1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কবিতার জন্য আবার হেনস্থার শিকার কবি

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১৪ জানুয়ারি ২০১৯

আসামের বাঙালি-অধ্যুষিত শিলচর শহরে একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কবি শ্রীজাত৷ সেখানে তাঁর অনুষ্ঠানে বাগড়া দিলো হিন্দুত্ববাদীরা৷

https://p.dw.com/p/3BVcx
Indien Protest für Redefreiheit in Kalkutta
ফাইল ফটোছবি: DW/S. Bandopadhyay

কবিতার নাম ‘‌অভিশাপ'‌৷ বছর দুয়েক আগে ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে কবিতাটি পোস্ট করেন কবি শ্রীজাত৷ এই কবিতার শেষ দু'টি পংক্তি ছিল:‌ আমাকে ধর্ষণ করবে যদ্দিন কবর থেকে তুলে— কন্ডোম পরানো থাকবে, তোমার ওই ধর্মের ত্রিশূলে!‌

এখনকার ভারতে ধর্মের নামে যে বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে সমাজে, সংস্কৃতিতে, তার বিরুদ্ধেই ছিল কবির ওই প্রতিবাদী পংক্তি৷ যে কবিতার শুরুর লাইন ছিল ‘‘‌সময়ে ওষুধ, নইলে বেড়ে যায় সবরকম রোগই, ভিখ পেতে পেতে তুমি রাজা হয়ে ওঠো, গেঁয়ো যোগী'‌৷ কটাক্ষ করা হয়েছিল ‘‌প্রতি নির্বাচনে আমরা শতাব্দীপিছনে ফিরে যাই৷'‌ বলা বাহুল্য যে, দেশে ক্ষমতাসীন হিন্দুত্ববাদী বিজেপির এই কবিতা, এই কটাক্ষ পছন্দ হয়নি৷ সুতরাং ত্রিশূলে কন্ডোম পরানোর কথা বলে আসলে হিন্দুত্বেরই অপমান করা হয়েছে, এই অভিযোগে তেড়ে ওঠে বিজেপি সমর্থকেরা এবং বিতর্ক ছড়ায় রাজ্য জুড়ে৷ কবির নামে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়, হুমকি ফোন আসতে থাকে তাঁর কাছে লাগাতার, এবং কবির বাড়ির বাইরে পুলিশ পাহারা বসাতে হয়৷

‘ অতিথি, অভ্যাগত, দর্শক আমাকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছেন’

সেই বিতর্ক এবং বিরুদ্ধতারই যেন পুনরাবৃত্তির চেষ্টা হলো অসমের শিলচরে৷ বাংলাভাষী কাছাড় জেলার শিলচর শহরে একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন শ্রীজাত৷ সেখানে একদল লোক অনুষ্ঠানের কাজে বাগড়া গিয়ে মঞ্চে উঠে পড়ে এবং দু'‌বছর আগে ওইরকম একটি লাইন কেন লিখেছিলেন, সেই জবাবদিহি চায় শ্রীজাতর কাছে৷ তখন ওই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এবং দর্শক ও অন্য অতিথিরা প্রতিবাদ করে এগিয়ে আসেন এবং বলেন, ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ এমন একটি প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য নয়৷ এরপর উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরাসরি বচসায় জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভ দেখাতে আসা লোকজন এবং বিষয়টা হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়৷ শ্রীজাত জানাচ্ছেন, যতক্ষণ না পুলিশএসে তাঁকে সভাস্থল থেকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যায়, তাঁকে কার্যত আগলে দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয় বাঙালিরা৷ তাঁরা বারবারই তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং বলেছেন, এটা শিলচরের আসল রূপ নয়৷ এই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে শ্রীজাত ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‌‘‌যাঁরা অতিথি ছিলেন, অভ্যাগত ছিলেন, সাধারণ দর্শক ছিলেন, তাঁরাও কিন্তু আমাকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করেছেন৷ প্রত্যেকে৷ এবং যতক্ষণ না আমি সেখান থেকে গেছি, অধিকাংশ মানুষই আমাকে ছেড়ে বেরোননি৷

'‌'‌শ্রীজাত জানাচ্ছেন, যাঁরা অনুষ্ঠানে বাগড়া দিতে এসেছিলেন, তাঁরা দুপুর থেকেই একটা ফেসবুক পোস্ট দিচ্ছিলেন, শিলচরের জেলাশাসকের কাছেও লিখিত আবেদন দিয়েছিলেন যে, শ্রীজাত'র মতো মানুষকে শিলচরে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যাবে না৷ এদিকে সোশাল মিডিয়াতেই এক সমান্তরাল প্রচার শুরু হয়েছে যে, পুরো বিক্ষোভের ঘটনাটাই নাকি বানানো৷ শ্রীজাত খবরে থাকতেই নাকি গোটা ব্যাপারটা সাজিয়েছেন৷ এই করে কবিতার বিক্রি বাড়তে পারে, কিন্তু সত্যিকারের কবিতা লেখা যায় না!‌ এই সন্দেহপ্রবণ অভিযোগকারীদের উদ্দেশে শ্রীজাত বলছেন, ‘‌‘তাঁদের প্রতি আমার একটাই বার্তা যে, তাঁরা যদি এই একটা সন্ধে, একটা রাত, যেটা আমরা বিনিদ্র কাটাচ্ছি এবং শহর থেকে অনেক দূরে, এবং এই শহরে আমার স্ত্রী, আমার মা রাত জাগছেন না খেয়ে, সেইটা যদি তাঁরা কাটাতে পারেন, তার পরে তাঁদের কাছ থেকে কথাগুলো আমি শুনতে পারি৷'‌'‌

কলকাতায় শিলচরের ঘটনায় প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন বর্ষীয়ান কবি শঙ্খ ঘোষ, জয় গোস্বামী৷ কবি সুবোধ সরকার জানিয়েছেন, ২ ফেব্রুয়ারি আসাম সাহিত্য সভায় তিনি যাবেন৷ সেখানে প্রতিবাদ হিসেবে শ্রীজাত'র কবিতা পড়বেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান