1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এনকাউন্টারে খতম ডন, শুরু বিতর্ক

১০ জুলাই ২০২০

এনকাউন্টারে এ বার কানপুরের কুখ্যাত ডন বিকাশ দুবেকে মেরে দিল পুলিশ। তবে পুলিশের বয়ান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই বলছেন, এটি সাজানো ঘটনা।

https://p.dw.com/p/3f5Rz
ছবি: IANS

ফাইনাল এনকাউন্টার। উত্তরপ্রদেশের কানপুরের কুখ্যাত ডন বিকাশ দুবেকেও গুলি করে মারল পুলিশ। শুক্রবার সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পরে সামাজিক এবং রাজনৈতিক মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কারও কারও মতে এনকাউন্টার করে পুলিশ শুধু কুখ্যাত ডনকে উচিত শিক্ষাই দেয়নি, অসামাজিক চক্রের কাছে একটি বার্তাও পৌঁছে দিয়েছে। অন্য দিকে প্রশ্ন উঠেছে উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। কী কারণে বিকাশ দুবেকে মেরে দিতে হলো, সেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।

এক সপ্তাহ আগে কানপুরে নিজের গ্রাম চৌবেপুরে আট পুলিশ কর্মীকে গুলি করে খুন করে পালিয়ে ছিল বিকাশ দুবে। বৃহস্পতিবার তাকে মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখানে মহাকাল মন্দিরে পুজো দিতে ঢুকে ছিল বিকাশ। মন্দির চত্বর থেকেই তাকে গ্রেফতার করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ এবং উত্তরপ্রদেশ পুলিশের টাস্ক ফোর্স। যদিও বিকাশ নিজেই আত্মসমর্পন করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বৃহস্পতিবার রাতেই তিনটি গাড়ির কনভয় করে বিকাশকে নিয়ে কানপুর রওনা হয় পুলিশ। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ পুলিশ জানায়, রাস্তাতেই এনকাউন্টারে বিকাশের মৃত্যু হয়েছে।

কী ভাবে এনকাউন্টার হলো? পুলিশের দাবি সকাল সাতটা নাগাদ হাইওয়ের উপরে বিকাশ যে গাড়িটিতে ছিল, সেটি উল্টে যায়। গাড়ির ভিতর সকলেই কম বেশি আহত হয়। সেই সুযোগ ব্যবহার করে পালানোর চেষ্টা করে বিকাশ। এক কনস্টেবলের পিস্তল ছিনিয়ে নিয়ে সে গুলিও চালায়। তারই জবাবে পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। তাতেই মৃত্যু হয় বিকাশের। এর আগে বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশের আলাদা আলাদা দু'টি জায়গায় একই ভাবে বিকাশের দুই শাগরেদকে এনকাউন্টারে মেরেছিল পুলিশ। সমাজ মাধ্যমে অনেকেই তাই বিকাশের এই ঘটনাটিকে ফাইনাল এনকাউন্টার বলে পোস্ট করছেন। বস্তুত, বিকাশ ছিলেন কানপুরের ত্রাস। প্রায় ৬০টি খুন, রাহাজানি, অপহরণের মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ফলে অনেকেই এই ঘটনায় খুশি।

পুলিশের বয়ানে অসঙ্গতি

তবে পুলিশের বক্তব্যে অনেকেই অসঙ্গতি খুঁজে পাচ্ছেন। উজ্জয়িনী থেকে কানপুরের রাস্তায় বেশ কিছু জায়গায় সিসিটিভি লাগানো আছে। ভোর চারটের সময় শেষ যে সিসিটিভি ফুটেজ মিলেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, যে গাড়িতে বিকাশ ছিল, সেটি উল্টোয়নি। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি বিকাশের গাড়ি বদল করেছিল পুলিশ? করলে, কেন করেছিল? বিকাশকে নিয়ে পুলিশ কানপুর রওনা হওয়ার পরে পেছন পেছন বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের গাড়ি অনুসরণ করে। সংবাদমাধ্যমের একটি ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে, সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ আচমকাই স্থানীয় থানা রাস্তায় ব্যারিকেড বসিয়ে সংবাদমাধ্যমের গাড়ি আটকে দেয়। কেবল পুলিশের তিনটি গাড়ির কনভয় ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ঠিক আধ ঘণ্টার মধ্যে এনকাউন্টারের খবর মেলে। প্রশ্ন উঠছে, কেন সংবাদমাধ্যমকে আটকে দেওয়া হলো? অন্য দিকে বৃহস্পতিবার রাতেই বিকাশের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা করে সুপ্রিম কোর্টে একটি আপিল করা হয়েছিল। বিকাশকে যে এনকাউন্টার করা হতে পারে, অনেকের মনেই সে সন্দেহ ছিল।

কেন এনকাউন্টার

বিকাশের ঘটনার পরেই সরব হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সমাজবাদী পার্টির নেতা তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব মন্তব্য করেছেন, বিকাশের গাড়ি না উল্টালে এবং তার মৃত্যু না হলে উত্তরপ্রদেশের সরকার উল্টে যেতে পারত। ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য। উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। টুইট করেছেন কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহও। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বিকাশ ক্রমশ ডন হয়ে উঠেছেন। জাতপাতের রাজনীতির জন্য বিখ্যাত উত্তরপ্রদেশ। সেখানে বিকাশের ব্রাহ্মণ পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা তাঁকে সাহায্য করেছেন বলে সূত্র জানাচ্ছে। বিনিময়ে বিকাশও তাঁদের হয়ে কাজ করত। এই নেতাদের মধ্যে বিজেপিরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম শোনা যাচ্ছে। অনেকেরই বক্তব্য, গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার রাতে আটজন পুলিশ কর্মীকে খুন করার পরে তিন দিনে প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার গাড়িতে করে ঘুরেছে বিকাশ। উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং মধ্যপ্রদেশে বিনা বাধায় ঘুরেছে। যদিও উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছিল সীমানা সিল করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, বিকাশকে কেউ আটকায়নি। মধ্যপ্রদেশে শাসক দলের এক নেতা তাকে আশ্রয় দিয়েছিলেন বলেও একটি সূত্র জানাচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে বিকাশের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলেও জানা গিয়েছে। বস্তুত, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পরে দুই প্রাক্তন পুলিশ অফিসারকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

সামাজিক চাপ

আটজন পুলিশ খুন হয়ে যাওয়ায় বিকাশকে গ্রেফতার করার জন্য একটা সামাজিক চাপ তৈরি হয়েছিল। প্রশাসনের ভিতরেও একটি অংশ তাকে ধরতে চাইছিল। ফলে কৌশলে তাকে মধ্যপ্রদেশ থেকে ধরা হয়। যদিও অনেকেই বলছেন, বিকাশকে আত্মসমর্পন করতে বলা হয়। কিন্তু তাকে আদালতে তুললে বহু বড় বড় নাম প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। ফলে রাস্তাতেই তাকে এনকাউন্টারে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশ এবং এনকাউন্টার

যোগী আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যটি কার্যত এনকাউন্টার স্টেটে পরিণত হয়েছে। সরকারি হিসেব বলছে, গত দুই বছরে উত্তরপ্রদেশে পাঁচ হাজারেরও বেশি এনকাউন্টার হয়েছে। এবং তাতে বহু পুলিশ কর্মীও আহত হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশ সরকার এবং প্রশাসন বিষয়টিকে তাদের সাফল্য হিসেবে দেখলেও উল্টো দিকেও প্রশ্ন কম নয়। গণতান্ত্রিক দেশে পুলিশের কাজ অপরাধীকে ধরা। আদালতের কাজ বিচার করা। বহু মানবাধিকার সংগঠনের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশ পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। আইন হাতে তুলে নিচ্ছে। এবং এর ফলে উত্তরপ্রদেশে অপরাধ কমে গিয়েছে, এমনও নয়। বরং বেড়েছে। কারণ, প্রশাসন এবং সমাজবিরোধী দুই পক্ষই এখন মারমুখি হয়ে আছে। কথায় কথায় গুলি চলছে। আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষও।

স্বাভাবিক ভাবেই বিকাশ দুবের ঘটনা সেই সমস্ত প্রশ্নকেই আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে। এবং তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়ে গিয়েছে।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)