উত্তাল মণিপুর, বহু মানুষ পালিয়ে আসামে
নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন আসাম সীমানায়। কথা বললেন ডিডাব্লিউ-র সঙ্গে।
আসামের কাছাড়ে
মণিপুর লাগোয়া আসামের কাছাড় জেলায় বহু মানুষ পালিয়ে এসেছেন। এখানে পাশাপাশি এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবেই বসবাস করছেন মেইতেই এবং কুকি সম্প্রদায়ের মানুষ। মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
নতুন করে অশান্তি
কিছুদিন আগে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে আসাম লাগোয়া মণিপুরের জিরিবাম অঞ্চলে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সে সময় রাতের অন্ধকারে নদী পেরিয়ে আসামে এসে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। ১৫-বছরের একটি মেয়ে মারকুলিনে চায়ের দোকানে কাজ করছে। সে জানে না, কবে বাড়ি ফিরতে পারবে।
মাতৃতান্ত্রিক সমাজ
দুই সম্প্রদায়ই মাতৃতান্ত্রিক এবং এলাকায় বেশিরভাগ ব্যবসা নারীরাই সামলান। মার-কুকি সম্প্রদায়ের লোকেরা কৃষিজীবী এবং মেইতেইরা হাতে-বোনা কাপড়ের ব্যবসা করেন। পাশের রাজ্যে পরিস্থিতি তাদের ব্যবসার উপর প্রভাব ফেলেছে। কারণ এখন অনেকেই একে অন্যের এলাকায় যেতে ভয় পাচ্ছেন।
বাড়ছে দূরত্ব
মেইতেইরা বেশিরভাগ হিন্দু এবং মার-কুকিরা খ্রিষ্টান। আগে একে অন্যের বাড়িতে নানান উৎসবে যেতেন তারা। তবে এখন আসা-যাওয়া প্রায় বন্ধ। দূর থেকেই একে অন্যের খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সকলেরই অন্য সম্প্রদায়ে বহু বন্ধু আছে।
সুরক্ষা চাই
৩২ বছরের লালরৎমই বিয়ে করেননি। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। মা-বাবা অসুস্থ এবং ছোট ভাই কলেজে পড়ে। জিরিবামে তার দুটো দোকান জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। আসামে এসে ফের দোকান খুলেছেন। তিনি বলেন, ''সহানুভূতি চাইনা শুধু সুরক্ষা চাই। মারকুলিনে আর যাই হোক, ভয় নেই।''
আসাম-মণিপুর সীমানা
মণিপুরের সঙ্গে আসামের প্রায় ২০০ কিলোমিটার সীমানা রয়েছে এবং এর একটা বড় অংশ নদী। ১২৭-নম্বর জাতীয় সড়কে জিরিবাম এবং জিরিঘাটের মধ্যে থাকা সেতু ছাড়াও অনেকে নদীপথে দুই রাজ্যে যাতায়াত করেন। তবে ১১ নভেম্বরের ঘটনার পর আসামের পুলিশ নদীপথে আসা-যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
সম্প্রীতির ছবি
দুই সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে প্রেম এবং বিয়ের বেশ কয়েকটি উদাহরণ আছে। ৩০ বছরের এক মেইতেই সম্প্রদায়ের নারী জানান, ২০২২ সালে তার বিয়ে হয় মার সম্প্রদায়ের এক যুবকের সঙ্গে। বর পছন্দ করেছিলেন তার বাবা। তারা এই বাড়িতে থাকেন, তবে এখন প্রকাশ্যে এসব বিষয়ে কথা বলতে কিছুটা অস্বস্তি বোধ করেন।
সামাজিক পরিস্থিতি
মেইতেই সম্প্রদায়ের নারী রিনা সিং জানান, তিনি কখনও বাজার থেকে আনারস কিনে খাননি। মার-কুকিরা সব থেকে ভালো অর্গানিক সবজি উৎপাদন করেন। তাদের বাড়ি থেকে প্রতি সপ্তাহে সবজি আসতো। তার স্বামী চিকিৎসক। তার কাছে সবচেয়ে বেশি মার-কুকি সম্প্রদায়ের রোগীরা আসতেন। তিনি বলেন, ''এই সম্পর্ক বহু প্রজন্মের। আমরা ছোটবেলাতেও এমনটাই দেখেছি। তবে এখন ভয় হচ্ছে। সব খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।''
আছেন বাঙালিরাও
শুধুমাত্র মেইতেই এবং মার-কুকি নয়, এলাকায় বাঙালি সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা রয়েছেন। মারকুলিনে সবথেকে বড় ওষুধের দোকান চালান এক বাঙালি ব্যবসায়ী। তিনি স্থানীয় সবকটি ভাষায় কথা বলতে পারেন। তবে কোনওদিন বাঙালি বলে কেউ তাকে আলাদা চোখে দেখেনি, দুর্ব্যবহার করেনি। বরং তিনি একদিন না এলে পাড়ার লোকেরা খবর নেযন।
পুলিশের টহলদারি
আসামের সীমানা এলাকায় রাতভর টহলদারি চালাচ্ছে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী। মণিপুরেও একই কাজ করছে সেই রাজ্যের পুলিশ। তাদের সঙ্গে আছে আসাম রাইফেলস। আসামের কাছাড় জেলার পুলিশ সুপার, নুমাল মাহাত্তা জানান, রাজ্য সরকারের নির্দেশ রয়েছে মণিপুর থেকে কোনওভাবেই যেন অশান্তি আসামে প্রবেশ করতে না পারে।