ইরান এখন আল-কায়েদার নতুন ডেরা। বিস্ফোরক মন্তব্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর। তাঁর দাবি, এক সময় আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে শেল্টার পেত আল-কায়েদা জঙ্গিরা। গত কয়েক বছর ধরে তাদের শেল্টার দিচ্ছে ইরান। যদিও বক্তব্যের সমর্থনে বিশেষ কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেননি পম্পেও। তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিশ্বের কূটনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
ডনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মাইক পম্পেও। ট্রাম্পের পররাষ্ট্র সংক্রান্ত সমস্ত পদক্ষেপেই পাশে থেকেছেন তিনি। ট্রাম্পের শাসনের শেষ পর্যায়ে রীতিমতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ তুললেন তিনি। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করেন পম্পেও। সেখানেই এই গুরুতর অভিযোগ তিনি করেন। তাঁর বক্তব্য, ইরানের প্রশাসন আল-কায়েদা জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দিচ্ছে। গত অগাস্টে ইরানে আল-কায়েদার সর্বোচ্চ নেতা আল-মাসরিকে দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ইসরায়েলের গোয়েন্দারা। কিছু দিনের মধ্যেই ইসরায়েল দাবি করে, আল-মাসরিকে ইরানের মাটিতেই হত্যা করা হয়েছে। যদিও আল-মাসরির অবস্থান এবং তাঁর হত্যা দুইটি বিষয়ই নাকচ করে দেয় ইরানের প্রশাসন। রীতিমতো প্রেস বিবৃতি দিয়ে তারা জানায়, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
ইস্টার সানডে হামলা (শ্রীলঙ্কা, ২০১৯)
২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডে পালন করছিলেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের মোট আটটি গির্জা ও হোটেলে একই সময়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হয়৷ সরকারের দেয়া সবশেষ তথ্য অনুসারে এ হামলায় নিহত হন ২৫৩ জন৷ ২০০৯ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধ শেষ হবার পর এটিকেই দেশটির সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী হামলা বলে মনে করা হয়৷ হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
বৈরুত ব্যারাক হামলা (লেবানন, ১৯৮৩)
১৯৮৩ সালের ২৩ অক্টোবর লেবাননের রাজধানী বৈরুতে আত্মঘাতী ট্রাক হামলা চালানো হয়৷ তখন লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছিল৷ ভবনগুলোতে মার্কিন ও ফরাসি শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছিলেন৷ দুই বিস্ফোরক বোঝাই ট্রাক ভবনে ঢুকে গেলে নিহত হন ৩০৭ জন৷ এদের মধ্যে দুই হামলাকারী ছাড়াও ২৪১ জন মার্কিন সেনা, ৫৮ ফরাসি সেনা ও ছয় জন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন৷ ‘ইসলামিক জিহাদ’ নামের একটি গ্রুপ হামলার দায় স্বীকার করে৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
সিনাই মসজিদ হামলা (মিশর, ২০১৭)
মিশরের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা বলে মনে করা হয় এটিকে৷ ২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর জুম্মার নামাজ চলাকালীন ৪০ বন্দুকধারী আল-রাওদা মসজিদে হামলা চালায়৷ আল-রাওদা দেশটির অন্যতম সুফি মসজিদ৷ হামলায় নিহত হন ৩১১ জন৷ কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম হামলার সঙ্গে ইসলামিক স্টেটের সম্পৃক্ততা খুঁজলেও আনুষ্ঠানিকভাবে দায় স্বীকার করেনি কেউ৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৮২ (ক্যানাডা, ১৯৮৫)
১৯৮৫ সালের ২৩ জুন ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩১ হাজার ফুট উঁচুতে আয়ারল্যান্ডের আকাশসীমায় বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়ার টরন্টো-দিল্লি ফ্লাইট৷ বিমানটিতে আগে থেকে বোমা রাখা ছিল, যা নিরাপত্তাকর্মীদের নজর এড়িয়ে যায়৷ ক্যানাডা পুলিশের দাবি, ভারতের অমৃতসরে শিখদের পবিত্র উপাসনালয় গোল্ডেন টেম্পলে সেনা অভিযানের প্রতিবাদে শিখ জঙ্গিদের সংগঠন বাবর খালসা এই বোমা হামলা করে৷ প্লেনে থাকা ৩২৯ জন যাত্রী, পাইলট, ক্রুর সবাই নিহত হন৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
গামবোরু এনগালা হামলা (নাইজেরিয়া, ২০১৪)
নাইজেরিয়ার পাশাপাশি দুই শহর গামবোরু ও এনগালাতে ২০১৪ সালের ৫ মে রাতে হামলা শুরু করে বোকো হারাম জঙ্গিরা৷ একে-৪৭ ও আরপিজি দিয়ে এ হামলা চালানো হয় টানা ১২ ঘণ্টা ধরে৷ হামলায় নিহত হন শহর দুটির ৩৩৬ জন বাসিন্দা৷ চিবোক শহর থেকে অপহৃত মেয়েদের খুঁজে পাওয়া গেছে– এমন গুজব ছড়িয়ে হামলার ঠিক আগে আগেই শহর দুটি থেকে মোতায়েন সেনাসদস্যদের অন্যদিকে সরিয়ে দিতে সফল হয় জঙ্গিরা৷ এরপরই ঘটে হামলার ঘটনা৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
কারাডা হামলা (ইরাক, ২০১৬)
২০১৬ সালের ৩ জুলাই স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে দুটি হামলা চালানো হয়৷ শিয়া অধ্যুষিত কারাডায় রমজান মাসে ব্যস্ত এক বাজারে আত্মঘাতী ট্রাকহামলা চালানো হয়৷ একই সময়ে শা’ব এলাকায় রাস্তার পাশে রাখা আরো একটি বোমাও বিস্ফোরিত হয়৷ দুই হামলায় নিহত হন ৩৪২ জন৷ হামলার দায় স্বীকার করে আইএস৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
ত্রুয়িলো হত্যাকাণ্ড (কলম্বিয়া, ১৯৮৮-১৯৯৪)
কলম্বিয়ার ত্রুয়িলো শহরে ছয় বছর ধরে চলেছে এই হত্যাকাণ্ড৷ এজন্য দায়ী করা হয় অঞ্চলটিতে সক্রিয় বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী ও দুর্ধর্ষ মাদক চোরাচালানকারী পাবলো এসকোবারের অধীনের ড্রাগ কার্টেলকে৷ এই মাদক চোরাচালান সংগঠনগুলোর সদস্যরা সামরিক বাহিনী ও পুলিশেও সক্রিয় ছিলেন৷ ধারণা করা হয়, ছয় বছরে অন্তত ৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে মাদক ব্যবসায়ীরা৷ হত্যার পর মরদেহ ফেলে দেয়া হতো পাশ দিয়ে বয়ে চলা কাউকা নদীতে৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
মোগাদিসু হামলা (সোমালিয়া, ২০১৭)
সোমালিয়া তো বটেই, পুরো আফ্রিকা মহাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনা মনে করা হয় এটিকে৷ নিরাপত্তাকর্মীরা একটি বোমাভর্তি ট্রাককে মোগাদিসুর ব্যস্ততম সড়কে তল্লাশির জন্য আটকালে চালক এটির বিস্ফোরণ ঘটান৷ হামলায় অন্তত ৫৮৭ জনের মৃত্যু হয়৷ আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ দায় স্বীকার না করলেও পুলিশের ধারণা, হামলার জন্য দায়ী জঙ্গি সংগঠন আল শাবাব৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা (শ্রীলঙ্কা, ১৯৯০)
১৯৯০ সালের ১১ জুন শ্রীলঙ্কার ইস্টার্ন প্রভিন্সে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালায় তামিল টাইগাররা৷ কয়েকটি থানায় হামলা চালিয়ে দখল করা হয়৷ নিহতের সংখ্যা অন্তত ৬০০ থেকে ৭৭৪ জন হতে পারে বলে জানায় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
ইয়াজিদি হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০০৭)
আগস্টের ১৪ তারিখ ইরাকের মোসুল লগরীর পাশে ইয়াজিদি সম্প্রদায় অধ্যুষিত তিল এজের এবং সিবা শেখ খিদির শহরে চারটি আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলায় অন্তত ৭৯৬ জন নিহত হন৷ কোনো জঙ্গি গোষ্ঠি হামলার দায় স্বীকার করেনি৷ তবে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জালাল তালাবানি এ হামলার জন্য সুন্নি সন্ত্রাসীদের দায়ী করেন৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
ক্রিসমাস হত্যাকাণ্ড (ডি আর কঙ্গো, ২০০৮)
২০০৮ সালের ২৪ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর হাউত-উয়েলে জেলার কয়েকটি গ্রামে আক্রমণ চালায় উগান্ডার বিদ্রোহী গ্রুপ লর্ডস রেজিসট্যান্স আর্মি (এলআরএ)৷ উগান্ডা ও প্রতিবেশী অপর তিন দেশের সেনাবাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের পালটা ব্যবস্থা হিসেবে সীমান্ত পেরিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় এলআরএ৷ নিহত হন অন্তত ৬২০ জন৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
ক্যাম্প স্পাইশার হত্যাকাণ্ড (ইরাক, ২০১৪)
২০১৪ সালের ১২ জুন ইরাকের তিকরিতে ক্যাম্প স্পাইশারে হামলা চালিয়ে শিয়া ইরাকি বিমান বাহিনীর ১,৫৬৬ ক্যাডেটকে হত্যা করে আইএস৷ হামলার সময় ক্যাম্পটিতে কয়েক হাজার নিরস্ত্র ক্যাডেট অবস্থান করছিলেন৷ তাঁদের মধ্য থেকে বেছে বেছে শিয়া মুসলিম ও অমুসলিমদের আলাদা করা হয়৷ তারপর গুলি চালিয়ে তাঁদের হত্যা করে আইএস জঙ্গিরা৷
-
বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ যত জঙ্গি হামলা
৯/১১ হামলা (যু্ক্তরাষ্ট্র, ২০০১)
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারসহ যুক্তরাষ্ট্রের চারটি স্থাপনায় যুগপৎ হামলা চালায় আল কায়েদা জঙ্গি গোষ্ঠী৷ বিমান ছিনতাই করে সেটি নিয়েই টুইন টাওয়ারে আঘাত হানে ছিনতাইকারীরা৷ সরকারি তথ্যমতে, এ হামলায় মোট ২,৯৯৬ জন প্রাণ হারান৷ নিহতদের মধ্যে ১৯ জন ছিনতাইকারী বলে জানিয়েছে গোয়েন্দারা৷ প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ হামলায়৷
লেখক: অনুপম দেব কানুনজ্ঞ
মঙ্গলবারের সাংবাদিক বৈঠকে ওই প্রসঙ্গটিই উত্থাপন করেন পম্পেও। ইসরায়েলের দাবিকে সমর্থন করে তিনি বলেন, এক সময় আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের পাহাড়ে আশ্রয় নিতো আল-কায়েদা জঙ্গিরা। মার্কিন এবং যৌথ বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই হতো। এখন সেখান থেকে তারা চলে এসেছে ইরানে। সেখানে তাদের পাহাড়ে গিয়েও আশ্রয় নিতে হয় না। শহরের মধ্যেই তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয় ইরান প্রশাসন।
শিয়া অধ্যুষিত ইরানের প্রশাসন বরাবরই আল-কায়েদা বিরোধী। প্রকাশ্যেই তারা আল-কায়েদার নিন্দা করেছে। বস্তুত, ওসামা বিন লাদেনও এক সময় বলতেন, ইরানে আল-কায়েদার সদস্য থাকার অর্থ, তারা বন্দি হয়ে গিয়েছে।
কূটনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, পম্পেও যে দাবি করেছেন, তার তথ্যপ্রমাণ নেই। ইরানের উপর চাপ তৈরি করার জন্যই এ কথা তিনি বলেছেন। কোনো কোনো কূটনীতিকের মতে, ইরানে আল-কায়েদা থাকা সহজ বিষয় নয়। ইরানের প্রশাসন তাদের আশ্রয় দিতে পারে না।
ট্রাম্প প্রশাসন প্রথম থেকেই ইরানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছে। পরমাণু চুক্তি করেও ২০১৮ সালে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং ইরানের উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অদূর অতীতেও বার বার ইরানের সঙ্গে প্রকাশ্য সংঘাতে গেছে অ্যামেরিকা। জো বাইডেন এলে সেই নীতির পরিবর্তন হয় কি না, তা দেখার। কিন্তু তার আগে ট্রাম্প প্রশাসনের লাইনেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইরানের উপর চাপ সৃষ্টির প্রক্রিয়া বজায় রাখলেন বলে কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের ধারণা। বস্তুত, এ কাজ করে বাইডেন প্রশাসনকেও পম্পেও একটি বার্তা দিয়ে রাখলেন বলে কোনো কোনো মহল মনে করছে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি)