1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবারো বিতর্কে অনুব্রত

১০ মে ২০১৮

বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ে না৷ নানারকম অশালীন, কটু মন্তব্যের জেরে অহরহ শিরোনামে আসেন তিনি৷ বিরোধী নেতা, পুলিশ বা নির্বাচন কমিশন কাউকেই রেয়াত করেন না বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ এবার রেয়াত করলেন না শঙ্খ ঘোষকেও৷

https://p.dw.com/p/2xUik
প্রতীকী ছবিছবি: AP

পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে শোরগোল ক্রমেই বাড়ছে৷ একের পর এক আসনে বিরোধীরা মনোননয়ন জমা দিতে পারেননি৷ ৪২টা জেলা পরিষদের মধ্যে ৪১টা তেই প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি৷ আর বাকি একজনও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন৷ কারণ তৃণমূলের ডাকাবুকো জেলা সভাপতি অনুব্রত বলেছিলেন, বিরোধীরা মনোনয়ন জমা দিতে বেরোলেই রাস্তায় দেখবেন উন্নয়ন! সেই ‘উন্নয়ন' কেই উদ্দেশ্য করে প্রতিবাদী ও মুক্তচিন্তার বিদগ্ধ কবি শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন, ‘রাস্তা জুড়ে খড়গ হাতে/দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন৷'

তাই এবার অনুব্রত মণ্ডলের কটুক্তির টার্গেট হলেন বর্ষীয়ান এই কবি৷

শঙ্খ ঘোষ চিরকালই প্রতিবাদী বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে অগ্রগণ্য৷ বহুবার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে পথে মিছিল করেছেন৷ নন্দীগ্রাম থেকে হলফিলের সাম্প্রদায়িক হানাহানি সব ক্ষেত্রেই তিনি বাংলার প্রতিবাদের মুখ৷

পুরুলিয়ার জনসভার উপচে পড়া ভিড়ে অনুব্রত কবিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘বড় বড় কথা বলছে এক কবি৷ এ কোন কবি? আমরা তো কবি বলতে জানতাম রবীন্দ্রনাথ, নজরুল৷ এ কোন নতুন কবি উঠে এসেছে? যে আমার উন্নয়ন নিয়ে কথা হলছে৷''

বীরভূমের পাড়ুইয়ের সাগর ঘোষ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এই অনুব্রত নিজে হুমকি দেওয়ার রাজনীতিতেও যথেষ্ট বলীয়ান৷ এমনকি ২০১৩ এর পঞ্চায়েত ভোটে পুলিশকে বোমা মারতেও তিনি পিছপা হন না৷ এবারে পঞ্চায়েত ভোটের আগে পুরুলিয়ার জনসভায় নির্বাচনি বিধি ভেঙে তাঁর জন্য বাইক মিছিল হয়েছে৷ এ হেন করিৎকর্মা তৃণমূলের ‘সৎপাত্র' অনুব্রত উন্নয়নের ব্যাখাও দিয়েছেন পুরুলিয়ার মঞ্চে৷ তিনি বীরভূমে মনোনয়ন জমা দিতে বিরোধীদের বাধা দেননি, সেটা পরিষ্কার করে জানালেন৷ আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঢালাও উন্নয়নের জন্যই বীরভূমে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে অপারগ৷ জোর গলায় তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে৷

বিজেপির দিলীপ ঘোষও বেফাঁস এবং কুরুচিকর মন্তব্যে কম যান না৷ অতীতে তিনি যাদবপুরের আন্দোলনকারী ছাত্রী থেকে বুদ্ধিজীবী মহল এমনকি অমর্ত সেনকে নিয়েও কটু মন্তব্য করতে ছাড়েননি৷ তাই অনুব্রতর মতে, শঙ্খ ঘোষ তৃণমূল নিয়েই প্রতিবাদী কবিতা লেখেন, ওদিকে বিজেপির দিলীপ ঘোষ যখন ছাল-চামড়া ছাড়িয়ে নুন লঙ্কা মাখানোর কথা বলেন, তখন উনি কবিতা লেখেন না৷ মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত প্রিয় অনুব্রত ওরফে কেষ্ট বলেন, ‘‘শঙ্খ একটা পবিত্র জিনিস, সব পবিত্র কাজে শঙ্খ লাগে৷ তাই শঙ্খ ভুল করলে দেবতাদের অসম্মান হয়৷ সেই কারণেই বলেছি ওঁর নাম শঙ্খ রাখা উচিত হয়নি৷''

অতীতে অনুব্রতের বহু মন্তব্যে তাঁর কুরুচির পরিচয় পাওয়া গিয়েছে৷ শঙ্খ ঘোষের কবিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে এবার তিনি তাঁর জ্ঞানবুদ্ধি এবং প্রজ্ঞা নিয়ে নিজেই প্রশ্নচিহ্ন রাখলেন৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় অবশ্য এ নিয়ে সরস মন্তব্যও জুটছে অনুব্রতর৷ কেউ বলছেন, তিনি যত কম কথা বলেন, ততই নাকি দল, দেশ এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মঙ্গল হবে৷ এমন মন্তব্যের পাশে  কেউ আবার বর্ষীয়ান কবির অপমান নিয়েও সরব হয়েছেন৷

এদিকে অনুব্রত শঙ্খ ঘোষের বিরুদ্ধে তোপ দেগে দলকে যে অস্বস্তিতে ফেলেছেন, তাতে সন্দেহ নেই৷ যুক্তি যতই ছেঁদো হোক না কেন, আপাতত তৃণমূলের দলীয় মহল প্রত্যেকবারের মতোই অনুব্রতর মন্তব্য ঘিরে কিছু না কিছু খাড়া করার চেষ্টা করবে বলে অনুমান করা যায়৷ ডয়চে ভেলের তরফ থেকে কয়েকদিন আগে তৃনমূল নেতা নির্বেদ রায়ের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে কথা বলা হয়েছিল৷ তাঁর মতে, বেশিরভাগ নেতাই উসকানিমূলক মন্তব্যে স্থির থাকতে পারেন না৷ উলটোপালটা কিছু বলে ফেলেন৷ দলীয় অনুশাসন মেনে চলা সম্ভব হয়ে ওঠে না৷

কিন্তু শঙ্খ ঘোষের কবিতা অনুব্রতকে কোন উসকানি দিল? দলীয় বা রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে কোনোরকম সুড়সুড়ি কি তবে অনুব্রতের সহ্য হলো না? এটা কি তারই প্রতিফলন! 

পিএস/ডিজি