যান্সারে মারা যান। ২০২০ সালে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন গ্রহণ করার সময় কমলা তার মায়ের সম্পর্কে বলেছিলেন, "তিনি ভারতীয় ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে এবং তা নিয়ে গর্বিত হওয়ার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেছেন।"
নাগরিক অধিকার আন্দোলন
হ্যারিসের বাবা-মা দুজনেই নাগরিক অধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। আত্মজীবনীতে কমলা লিখেছেন, বাবা-মায়ের এই অবস্থান তার নিজের কর্মজীবনে বড় প্রভাব ফেলেছে। ১৯৮২ সালের নভেম্বরের এই ছবিতে ১৮ বছর বয়সি কমলাকে ওয়াশিংটনের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।
ক্যালিফোর্নিয়ায় আইন বিষয়ে পড়াশোনা
১৯৮৬ সালে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর সান ফ্রান্সিসকোতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হেস্টিংস কলেজ অফ ল-তে পড়তে যান কমলা। ১৯৯০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার আলামেডা কাউন্টিতে ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসাবে কর্মজীবন শুরু হয় কমলার।
সান ফ্রান্সিসকোর শীর্ষ প্রসিকিউটর
২০০৪ সালে কমলা সান ফ্রান্সিসকোর প্রথম নারী ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি হিসাবে শপথ নেন। এই পদে থাকা প্রথম অকৃষ্ণাঙ্গ নারীও তিনি। তার শপথ গ্রহণের সময় তার মা (মধ্যে) তার হাতে ইউএস বিল অফ রাইটসের একটি অনুলিপি ধরে রাখেন। এই নথিটিতে সংবিধানের প্রথম ১০টি সংশোধনী রয়েছে এবং নথিটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও অধিকার এবং সরকারি ক্ষমতার সুস্পষ্ট সীমাবদ্ধতার নিশ্চয়তা দেয়।
জেলা অ্যাটর্নি থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল
২০১১ সালের জানুয়ারিতে কমলা ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের পদে আসীন হন। এই পদেও প্রথম নারী এবং প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি। মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে নেয়া কর্মসূচিকে সমর্থন জানানোর কারণে তাকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।
রাজনীতিতে প্রবেশ
২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট সিনেটের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন কমলা। নির্বাচনে তিনি জয়ীও হন। অ্যাটর্নি জেনারেলের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং তৎকালীন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছ থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে শপথ নেন। এই শপথ অনুষ্ঠানে তার স্বামী ডগলাস এমহফ তার পাশে বাইবেল হাতে দাঁড়িয়েছিলেন। ডগলাস এমহফ একজন বিনোদন খাতের আইনজীবী। তাদের বিয়ে হয়েছিল ২০১৪ সালে।
বাইডেনের মুখোমুখি
২০১৯ সালের শুরুর দিকে কমলা ঘোষণা দেন, ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দল থেকে প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন চাইবেন তিনি। ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স (মধ্যে) এবং সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ছিল তার দলীয় মনোনয়নের লড়াই। তবে পরে নাম প্রত্যাহার করে বাইডেনকে সমর্থন জানান তিনি। আগস্টে বাইডেন নির্বাচনে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে কমলার নাম ঘোষণা করেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে বিজয়ী
২০২০ সালের নভেম্বরে কমলা এবং বাইডেন জুটি ডেমোক্র্যাটদের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় নিয়ে আসেন। ছবিতে দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯ এর সময় ডেলাওয়ার রাজ্যের উইলমিংটনে ঐতিহাসিক জয় উদযাপন করছেন কমলা এবং বাইডেন।
রাজনীতিতে আরেকটি প্রথম
২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন কমলা হ্যারিস। এই পদে অধিষ্ঠিত প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিও তিনি। ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থকদের ইউএস ক্যাপিটল বিল্ডিং আক্রমণের পর এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আয়োজন করা হয়েছিল।
অভিবাসন মোকাবিলায় কাজ
বাইডেন কমলাকে প্রথম যে কাজগুলোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল দক্ষিণ অ্যামেরিকা থেকে অভিবাসনের মূল কারণ অনুসন্ধান করা। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে ২০২১ সালের জুন মাসে গুয়াতেমালাসহ বিভিন্ন দেশ পরিদর্শন করেছিলেন তিনি। অনিয়মিত অভিবাসনের সমস্যাটি সমাধানে ব্যর্থ হওয়ায় বারবারই রিপাবলিকান পার্টি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে কমলাকে।
ইউক্রেন ও ন্যাটোর কট্টর সমর্থক
বাইডেনের মতোই কমলাও প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির একজন শক্তিশালী সমর্থক। রাশিয়ার পদক্ষেপকে "নিষ্ঠুর," "ভয়াবহ" এবং "ভয়ঙ্কর" হিসাবে বর্ণনা করে এসেছেন তিনি। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে কমলা ন্যাটো এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান সমর্থনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ট্রাম্পের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান তার।
গর্ভপাতের অধিকার রক্ষায় সোচ্চার
গর্ভপাতের ইস্যুতেও রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থানে কমলা হ্যারিস। ইউএস সুপ্রিম কোর্ট রো বনাম ওয়েড মামলার রায় বাতিল এবং ২০২২ সালের জুনে গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার বিলুপ্ত করার পর তিনি সন্তান জন্ম দেয়ার স্বাধীনতা নিয়ে প্রচারণা শুরু করেছিলেন। তরুণ ভোটারদের জন্য এই ইস্যুটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে অনেক রিপাবলিকান গর্ভপাতের অধিকার আরও সীমিত করতে চান।
২০২৪ নির্বাচনে কমলার সম্ভাবনা কতটুকু?
ডেমোক্র্যাটরা আগস্টে আনুষ্ঠানিকভাবে কমলাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে বেছে নিলে তার নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নেয়া এবং প্রচারণা চালানোর জন্য মাত্র ১০০ দিন হাতে থাকবে। রবিবার থেকে তিনি এরই মধ্যে তিনি অনেক ডেমোক্র্যাটের অনুমোদন এবং লাখ লাখ ডলার অনুদান পেতে শুরু করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, অশ্বেতাঙ্গ ভোট আকৃষ্ট করলেও বর্ণবাদী এবং যৌনতাবাদী মনোভাব তার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে।