শ্রমিক অধিকার আইন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা বাতিল এবং তৈরি পোশাক শিল্পে কাজের পরিবেশ, শ্রমিক নিরাপত্তা এবং শ্রমিক অধিকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ার পর, অবশেষে বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের আইন করা হয়েছে৷ সোমবার সংসদে এই আইন পাশ হয়৷ এবার রাষ্ট্রপতি সম্মতি দেয়ার পর এ আইন কার্যকর হবে৷
শ্রম মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইস্রাফিল আলম এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, রাষ্ট্রপতির সম্মতি একটি আনুষ্ঠানিকতা মাত্র৷ তিনি জানান, এই আইনের ফলে কোনো কারখানার পোশাক শ্রমিকদের শতকরা ৩০ ভাগ এক হলেই ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবেন৷ আর কোনো শ্রমিকের চাকরির মেয়াদ নয় মাস হলেই তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী হিসেবে বিবেচিত হবেন৷ এছাড়াও, শ্রমিকরা পাবেন বীমা সুবিধা৷
ইস্রাফিল আলম এমপি বলেন, এই আইনের ফলে শ্রমিকরা সংগঠিতভাবে তাঁদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য মালিক পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারবেন৷ এবং মালিকপক্ষ সেই আলাপ-আলোচনায় অংশ নিতে বাধ্য থাকবেন৷ শুধু তাই নয়, এ আইনে ১৫ দিনের নোটিসে ধর্মঘটের অধিকারও দেয়া হয়েছে শ্রমিকদের৷ ইস্রাফিল আলম মনে করেন, এতে পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ কমবে৷ বন্ধ হবে দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য হটকারি কর্মসূচি৷
তবে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার সলিডারিটির প্রধান কল্পনা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, আইনে শ্রম পরিদপ্তরের নিবন্ধকের সন্তুষ্টির ওপর ট্রেড ইউনিয়নের নিবন্ধন নির্ভর করবে৷ যা আসলে মালিকদের পক্ষেই গেছে৷ যদি শুধু প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র দাখিল নিবন্ধনের শর্ত হতো, তাহলে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সহজ হতো৷ কিন্তু এখন নিবন্ধককে মালিকরা প্রভাবিত করতে পারবেন৷ অন্যদিকে, সংগঠিত হতে গেলে মালিক পক্ষ যে হয়ারানি করে তা প্রতিরোধে আইনে কোনো ব্যবস্থাও নেই৷ আর শতকরা ৩০ ভাগ শ্রমিকের স্বাক্ষর সংগ্রহ অনেক সময় সাপেক্ষ এবং কঠিন৷ তাই এই হার আরো কম হওয়া উচিত ছিল৷
তাছাড়া, ইপিজেড-এ এখনো ট্রেড ইউনিয়নের ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়৷ তাই এই আইনের আরো সংশোধন দাবি করেন কল্পনা আক্তার৷
বাংলাদেশে সাড়ে চার হাজার পোশাক কারখানায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন৷ তাঁদের ৯০ ভাগই মহিলা৷ বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ৷ তাজরীন ফ্যাশানস এবং রানা প্লাজার মর্মান্তিক ঘটনার পর, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে৷ তাই ইস্রাফিল আলম এমপি মনে করেন, নতুন এই আইনের কারণে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা সম্পর্কে সারা বিশ্বে ইতিবাচক বার্তা যাবে৷