নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাটে বল্লভভাই প্যাটেলের বিশাল মূর্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে ঔৎসুক্য ছিল, কিন্তু আবেগের বিস্ফোরণ বা আসুমদ্র হিমাচলজুড়ে তা নিয়ে আলোচনা, সেই মূর্তি দেখতে যাওয়ার ভয়ংকর তাগিদ একটা অংশের মানুষের মধ্যে হয়তো ছিল, কিন্তু তা বাংলাদেশে পদ্মা সেতু নিয়ে আলোড়নের ধারেকাছে যায় না৷ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ওই মূর্তি নিয়ে যে ভয়ংকরভাবে আলোড়িত হয়েছিলেন, তা নয়৷ তার উপর বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি বানিয়েছিল লারসেন অ্যান্ড টুবরো৷ তারা কাস্টিংয়ের জন্য চীনা সংস্থার সহায়তা নিয়েছিল৷ তাই ‘আমরাও করে দেখাতে পারি'-র মতো মনোভাব দেশকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়নি৷
তাছাড়া ভারত দীর্ঘদিন ধরেই নিজস্ব প্রযুক্তিতে নানা ধরনের বড় বড় নির্মাণ কাজ করেছে৷ স্বাধীনতার পর রাশিয়ার সাহায্যে বোকারো ইস্পাত কারখানা হয়েছিল৷ ভাকরা নাঙ্গাল হয়েছে৷ জওহরলাল নেহরু বলেছিলেন, এগুলিই ভারতের মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গুরুদ্বার৷ নতুন ভারতের অভ্যুত্থানের ছবি৷ তারপর অনেকগুলি দশক পেরিয়ে এসেছে ভারত৷ এখন আর এরকম কোনো নির্মাণ দেশজুড়ে আবেগের বন্যায় মানুষকে ভাসায় না৷ সেতু থেকে শুরু করে ভবন, মূর্তি, সড়ক সবই দেশীয় প্রযুক্তিতে দেখতে ভারতের মানুষ অভ্যস্ত৷
-
ইন্টারনেটে সার্চে পদ্মা সেতু
সময়ের রেখাচিত্র
পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছিল আট বছর আগে৷ এই সময়ে ইন্টারনেটে মানুষের আগ্রহের চিত্র দেখা যাচ্ছে ‘গুগল ট্রেন্ডসের’ গ্রাফে৷ সেতুটি নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন চলতি জুনে উদ্বোধনকে ঘিরে৷ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে৷ সেই সময় সেতুটিতে সর্বশেষ স্প্যান বসে৷ দিনের হিসাবে ২৫ জুন উদ্বোধনের দিনই এই সেতুকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ ছিল৷ পরের দিনই তা অর্ধেকে নেমে আসে৷
-
ইন্টারনেটে সার্চে পদ্মা সেতু
যেসব দেশ থেকে
স্বাভাবিকভাবেই পদ্মা সেতু নিয়ে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশেইা৷ আট বছরের চিত্রে ইন্টারনেট সার্চে এরপরের অবস্থানে আছে মালদ্বীপ, কাতার, ওমান, বাহরাইন৷ তবে গত এক মাসে বাংলাদেশের পরে কাতার, পাকিস্তান, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পদ্মা সেতু নিয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়েব সার্চ করা হয়েছে৷
-
ইন্টারনেটে সার্চে পদ্মা সেতু
আগ্রহের বিষয়বস্তু
গত আট বছরে গুগলে ব্যবহারকারীরা সবচেয়ে বেশি জানতে চেয়েছেন পদ্মা সেতুর স্প্যান নিয়ে৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ‘পদ্মা ব্রিজ প্যারাগ্রাফ’, শিক্ষার্থীদের কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ ছিল৷ ‘পদ্মা ব্রিজ পিলার’, ‘টোলের হার’ নিয়েও জানতে চেয়েছেন ব্যবহারকারীরা৷ অন্যদিকে উদ্বোধন, সরাসরি সম্প্রচারের ভিডিও নিয়ে বেশি তথ্য খুঁজেছেন তারা গত একমাসে৷ বাংলায় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য, পিলার, খরচ, স্ট্যাটাস, উক্তি খুঁজেছেন মানুষ৷
-
ইন্টারনেটে সার্চে পদ্মা সেতু
খবর সন্ধান
দেশ ভিত্তিতে আট বছরে পদ্মা সেতু নিয়ে গুগলে সবচেয়ে বেশি খবর খোঁজ করা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে৷ এরপর বেশি সন্ধান করা হয়েছে নেপাল থেকে৷ তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মী অবস্থান করা দেশ সৌদি আরব৷ চতুর্থ ও পঞ্চম অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য ও ক্যানাডা৷ গত একমাসে বাংলাদেশের বাইরে পদ্মা সেতু সংক্রান্ত সবচেয়ে বেশি খবর খুঁজেছেনে মানুষ মালয়েশিয়া, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য ও ভারত থেকে৷
-
ইন্টারনেটে সার্চে পদ্মা সেতু
ভারতের দুর্গাপুর
গত একমাসে ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাজ্যগুলো থেকে এই সেতু নিয়ে সবচেয়ে বেশি গুগল সার্চ হয়েছে৷ র্শীষে আছে বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত ত্রিপুরা৷ এরপর রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম ও অরুণাচল প্রদেশ৷ আগ্রহের শীর্ষে ছিল পদ্মা সেতুর টোল হার৷
-
ইন্টারনেটে সার্চে পদ্মা সেতু
ইউটিউবে মাওয়া শীর্ষে
গুগল ট্রেন্ডস অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নিয়ে গত আট বছরে ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি ভিডিও খোঁজা হয়েছে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে, যে স্থানটি পদ্মা সেতুকে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে যুক্ত করেছে৷ এরপর সবচেয়ে বেশি ভিডিও অনুসন্ধান হয়েছে বরিশালের আটিপাড়া থেকে৷ তারপরে রয়েছে বাগেরহাট, মাগুরা, রাজশাহী৷ গত একমাসের চিত্রে শীর্ষে ছিল ঝালকাঠি৷
-
ইন্টারনেটে সার্চে পদ্মা সেতু
কোটি কনটেন্ট!
গুগলের ওয়েব সার্চে বাংলায় ‘পদ্মা সেতু’ লিখে অনুসন্ধান করলে মোট ৯১ লাখ কনটেন্ট পাওয়া যায়৷ সংবাদ ফলাফল পাওয়া যায় প্রায় ৩০ লাখ৷ এছাড়া ইংরেজিতে ‘Padma Bridge’ লিখে ওয়েব সার্চেও প্রায় ৮৬ লাখের উপরে কনটেন্ট পাওয়া যায়৷ সংবাদ পাওয়া যায় প্রায় দুই লাখ ৭৭ হাজার৷
-
ইন্টারনেটে সার্চে পদ্মা সেতু
সবচেয়ে বেশি সংবাদ!
বিশ্বের দীর্ঘতম সেতু চীনের ডানিয়াং-কুনসান গ্র্যান্ড ব্রিজ৷ গুগলের ওয়েবে ইংরেজিতে এই সেতুটির নাম দিয়ে সার্চে মোট দুই কোটি কনটেন্ট পাওয়া যায়৷ তবে এই সেতু নিয়ে সংবাদ কনটেন্ট পাওয়া যায় মাত্র ১২০০ টি৷ ভারতের দীর্ঘতম সেতু ঢোলা সাদিয়া সেতু বা ভূপেন হাজারিকা সেতু-র ওয়েব সার্চে প্রায় ৯০ হাজার কনটেন্ট পাওয়া যায়, সংবাদ দেখা যায় প্রায় দুই হাজার৷ সেই হিসাবে পদ্মা সেতু নিয়ে সংবাদ হয়েছে কয়েকগুণ বেশি৷
কলকাতায় যখন হুগলি নদীর উপর সুদৃশ্য বিদ্যাসাগর সেতু তৈরি হলো, তখনো এরকম উন্মাদনার ছবি কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গে দেখা যায়নি৷ ২০ বছর ধরে কাজ চলার পর বিদ্যাসাগর সেতু উদ্বোধনের পর কিছু মানুষ দেখতে গিয়েছেন, ছবি তুলেছেন, এইমাত্র৷ অথবা ভারতে অন্যতম লম্বা রেল-রোড ব্রিজ বগিবিলের কথাই ধরা যাক৷ ব্রক্ষ্মপুত্র নদের উপর পাঁচ কিলোমিটার লম্বা সেতু, যা আসাম ও অরুণাচলকে যুক্ত করছে, তা নিয়েও সেভাবে মানুষ আলোড়িত হলো কই! পাটনায় গঙ্গার উপর সেতু নিয়ে বিহার কিছুটা উদ্বেলিত ছিল, কিন্তু বাকিরা নয়৷ এমনকী ফারাক্কা যখন হয়েছিল, তখন উত্তরবঙ্গের মানুষ অসম্ভব খুশি ছিলেন কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের মানুষের খুব বেশি হেলদোল ছিল না৷
ভারতের ক্ষেত্রে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ, প্রায় প্রতিটি রাজ্যে মানুষের ভাষা, পোশাক, খাবার, গানবাজনা, আচার-আচরণ সবই বদলে যায়৷ এক রাজ্যের মধ্যে বিভিন্ন জেলায় তা হয়৷ বাবার চাকরির জন্য আমি যখন প্রথম বাঁকুড়া যাই, তখন স্কুলে কিছু শিক্ষকের ভাষা বুঝতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যেত৷ বন্ধুরা বুঝিয়ে না দিলে বুঝতে পারতাম না৷ সেখানেও ডায়লেক্ট আলাদা, খাবার আলাদা, মানুষজনের অভ্যাস আলাদা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আলাদা, ফলে তাদের আবেগের বিষয়ও আলাদা হতে বাধ্য৷
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে
বলিউড ও ক্রিকেট বাদ দিলে সেটাই হয়৷ ক্রিকেটের আবেগে, বলিউডের কোনও সিনেমা বা নায়ক-নায়িকাকে নিয়ে উন্মাদনায় গোটা ভারত এক হয়ে যায়৷ ক্রিকেট মাঠের সেই ছবি আবার ফুটবল, হকি, কুস্তি, শুটিংয়ে নেই৷ খুব বড়সড় সাফল্য এলে অন্য কথা, না হলে কীই বা এসে গেল! যে নীরজ চোপড়া অলিম্পিকে জ্যাভলিন ছুঁড়ে সোনা নিয়ে এলেন, তিনি যখন দেশে ফিরলেন, তাকে দেখতে রাস্তায় রাস্তায় মানুষের ঢল নামেনি৷ অথচ, ১৯৮৩-র একদিনের ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জয় বা পরে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পর ভারত-জুড়ে রাস্তায় নেমে পড়েছিল মানুষ৷
একসময় টিভি-তে রামায়ণ, মহাভারত দেখানো হলে রাস্তাঘাটে মানুষজন কম চোখে পড়তো৷ বেশির ভাগ মানুষের চোখ থাকতো টিভির পর্দায়৷ কিন্তু কোনো নির্মাণ নিয়ে তেমন আলোড়নের ছবি চোখে পড়ে না৷
দুর্গাপুজোর সময় বুর্জ খলিফার আদলে প্যান্ডেল দেখতে মানুষের ঢল নেমেছিল কলকাতার শ্রীভূমির রাস্তায়৷ কোনো নির্মাণ ঘিরে ভারতজুড়ে তেমন আলোড়নও বিশেষ হয় না৷ আর নির্মাণের সঙ্গে কোনো ধর্ম জুড়ে থাকে না৷ ধর্মের পরিধির বাইরে গিয়ে, ক্রিকেট-বলিউডের সীমানা ছাড়িয়ে কোনো সেতু, মূর্তি, সড়ক, ভবন নিয়ে মানুষ উতরোল হন না৷ হতে দেখি না অন্তত৷
-
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি
অবশেষে উন্মোচন
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ভারতের ‘একতা মূর্তি’ উন্মোচিত হলো৷ গত পাঁচ বছর ধরে চলছিল এই মূর্তিটির কাজ৷ বিশ্বের সর্বোচ্চ এই মূর্তিটির নকশা করেছেন পদ্মভূষণ-জয়ী ভারতীয় ভাস্কর, রাম ভি সুতার৷
-
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি
এত বড়! সত্যি?
৫৯৭ ফুট উঁচু এই মূর্তি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে৷ দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অবশেষে উন্মোচিত হতে চলেছে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু এই মূর্তি৷ ২২,০০০ বর্গমিটার অঞ্চলজুড়ে শুধু এই মূর্তিই নয়, রয়েছে একটি কৃত্রিম হ্রদও৷
-
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি
কার মূর্তি এত বড়?
‘একতা মূর্তি’ বা ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ নামের এই মূর্তিটি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের৷ নর্মদা বাঁধের কাছে গড়ে তোলা হয়েছে এই মূর্তি৷ গুজরাট রাজ্যের রাজপিপলা অঞ্চলে এটি নির্মাণ করতে নিযুক্ত হয়েছিলেন তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিক৷
-
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি
কে এই সর্দার প্যাটেল?
স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন বল্লভভাই প্যাটেল৷ দৃঢ় নেতৃত্বগুণের কারণে তাঁর নাম হয়ে গেছে সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল৷ স্বাধীনতার আগে অসংখ্য কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করা ছাড়াও, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রথম সারির নেতা ছিলেন পেশায় ব্যারিস্টার সর্দার প্যাটেল৷
-
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি
লৌহমানব প্যাটেল
আরেকটি নামও জুড়েছে বল্লভভাই প্যাটেলের সাথে৷ একটি ঐক্যবদ্ধ ভারত গঠনের উদ্দেশ্যে নিবেদিতপ্রাণ প্যাটেলকে ভারতের ‘আয়রন ম্যান’ বা লৌহমানব-ও বলা হয়ে থাকে৷ ঠিক সে কারণেই বল্লভভাইয়ের এই মূর্তি গড়তে প্রয়োজন পড়েছে ৫,০০০ টনেরও বেশি লোহা ও ২,০০০ টন তামা!
-
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি
উচ্চতার দাম
প্রাথমিকভাবে এই মূর্তি গড়ার খরচ নির্ধারণ হয় আনুমানিক তিন হাজার কোটি ভারতীয় টাকা৷ পরে বিখ্যাত প্রকৌশলী সংস্থা লারসেন অ্যান্ড টুবরো এই দায়িত্ব পেলে খরচ কমে দাঁড়ায় ২,৯৮৯ কোটি টাকা৷
-
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি
পরিকল্পনার শুরু
২০১৮ সালে এই মূর্তিটি দিনের আলো দেখলেও এর পরিকল্পনা কিন্তু বহুদিন আগের৷ ‘সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল একতা ট্রাস্ট’ নামের একটি সংস্থা ২০১০ সালে এই প্রকল্পের ঘোষণা করে৷ এই প্রকল্পের সাথে ইতিমধ্যে লারসেন অ্যান্ড টুবরো ছাড়াও জুড়েছে বেশ কিছু বিদেশি সংস্থাও৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে মূর্তি তৈরির কাজে ব্যস্ত চীনা প্রকৌশলীদের৷
-
ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু মূর্তি
শুভ উদ্বোধন
আজ, অক্টোবরের ৩১ তারিখে, ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মূর্তিটি উন্মোচন করেন৷