ওয়ানাড়ে নিশ্চিহ্ন দুইটি গ্রাম, মৃত ৩০৯, এখনো নিখোঁজ শতাধিক
প্রচণ্ড বৃষ্টির পর প্রবল ধস। দুটো গ্রাম কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। রাস্তাঘাট, সেতু সব ভেসে গেছে। কেরালার ওয়ানাড়ে।
নিশ্চিহ্ন সবুজ, এখন শুধুই কাদামাটির স্রোত
এটাই এখন ওয়ানাড়ের ছবি। বৃষ্টি ও ধসের পর পুরো এলাকা বদলে গিয়েছে। একসময়ের চা-বাগান, গাছে ভরা সবুজ পাহাড়ি এলাকায় শুধু কাদামাটির স্রোত ও বৃষ্টির জলের তাণ্ডব। যে অপরূপ প্রাকৃতিক শোভা দেখতে পর্যটকরা ভিড় জমাতেন, সেখানে এখন শুধুই ধ্বংসের ছবি। ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবের কাছে, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কাছে এখনো অসহায় মানুষের ছবি ফুটে উঠেছে এখানে।
মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে
ওয়ানাড়ে প্রাকৃতিক তাণ্ডবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৮। এখনো ভেঙে পড়া বাড়ি ও ধ্বংসস্তূপের তলায় অনেকে চাপা পড়ে আছেন। প্রচুর মানুষ এখনো নিখোঁজ। ফলে শেষপর্যন্ত মৃতের সংখ্যা কত দাঁড়াবে তা বোঝা যাচ্ছে না।
৪০টি দল
ভারতীয় সেনা, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ৪০টি উদ্ধারকারী দল কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি দলে আছে তিনজন করে স্থানীয় মানুষ এবং একজন বনদপ্তরের কর্মী। ছয়টি এলাকায় তারা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। তাদের সাহায্য করছে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার।
খুবই কঠিন পরিস্থিতি
পরিস্থিতি খুবই কঠিন। যে জায়গায় ধস নেমেছে, সেখানে কোনো রাস্তাঘাট আর নেই। নদীর সেতু ভেসে গেছে। এখনো মাঝেমধ্যে বৃষ্টি পড়ছে। তারমধ্যেই কোনোক্রমে দুর্গত জায়গায় গিয়ে পৌঁছাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। বের করে নিয়ে আসছেন জীবীতদের। উদ্ধার করছেন মৃতদেহ।
চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে
কয়েকঘণ্টার মধ্যে ভেসে গেছে সবকিছু। বাড়ি নেই। বাড়ির জিনিসগুলি এদিকে ওদিকে কাদার মধ্যে পড়ে আছে। দেখে কে বলবে, এখানে আগে কোলাহলমুখর, সুন্দর গ্রাম ছিল। মানুষের কলকাকলিতে তা ভরে থাকতো। এখন শুধু ধ্বসের ছবি।
দুমড়ে-মুচড়ে পড়ে আছে গাড়ি
কত গাড়ি যে ভেসে গেছে তার হিসাব নেই। নদীর ধারে বা কাদার মধ্যে দেখা যাচ্ছে দুমড়ানো গাড়ি। ধসের ভয়ংকর শক্তি সব ধ্বংস করে দিয়ে চলে গেছে।
থেকে গেছে এই ছবি
বাড়ির অল্প কিছুটা দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে কাদার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে এই ছবি। সুখী সময়ের ছবি। চারপাশে ধ্বংসের মধ্যে পড়ে আছে এই ছবিটি, অতীতের সাক্ষী হয়ে।
যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ
এর মধ্যেই যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে উদ্ধার ও অন্য কাজ হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়াররা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি সেতু তৈরি করে দিয়েছেন। প্রতিদিনই তারা আটকে থাকা মানুষের কাছে পৌঁছচ্ছেন। তাদের উদ্ধার করে হেলিকপ্টারে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছেন। এক হাজারেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করেছেন তারা।
হাসপাতালের ছবি
ধসের পর ২১৯জন মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানেও দ্রুত তাদের সুস্থ করে তোলার কাজ চলছে। ঘটনাস্থলের কাছের সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভরে গেছে আহত মানুষে। প্রতিদিনই সেই সংখ্যা বাড়ছে।
ভারতে ধসপ্রবণ এলাকা
আইআইটি মাদ্রাজ একটা সমীক্ষা করে দেখেছে, ভারতের ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ এলাকা ধসপ্রবণ। আর চার দশমিক ৭৫ শতাংশ এলাকা খুবই ধসপ্রবণ। হিমালয়ের মধ্যে সিকিম সবচেয়ে ধসপ্রবণ, আর হিমালয়ের বাইরে কেরালা সবচেয়ে ধসপ্রবণ রাজ্য। কেরালার ১৪ শতাংশ এলাকা ধসপ্রবণ।
ইসরোর তথ্য
২০২৩ সালে ইসরো ভারতের ধসপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করে। তাতে দেখা যাচ্ছে, হিমালয় বাদ দিলে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা সবচেয়ে ধসপ্রবণ। ভারতে ধসের অনেকগুলি কারণ আছে। পরিবেশগত কারণের পাশাপাশি মানুষের তৈরি কারণও আছে।
কেরালায় কেন এই ধস?
কোচিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসিএআরআরের ডিরেক্টর এস অভিলাস ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, কেরলে এই ধসের কারণ গাছ কেটে চাষের জমি করা। কেরালায় যে জায়গায় ধস হচ্ছে, সবই প্ল্যানটেশন এলাকা। বড় গাছ মাটিকে ধরে রাখে। সেগুলি কেটে চা, কফির চাষ হচ্ছে। ফলে এরকম ধস নামছে।
প্রবল বৃষ্টি
এবার গত দুই সপ্তাহে ওয়ানাড়ে ৫০ থে্কে ৭০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মাটির উপরিস্তর আলগা হয়ে গেছে। তারপর মিনি ক্লাউডবার্স্ট বা ছোট আকারে মেঘফাটা বৃষ্টি হলেই ধস নামছে।
ধসের রাজনীতি
ভারতে সব জিনিস নিয়েই রাজনীতি হয়। ধস নিয়েও হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে জানিয়েছেন, কেরালাকে আগেই ধসের সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছিল। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জানিয়েছেন, কেন্দ্র থেকে সতর্কবার্তা এসেছিল, তবে সেটা ধসের দুইঘণ্টা পরে। ধসের দায় নিয়ে বিজেপি ও সিপিএম নেতাদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে। বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী ওয়ানাড়ে গিয়ে দুর্গত মানুষের সঙ্গে দেখা করেছেন।