1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিজ্ঞানস্পেন

স্পেনের লাইটহাউসে মানুষের প্রয়োজন কমছে

১ আগস্ট ২০২৪

সমুদ্র উপকূলে লাইটহাউস মানুষের মধ্যে রোমাঞ্চ, স্বপ্ন ও কল্পনা জাগিয়ে তোলে৷ স্পেনে আজও কয়েকটি লাইটহাউসে মানুষ সবকিছু পরিচালনা করে৷ কিন্তু ধীরে ধীরে এমন পেশা লোপ পেতে চলেছে৷

https://p.dw.com/p/4j11B
Tschechien Prag | Karlsbrücke
ছবি: Givaga/Zoonar/picture alliance

সমুদ্রের বুকে, উপকূল থেকে ২৩ নটিক্যাল মাইল দূর পর্যন্ত আলো নিক্ষেপ করেন মারিও সানৎস৷ স্পেনের দক্ষিণে আন্দালুসিয়া অঞ্চলে ফারো দে মেসা রলদানের লাইটহাউসে ৩২ বছর সময় কাটিয়েছেন মারিও৷ আজ তিনি স্পেনের শেষ লাইটহাউস কিপারদের একজন৷ নিজের পেশা সম্পর্কে মারিও বলেন, ‘‘কখনো আমার নিজেকে স্বর্গরাজ্যে এক বাড়ির মালিক মনে হয়৷ ভাবি, এত সুন্দর জায়গায় কাজের সুযোগ সত্যি কি আমার প্রাপ্য? এটা সত্যি এক অসাধারণ প্রাপ্তি৷ কয়েক বছর পর আমার সেই উপলব্ধি হয়েছিল৷''

এক কালে স্পেনের উপকূল জুড়ে প্রায় ৫০০ প্রহরী লাইটহাউসে সক্রিয় ছিলেন৷ মারিওর অনুমান, বর্তমানে বড়জোর ১৫ জন অবশিষ্ট রয়েছেন৷ প্রতিদিন তিনি ১৬০ বছর পুরানো ভবনটির যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ করেন৷ আগে তেল দিয়ে আলো জ্বালানো হতো৷ আজ বিদ্যুতেই সেই কাজ হয়৷ মারিও মনে করেন, ‘‘লাইটহাউস চিরকাল জাদুময় ছিল৷ আলো-ছায়ার খেলা, অন্ধকারের মধ্যে আলোর ঝলক৷ শুধু জাহাজই নয়, আমাকেও সেই আলো আকর্ষণ করেছিল৷ এখান থেকে সবকিছু অন্যরকম দেখায়৷''

আলোক ছটায় বাধা এড়াতে জানালা পরিষ্কার করতে হয়৷ ৬৩ বছর বয়সি মানুষটার জন্য মাথা ঘোরা উচ্চতায় সেই কাজ রুটিন হয়ে গেছে৷ মারিও বলেন, ‘‘আমি সে বিষয়ে কখনোই মাথা ঘামাই নি৷ আমাকে ভূমধ্যসাগরে সবচেয়ে উঁচু চালু লাইটহাউসে পাঠানো হয়েছে, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত৷ মাথা ঘোরার ব্যামো থাকলে আগেই আমার অসুবিধা হতো৷''

মারিও নিজের লাইটহাউস নিয়ে গর্বিত৷ তিনি জানেন, যে পুরানো এই স্থাপনা আধুনিক যুগেও অপরিহার্য৷ তিনি বলেন, ‘‘জিপিএস ভালো জিনিস৷ কিন্তু প্রায় সব জাহাজের ক্যাপ্টেনই বলেন, যে তাঁরা সব সময়ে লাইটহাউসের বাতির দিকে নজর রাখেন৷ স্যাটেলাইটে গোলোযোগ হতে পারে৷ কিন্তু লাইটহাউস সব সময়ে হাতের নাগালেই রয়েছে৷''

স্পেনে লাইটহাউস : প্রযুক্তির প্রতাপে অসহায় মানুষ

মারিও মাদ্রিদ শহরে বড় হয়েছেন, যা সমুদ্র থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেখানে তাঁর একটা পানশালা ছিল৷ তারপর তিনি মেরিন সিগনাল মেকানিক হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ জনবহুল শহর ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিলেন তিনি৷ সেই উপলব্ধি সম্পর্কে মারিও বলেন, ‘‘শহর ছেড়ে বেরিয়ে এলে মানুষ টের পায় যে, সে প্রকৃতির অংশ৷ একদিকে স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠে এবং মানুষ নিজের বাড়তি ক্ষমতা টের পায়৷ অন্যদিকে উপলব্ধি হয়, যে তুমি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্ষুদ্র এক কণার মতো৷''

স্পেনের সবচেয়ে নতুন ও আধুনিক লাইটহাউস ‘ফারো দে মোখাকার'-ও তাঁর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে৷ সেখানে কোনো মানুষ থাকে না, সব কিছু রিমোট কনট্রোলে চলে৷ ভবিষ্যতে এমনটাই ঘটবে৷ সপ্তাহে একদিন মারিও সেখানে ঢুঁ মারেন৷ নতুন প্রবণতা সম্পর্কে মারিও সানৎস বলেন, ‘‘আমার লাইটহাউস ১৬০ বছর পুরানো৷ এটার বয়স সবে তিন৷ দুটিই পরিবর্তনের প্রতীক৷ অতীতে অনেক মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে কাজ করতেন৷ আজকাল টেলি-ওয়ার্ক, হোম অফিস বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ লাইটহাউসের ক্ষেত্রেও সেটা ঘটছে৷ আমার সেটা দুঃখজনক মনে হলেও এটাই অগ্রগতির লক্ষণ৷''

শেষ লাইটহাউসও রিমোট কন্ট্রোলে চলে যাওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা৷

নর্মান স্ট্রিগেল/এসবি