এয়ার ট্যাক্সি চালু হতে আর বেশি দেরি নেই
১৪ অক্টোবর ২০২৪অনেক স্টার্টআপ কোম্পানি বিদ্যুতচালিত ট্যাক্সির কনসেপ্ট ও মডেল সৃষ্টি করছে৷ এমন যানের বাজারও বাড়ছে, অনেক কোম্পানি প্রতিযোগিতায় নেমেছে৷ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ টোমাস এম ফ্রিসাখার মনে করেন, ‘‘আমার মতে, কয়েক ডজন থেকে শুরু করে হয়তো একশোরও বেশি কোম্পানির মধ্যে কয়েকটি টিকে যাবে৷''
মার্কিন বিমানবাহিনী অদূর ভবিষ্যতে পরিবহণের মাধ্যম হিসেবে এয়ার ট্যাক্সি চালু করার পরিকল্পনা করছে৷ এশিয়ার গাড়ি কোম্পানি হিউন্ডে ও এক্সপেং-ও সেই ব্যবসায় পা রাখতে চায়৷ তারা ইলেকট্রিক গাড়িতে একই ধরনের ব্যাটারি ব্যবহার করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক এয়ার ট্যাক্সি কোম্পানি ২০২৫ সালে নিউ ইয়র্ক শহর থেকে নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে যাত্রী পরিবহণ শুরু করতে পারে৷ জার্মানির অটোমোবাইল ক্লাব এডিএসি আকাশপথে উদ্ধারকাজের জন্য ভোলোকপ্টার ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে৷
ভোলোকপ্টার কোম্পানির কর্মকর্তা অলিভার রাইনহার্ট বলেন, ‘‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের আকাশযানের দাম হেলিকপ্টারের তুলনায় অনেক কম৷ ধারাবাহিক রক্ষণাবেক্ষণের খরচও কম৷''
আকাশপথে পরিবহণের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিধিনিয়ম অত্যন্ত কড়া৷ কোনো আকাশযান উৎপাদন শুরুর আগে অনেক পরীক্ষায় সেটিকে পাশ করতে হয়৷ দুর্ঘটনার ঝুঁকি একশো কোটি ফ্লাইট আওয়ার্সে মাত্র এক বার৷ অলিভার রাইনহার্ট দাবি করেন, তাঁদের নিরাপত্তার বিধিনিয়মও হুবহু ইউরোপে যে কোনো যাত্রীবাহী বিমানের মতো৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভিয়েশন সেফটি এজেন্সি ইউরোপের আকাশে বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে৷ এয়ার ট্যাক্সি চালানোর জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ পাইলটদের ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে৷ তাদের নতুন সার্টিফিকেশন ও প্রশিক্ষণ কোর্স করতে হচ্ছে৷ ইএএসএ প্রধান জুসেপে স্কানাপেভো বলেন, ‘‘আমরা যে সব বিধিনিয়ম প্রকাশ করেছি, তার আওতায় আমরা ধরে নিচ্ছি যে বিমান বা হেলিকপ্টরারের জন্য কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স আছে, এমন ব্যক্তি সেই যান চালাবেন৷ তার জন্য নির্দিষ্ট জ্ঞান, দক্ষতা ও ক্ষমতার প্রয়োজন৷''
ভোলোকপ্টারই প্রথম কোম্পানি হিসেবে পাইলট প্রশিক্ষণের অনুমোদন পেয়েছে৷ এখন তারা এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থির করছে৷ অলিভার রাইনহার্ট বলেন, ‘‘আমাদের কমার্শিয়াল লাইসেন্স পাওয়া এমন পাইলটের প্রয়োজন, যিনি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে যাত্রীবাহী বিমান অথবা হেলিকপ্টার চালিয়েছেন৷ তাঁকে শুধু নতুন যান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷''
প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো, তুষারপাত, বজ্রবিদ্যুতসহ বৃষ্টি ও উত্তাল বাতাসের মতো জরুরি পরিস্থিতিতেও পাইলটকে এয়ার ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ প্রযুক্তিগত সমস্যা ও সিস্টেমে গোলোযোগও সামলাতে হবে৷ পাইলটদের জন্য টেকঅফ ও ল্যান্ডিং-ও বিশেষ স্ট্রেসের কারণ৷ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ টোমাস এম ফ্রিসাখার মনে করিয়ে দেন, যে পরিসংখ্যান অনুযায়ী টেকঅফ ও ল্যান্ডিং পর্যায়েই সবচেয়ে বেশি অঘটন ঘটে৷
এয়ার ট্যাক্সি সত্যি বড় আকারে চালু হলে সম্পূর্ণ নতুন এয়ার রুট এবং নতুন ট্রাফিক বিধিনিয়মের প্রয়োজন হবে৷ ইউরোপের আকাশে নতুন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম হিসেবে ইউ-স্পেস সিস্টেম কার্যকর করা হচ্ছে৷ স্কানাপেভো বলেন, ‘‘ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে আমরা কিছু নতুন নীতি তুলে ধরছি৷ কিন্তু ‘হাই স্পেস' প্রত্যেক সদস্য দেশের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে৷''
প্রশ্ন হলো, বাস্তবে গোটা বিষয়টা ঠিক কেমন হবে এবং কীভাবে কাজ করবে? জার্মান এয়ারোস্পেস সেন্টারের বিয়াংকা শুখার্ট বলেন, ‘‘উড়াল স্থির হলে ভার্টিপোর্টে এয়ার ট্যাক্সি অপেক্ষা করবে৷ সরাসরি সেই যানে উঠে আকাশপথে একই শহর, পাশের শহর অথবা পছন্দ অনুযায়ী অন্য কোথাও চলে যাওয়া যায়৷''
বাজারে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷ ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০০টি শহরে এয়ার ট্যাক্সিব্যবহার করা হতে পারে৷
ফ্রানৎসিস্কা বিল/এসবি