আমার ছোটবেলায় খবরের কাগজ মানেই বুঝতাম প্রথম পাতায় বড় শিরোনাম, ‘আলফার বোমায় মৃত ১৫' বা ‘কূটনীতিক খুন, দায়ী আলফা'৷ আলফা(উচ্চারণের ভিন্নতায় কখনও উলফা) মানে ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম৷ সত্তরের দশক থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সরকারের ঘুম কেড়ে নেওয়া অন্যতম সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন, যাদের মূল লক্ষ্য ছিল ভারত রাষ্ট্রের বাইরে স্বাধীন আসাম প্রতিষ্ঠা৷
আমার মতোই নব্বইয়ের দশকে আসামে থাকতেন এমন মানুষদের কাছে আলফা ছিল অনেকটা পাড়ার মোড়ের চা-বিক্রেতার মতো, যাকে প্রতিদিন সকালে স্কুল যাবার রাস্তায় একবার দেখতে না পেলে মনে হতো, গোটা দিনটাই অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে৷ যে দিন শিরোনামে থাকতো না আলফা, গোটা দিনটাই মনে হতো কিছুটা অস্বাভাবিক৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও, আসামের মানুষ আজ প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে একটু একটু করে ভুলতে শিখেছে আলফার দৈনন্দিন উপস্থিতি৷ ২০১৯ সালে দাঁড়িয়ে প্রথম পাতায় সবচেয়ে বেশি জায়গাজুড়ে আলফার খবর থাকলে তা ব্যতিক্রম, স্বাভাবিক নয়৷
কিন্তু মাঝের দুই দশকে কী এমন ঘটে গেল আসাম তথা গোটা উত্তর পূর্ব ভারতে, যাতে করে আলফাসহ আরো বেশ কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর স্থান প্রথম পাতা থেকে ‘আঞ্চলিক সংবাদে' পরিণত হলো?
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
গুলশানে হামলা
বিশ্ব মানচিত্রে পরস্পরের সঙ্গে লাগোয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ অর্ধ শতাব্দী পূর্বে স্বাধীন হয়েছে ধর্ম নিরপেক্ষতার চেতনায়৷ দেড় দশক ধরে নানা জায়গায় মুসলিম জঙ্গিবাদ ছড়ালেও খানিকটা যেন নিরাপদেই ছিল দেশটি৷ রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল৷ তার অনেকগুলোতে জঙ্গিদের ব্যবহারের কথাও তদন্তে উঠে আসে৷ তবে ঘোষণা দিয়ে বড় ধরণের হামলা আর হয়নি৷ এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়েছে গোটা দেশ৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
যেভাবে শুরু
তখন ছিল রমজান৷ ঘটনার দিন ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের একটি রেস্টুরেন্ট ঢুকে পড়ে৷ স্প্যানিশ ওই রেস্টুরেন্টটির নাম হোলি আর্টিজান৷ ঢোকার সময়ই তারা বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
জিম্মি দশা
অস্ত্রধারীরা রেস্টুরেন্টে ঢোকার পর সেখানে জিম্মি সংকট শুরু হয়৷ বাইরে চলে নানা গুজব৷ হামলার পর তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন রেস্টুরেন্টকর্মী বের হয়ে আসতে সক্ষম হন৷ বাংলাদেশে এর আগে ১৯৭৭ সালে ঢাকায় আরেকটি জিম্মি সংকট ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছিল৷ তখন মুম্বাই থেকে টোকিওগামী একটি জাপানি বিমানের যাত্রীদের জিম্মি করে বিমানটি ঢাকায় নামিয়েছিল দেশটির বামপন্থি বিদ্রোহী দল ‘ইউনাইটেড রেড আর্মি’৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
কোথায়
অবস্থানগত কারণেও এই ঘটনা আলোচনায় ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে৷ কারণ, রেস্তোরাঁটি ঢাকার গুলশান এলাকায়৷ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস রয়েছে এই এলাকায়৷ কয়েকটি দূতাবাস তো রেস্টুরেন্টের একেবারেই কাছে৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
টার্গেট বিদেশি, টার্গেট হোলি আর্টিজান
ঢাকার অভিজাত এই এলাকার রেস্টুরেন্টটিতে পোষা প্রাণী নিয়ে প্রবেশ করা যেতো৷ এর ভেতরে উন্মুক্ত লন ছিল, সেখানে বাচ্চারা খেলাধুলা করতে পারতো৷ ওই এলাকায় থাকা বিদেশিদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল রেস্টুরেন্টটি৷ বিদেশিদের টার্গেট করতেই এই রেস্টুরেন্টকে বেছে নেয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
প্রাণহানি পুলিশেরও
জিম্মি সংকট শুরুর পর ঘটনা সামলাতে এগিয়ে যায় পুলিশ বাহিনী৷ কিন্তু প্রথম দিকেই জঙ্গিদের হামলায় বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম প্রাণ হারান৷ এতে আতঙ্ক আরো বাড়ে৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর
পুলিশ হতাহত হওয়ার পর অভিযান নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু হয়৷ এক পর্যায়ে জঙ্গিদের কবল থেকে ওই রেস্টুরেন্টটি মুক্ত করার অভিযান রাতে কার্যত স্থগিত হয়ে যায়৷ শেষ পর্যন্ত ডাক পড়ে সেনাবাহিনীর৷ সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনা সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করেন৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
আইএস সংশ্লিষ্টতা
রাতে জিম্মি দশা চলাকালে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসতে থাকে৷ তবে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তা অস্বীকার করে৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
কিভাবে ঘটনার শেষ
ঘটনার অবসান হয় প্রায় ১২ ঘণ্টা পর সেনা অভিযানে৷ অবশ্য তার আগেই জঙ্গিরা সেখানে থাকা ২০ জনকে খুন করে৷ মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির জিম্মি সংকটের অবসান ঘটে৷ জীবিত উদ্ধার করা হয় এক জাপানি ও দুই শ্রীলঙ্কানসহ মোট ১৩ জনকে৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
আলোচিত সেই বাড়ি
ঘটনার পর রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায় গুলশানের সেই বাড়ি৷ যে রেস্টুরেন্টে হামলা হয়েছিল, তার মালিক ঘটনার পর বাড়িটি ফিরিয়ে নেন৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
নতুন ঠিকানায় হোলি আর্টিজান
গত বছরের ১ জুলাই রাতে যখন হামলা হয়, তখন হোলি আর্টিজান ছিল গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর বাড়িতে৷ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর জানুয়ারিতে এসে গুলশান এভিনিউর র্যাংগস আর্কেডের দ্বিতীয় তলায় নতুন করে চালু হয় রেস্টুরেন্টি৷
-
স্তম্ভিত করে দেয়া গুলশান হামলা
জঙ্গিবাদ ও বিচার
এই ঘটনার পর আইএস দায় স্বীকার করলেও বাংলাদেশ সরকার এর জন্য স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন জেএমবির পুনর্গঠিত একটি শাখাকে দায়ী মনে করে৷ ঘুরে ফিরে এর সঙ্গে জড়িত হিসাবে একই ব্যক্তিদের নাম আসতে থাকে৷ সরকার তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা তৎপরতা জোরদার করে৷ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আগাম পদক্ষেপে তাদের বহু ঘাঁটি ও অবস্থানস্থল ধ্বং হয়ে গেছে৷ সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, এই ঘটনার তদন্ত শেষ করতে ৫ ব্যক্তিকে খোঁজা হচ্ছে৷
লেখক: সুলাইমান নিলয়
আলফা ও সহিংস নস্টালজিয়া
১৯৭৯ সালে আসামের রাজনীতিতে ইস্যু হয়- ‘বিদেশি'৷ মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতে শরণার্থীদের ভিড়৷ জরুরি অবস্থার পর সারা দেশ ভারতীয়ত্বের সন্ধান করছে৷ সেই সময়, আসামের উঠতি অসমীয়া জাতীয়তাবাদ মাটি খুঁজে পায় খিলঞ্জিয়া (আসামের আদি নিবাসী) = ভারতীয়, এই সমীকরণে৷ আসামে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশি শরণার্থীরা নাড়িয়ে দিয়েছিল আসামে অসমীয়া-বাঙালির ঐতিহাসিক হিসেব৷ ভোটার তালিকায় সেই অমিল থেকে খিলঞ্জিয়া ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে শুরু হয় ‘বঙাল খেদা' আন্দোলন৷ একই বছর, ১৯৭৯ সালেই জন্ম আলফার৷ আন্দোলনশেষে, ১৯৮৫ সালে ‘বঙাল খেদা'র তৎকালীন নেতৃত্বের এক দল আসামে সরকার গঠন করে৷ এরপরের কয়েক বছর ধরে, গণমাধ্যমে আলফার উপস্থাপনের স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়৷ আসামসহ উত্তর পূর্বের অন্যান্য রাজ্যে বাড়তে থাকে আলফার জনপ্রিয়তা৷
কিন্তু হিসেবে গোলমাল লেগে যায় যখন ১৯৯০ সালে আলফাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয় ভারত সরকার৷ ‘অপারেশন বজরং', ‘অপারেশন রাইনো' রাগিয়ে দেয় আলফা নেতৃত্বকে৷ একের পর এক হাইপ্রোফাইল কূটনীতিক, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, প্রকৌশলীদের অপহরণ, খুনের সাথে জড়াতে থাকে তাদের নাম৷ একটা পর্যায়ে আসামে বহিরাগত ব্যবসায়ীদের সংখ্যা এসে তলানিতে ঠেকে৷ শুধু তাই নয়, একাধিক বোমা হামলায় সাধারণ জনজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ এনডিএফবি (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট অফ বোড়োল্যান্ড) ও আলফার মতো একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত এই অঞ্চলে ইন্ধন জোগায় রাষ্ট্রবিরোধী চেতনাকে৷ বিদেশি শক্তিদের কল্যাণে এই গোষ্ঠীর হাতে মজুত হয়েছে অত্যাধুনিক অস্ত্র, বোমা৷ অন্যদিকে, ১৯৯২ পরবর্তী সময়ে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল হিন্দি-হিন্দু-ভারতীয় সমীকরণ৷ সেই সময় যে ধরণের ‘ভারতীয়ত্বে' জোর দেওয়া হচ্ছিল জাতীয় পর্যায়ে, সেই ভারতীয় চেতনায় স্থান ছিল না আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের৷ স্বাভাবিকভাবেই, কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে জমতে থাকে ক্ষোভ৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে একটা পর্যায়ে এসে কমে যেতে থাকে আলফার গ্রহণযোগ্যতা৷
একদিকে ব্যাপক সহিংসতার কারণে সন্ত্রাসের পরিবেশ, অন্যদিকে সেনাবাহিনীর চাপ, সব মিলিয়ে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয় আলফার গণহারে আত্মসমর্পণ৷ আলফা ভেঙে জন্মায় আরেক দল ‘সালফা' (সরকারের সাথে সংলাপে আগ্রহী সাবেক আলফা সদস্য)৷ আলফার ভেতরের ভাঙাগড়ার মাঝেই ১৯৯১-১৯৯৮ সময়ে আত্মসমর্পণ করেন ৪ হাজার ৯৯৩ জন৷ ২০১৯ সালের হিসেব, মোট ৮ হাজার ৭১৮ আলফা সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে৷ এছাড়া, অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের গুলিতে মারা গেছেন বহু আলফা সদস্যেরা৷
বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকা আলফা নেতৃত্বের অনেককেই ভারত সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ৷ ফলে সেখানেও একটি নিরাপদ স্থান হারিয়েছে তারা৷ আজকের আসামে আলফা সাধারণ নাগরিকের কাছে শুধুই সহিংস নস্টালজিয়া৷ যা ছিল, এখন নেই৷
শবনম সুরিতা, ডয়চে ভেলে
ভাঙতে ভাঙতে যেখানে শেষ..
স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের আর কোন রাজ্য এতবার নিজেকে ভাঙেনি, যত বার ভেঙেছে আসাম৷ ১৯৪৭ সালের আসাম প্রথমবার ভাঙে ১৯৬৩ সালে৷ নাগা গোষ্ঠীর স্বাধিকারকে মর্যাদা দিয়ে জন্ম হয় নাগা রাজ্যের৷ বর্তমান নাগাল্যান্ডেরও রয়েছে আংশিক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার, যার কারণে নাগাদের রীতি অনুযায়ী পালন করা হয় প্রশাসনিক কাজকর্ম৷ ভাষাগত ভিন্নতা ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে একে একে জন্মায় মেঘালয় (১৯৭২), মিজোরাম ও অরুণাচল প্রদেশ (১৯৮৬)৷ মণিপুর ও ত্রিপুরা কখনোই আসামের এই মানচিত্রের অংশ ছিল না৷ তারা ভারতে যোগদান করে ‘প্রিন্সলি স্টেট' বা রাজত্ব হিসাবে৷ কিন্তু আসাম ভাঙার যে প্রক্রিয়া ১৯৮৬ সালে থেমে গিয়েছিল বলে মনে করেন অনেকে, তা এখন আবার প্রশ্নের মুখে৷
আলফার স্বাধীন আসামের স্বপ্ন আপাতভাবে স্থগিত, কিন্তু নতুন অনেক এমন গোষ্ঠী বর্তমানে আসামে কাজ করছে, যাদের মূল উদ্দেশ্য ভাঙন বা বিচারান্তরে, স্বাধীনতা৷ বোড়োল্যান্ড তো রয়েছেই, অন্যদিকে রয়েছে বাংলাভাষী বরাক উপত্যকার নিজেকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার জোরালো দাবি৷ ওপর থেকে দেখলে, শান্তি ও গণতন্ত্রের জয় হয়েছে আলফার এই প্রাসঙ্গিকতা হারানোর মধ্যে৷ কিন্তু মাঠপর্যায়ে গেলে বোঝা যাবে, ভাঙনের অনেক পথ খোলা৷ হ্যাঁ, সহিংসতার পরিমাণ হয়তো সেই তুলনায় কম, কিন্তু ২০১২ সালের ভয়াবহতা মনে করিয়ে দিচ্ছে যে এটাই শেষ নয়৷
আগামী ৩০ আগস্ট প্রকাশ পাবে আসামের নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা৷ আশঙ্কা করছেন অনেকে, বাদ পড়বেন কম করে কয়েক লক্ষ মানুষ৷ এই মানুষদের ঠাঁই দেবে না কোনো মাটি৷ ৩১ আগস্ট থেকে যদি এই মানুষরা প্রশ্ন করেন, তাদের জন্য কোন রাজ্য বরাদ্দ, উত্তর দিতে পারবে না গণতন্ত্র৷ হাওয়ায় ভাসছে বরাক উপত্যকার পৃথকীকরণের দাবি৷
ছোটবেলার মতো আমি আজও প্রতিদিন সকালে সেই পুরোনো চা-বিক্রেতার খোঁজে আসামের খবরের কাগজ পড়ি৷ কিন্তু চায়ের দোকানের বদলে ওখানে নাগরিকপঞ্জীর ভূত দেখতে পাই৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
উদীচীতে শুরু
১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ যশোরে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর উপর জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১০৬ জন আহত হয়৷ এর পর থেকে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে জঙ্গিরা৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোণায় উদীচী কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলায় নিহত হয় আট জন৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
উৎসবে হামলা
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিলে রমনা বটমূলে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়৷ ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ শহরের দনিয়ার এক মেলায় বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয় ৮ জনকে৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
মসজিদে হামলা
১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে জঙ্গিদের বোমা হামলায় আট জন নিহত এবং ৪০ জন আহত হয়৷ ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর পুরান ঢাকায় হোসাইনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলায় একজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়৷ ১৯৯৯ সালের ৮ অক্টোবর খুলনায় আহমদিয়াদের মসজিদে বোমা হামলায় মারা যায় আট জন, আহত হয় ৪০ জন।
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
সিনেমা হলে হামলা
২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের অলকা, ছায়াবাণী, পূরবী ও অজন্তা সিনেমা হলে একযোগে বোমা হামলা হয়৷ তাতে মারা যায় ১৮ জন, আহত হয়েছিলেন ৩০০ মানুষ৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
রেস্তোরাঁয় হামলা
২০১৬ সালে ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলায় বিদেশি নাগরিক ও দুই পুলিশ সদস্যসহ ২৩ জন নিহত হন৷ ওই হামলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ ঘটে নব্য জেএমবির৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
বিদেশিদের উপর হামলা
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তখনকার ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীকে লক্ষ্য করে বোমা হামলা করা হয়৷ ওই হামলায় হাইকমিশনার বেঁচে গেলেও মারা যান দুইজন৷ ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে খুন হন ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর জাপানি নাগরিক হোশি কোনিওকে রংপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
আদালতে হামলা
২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে সহকারী জেলা জজ সোহেল আহম্মেদ এবং জগন্নাথ পাঁড়েকে বোমা মেরে হত্যা করা হয়৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
মুক্তমনাদের উপর হামলা
বিভিন্ন সময় সশস্ত্র হামলায় বেশ কয়েকজন ব্লগার ও মুক্তমনা নিহত হয়েছেন৷ ২০১৫ সালের ঢাকায় গলা কেটে হত্যা করা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপনকে৷ ২০১৬ সালেন ২৫ এপ্রিল কলাবাগানে বাসায় ঢুকে জুলহাজ মান্নান ও মাহবুব তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ সমকামীদের অধিকার-বিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জুলহাজ আর মাহবুব ছিলেন নাট্যকর্মী৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
ঈদগায় হামলা
২০১৬ সালের ৭ জুলাই ঈদের সকালে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের মাঠের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা হামলা এবং গোলাগুলিতে দুই কনস্টেবলসহ চারজন নিহত হয়৷
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
হামলা সারা দেশে
২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে জামাআতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি৷ ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলার ৫০০ স্থানে বোমা ফাটিয়ে আলোচনায় এসেছিল এই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন।
-
জঙ্গি থাবা বাংলাদেশে
নিষিদ্ধ সাত সংগঠন
কিছু সংগঠনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নজরে আসার পর সেগুলোকে থামাতে সময়ে সময়ে পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ ‘আনসার আল ইসলাম’, জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি), শাহাদাৎ-ই আল-হিকমা, হিযবুত তাহরীর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সব ধরনের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷