কিছুদিন আগে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ইন্টারনেট পরিষেবা পাওয়ার অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু ভারতের মানুষ কি এই অধিকার ভোগ করতে পারছেন? প্রশ্ন উঠছে, কারণ, টপ টেন ভিপিএনের রিপোর্ট বলছে, ভারতে গত চার বছরে চারশ বার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এমন নয় যে, সারা ভারতে পরিষেবা বন্ধ ছিল। কিন্তু পরিষেবা বন্ধ করা হয় কখনো কোনো রাজ্যের একটি নির্দিষ্ট এলাকায়। অথবা পুরো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে।
রিপোর্ট অনুসারে গত এক মাসে সাতবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচবার বন্ধ করা হয়েছে, দিল্লি, ঝজ্জর, সোনেপত, পলওয়ালের মতো জায়গায়, কৃষক বিক্ষোভের জন্য। দিল্লির সীমানায় থাকা কৃষকরা বেশ কয়েকবার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকার অভিযোগ করেছেন। কৃষকদের অভিযোগ, তাঁদের আন্দোলনে বাধা দেয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। আর সরকারের দাবি, লালকেল্লার ঘটনার পর হিংসা যাতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ।
সব চেয়ে বেশিদিন ধরে ইন্টারনেট বন্ধ রাখা হয়েছিল অবশ্য জম্মু ও কাশ্মীরে। ৩৭০ ধারা বিলোপ এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে দুইটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর কাশ্মীর উপত্যকায় ২৩৩ দিন ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। এতদিন ধরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকা ভারত তো বটেই বিশ্বের আর কোনো দেশে হয়নি। সিএএ এবং এনআরসি বিরোধী আন্দোলন চলার সময়ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছিল।
-
২০২০ সালে ইন্টারনেটে যা খুঁজেছেন মানুষ
শীর্ষে করোনা
২০২০ সালকে ইতিহাস আলাদা করে মনে রাখবে করোনা ভাইরাসের জন্যে৷ ইন্টারনেটে সার্চেও তা এক নম্বরে থাকবে সেটি অবাক করা নয়৷ গোটা বছরজুড়ে মানুষ এই শব্দটি সার্চ করেছেন বিশ্বজুড়ে৷ সার্চে প্রথম দশটির তিনটিই ছিল এই বিষয়ে৷ মানুষ প্রতিনিয়ত করোনা ভাইরাসের আপডেট আর সিম্পটমস বা নমুনাগুলো জানতে চেয়েছেন ইন্টারনেট দুনিয়াতে৷
-
২০২০ সালে ইন্টারনেটে যা খুঁজেছেন মানুষ
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন
চলতি বছরের তিন নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ কে হবেন পরাশক্তি দেশটির পরবর্তী নেতা তা নিয়ে বছরজুড়েই ছিল আলোচনা৷ গুগলের ট্রেন্ডসে দুই নম্বরেই আছে তাই মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল৷ শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও৷ ইন্টারনেটে তাকে সবচেয়ে বেশি খুঁজেছেন মানুষ এক থেকে সাত নভেম্বর৷
-
২০২০ সালে ইন্টারনেটে যা খুঁজেছেন মানুষ
কোবি ব্রায়ান্ট
২৬ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ১৩ বছরের কন্যাশিশুসহ মারা যান মার্কিন বাস্কেটবল খেলোয়াড় কোবি ব্রায়ান্ট৷ ৪১ বছর বয়সি এই তারকার মৃত্যুর ঘটনা নাড়া দিয়েছিল ভক্তদের৷ শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় সারা বিশ্ব থেকেই কোবি ব্রায়ান্ট সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা৷
-
২০২০ সালে ইন্টারনেটে যা খুঁজেছেন মানুষ
জুম
করোনা ভাইরাসের লকডাউনের মধ্যে সরাসরি ভিডিও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে জুম এর সেবাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বের মানুষের কাছেই৷ শীর্ষ ১০ সার্চে তাই মার্কিন সফটওয়্যার কোম্পানিটি জায়গা করে নিয়েছে চার নম্বরে৷
-
২০২০ সালে ইন্টারনেটে যা খুঁজেছেন মানুষ
আইপিএল ও ভারত-নিউজিল্যান্ড সিরিজ
করোনাকালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ক্রিকেটের জনপ্রিয় সিরিজ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ-আইপিএল এর ১৩তম আসরের পর্দা উঠে৷ ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ক্রিকেটপ্রেমীদের এই নিয়ে আগ্রহ ছিল তুঙ্গে৷ গুগলের শীর্ষ ১০টি সার্চে আইপিএল আছে পাঁচ নম্বরে৷ ষষ্ঠ অবস্থানে আছে ফ্রেব্রুয়ারিতে আয়োজিত ভারত-নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার ক্রিকেট সিরিজ৷
-
২০২০ সালে ইন্টারনেটে যা খুঁজেছেন মানুষ
গুগল ক্লাস
করোনাকালে বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাসরুমে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়৷ বিভিন্ন সফটওয়্যার এর সুবিধা নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানই অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করে৷ গুগল ক্লাসরুমও তেমনই একটি৷ বিদায়ী বছরের গুগল ট্রেন্ডসে এই কিওয়ার্ডটি আছে সার্চের দশ নম্বরে৷
-
২০২০ সালে ইন্টারনেটে যা খুঁজেছেন মানুষ
সংবাদের আগ্রহে যা
করোনা ভাইরাস আর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের বাইরেও ঘটনাবহুল এক বছর ছিল ২০২০৷ আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ইরান, বৈরুতের বিস্ফোরণ, হান্টা ভাইরাস মত ইস্যুগুলো৷ করোনার কারণে সরকারগুলোর প্রণোদনা বা বেকারত্ব নিয়েও জানতে চেয়েছেন মানুষ৷ গুগল ট্রেন্ডসে শীর্ষ দশ সংবাদে আরো জায়গা করে নিয়েছে মার্কিন গাড়ি কোম্পানি টেসলার স্টক, ভারতে বিহারের নির্বাচন আর দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়া ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলন নিয়ে৷
-
২০২০ সালে ইন্টারনেটে যা খুঁজেছেন মানুষ
যাদের খুঁজেছেন মানুষ
গুগলের সার্চে যেসব ব্যক্তিদের খুঁজেছেন মানুষ তার মধ্যে সবার উপরে আছেন জো বাইডেন৷ তারপরই আছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নব নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস৷ পাঁচ এ আছেন তারকা অভিনেতা টম হ্যাংকস৷
তবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার কাজটা যে শুধু কেন্দ্রীয় সরকার করে তা নয়, অনেক রাজ্য সরকারও করে থাকে। বিশেষ করে কোনো কারণে উত্তেজনা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। ২০২০ সালের হিসাব, আট হাজার ৯২৭ ঘণ্টা ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল ভারতে।
জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়া উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, হরিয়ানা ও পশ্চিমবঙ্গে নেট পরিষেবা বন্ধ করার ঘটনা বেশি ঘটে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, গণতান্ত্রিক দেশগুলির মধ্যে নেট পরিষেবা বন্ধ করার তালিকায় ভারতের স্থান একেবারে উপরে। ইন্টারনেটশাটডাউন ডট কমের হিসাব, জম্মু ও কাশ্মীরে ২২৩ বার, রাজস্থানে ৬৫ বার, উত্তর প্রদেশে ২৭ বার, হরিয়ানা ও পশ্চিমবঙ্গে ১২ বার, মহারাষ্ট্রে ১০ বার ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ভারতে আইন অনুযায়ী কেন্দ্র বা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবের নির্দেশে সাময়িকভাবে টেলিকম পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে। অ্যাকসেস নাওয়ের রিপোর্ট বলছে, ভারতে অনেক সময় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। ২০১৭ সালে ইন্টারনেট শাটডাউনের ৭৯টি ঘটনার মধ্যে ৬১টি ছিল সতর্কতামূলক।
-
কাশ্মীরে ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ইন্টারনেট বন্ধ
গতবছরের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারতের নরেন্দ্র মোদীর সরকার৷ এরপর বিক্ষোভ প্রতিরোধের নামে ঐ এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়৷ এখনও তা অব্যাহত আছে৷ ফলে ১৬২ দিন ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না কাশ্মীরীরা৷ কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনামলে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার এটিই সবচেয়ে দীর্ঘ ঘটনা৷
-
কাশ্মীরে ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
ইন্টারনেটের খোঁজে
জম্মুর বানিহাল শহরে সরকার কয়েকটি ইন্টারনেট ক্যাফে খুলেছে৷ ট্রেনে করে সেখানে যাতায়াতে প্রতিদিন কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে৷ কিন্তু তাতে কী! অনেক কাশ্মীরী সেটিই করছেন৷ কারণ ইন্টারনেটতো ব্যবহার করতে হবে৷ ছবিতে বানিহাল স্টেশনে যাত্রীদের দেখা যাচ্ছে৷
-
কাশ্মীরে ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
যে ট্রেনে করে কাশ্মীরীরা বানিহাল যাতায়াত করেন সেটির নাম তাঁরা দিয়েছেন ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’৷ এক ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ৪.২ ডলার বা সাড়ে তিনশ টাকা খরচ করেন তাঁরা৷
-
কাশ্মীরে ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
‘এই সুযোগ হাতছাড়া করা যায় না’
১৮ বছর বয়সি আবরার আহমেদ বানিহালের ইন্টারনেট ক্যাফেতে গিয়ে অনলাইনে চাকরির আবেদন জমা দিয়েছেন৷ থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে তিনি জানান, ইন্টারনেট ব্যবহারের এই সুযোগ হাতছাড়া করার উপায় নেই৷ কারণ পরিবার চালাতে তাঁকে একটি চাকরি পেতেই হবে৷ গতবছর রাজমিস্ত্রি বাবা দুর্ঘটনায় এক পা হারানোর পর ছয় সদস্যের পরিবার চালানোর দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে৷
-
কাশ্মীরে ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
অনেক ভিড়
কাশ্মীরের বুড়গামে সরকার প্রতিষ্ঠিত একটি ইন্টারনেট ক্যাফের সামনের লাইন এটি৷
-
কাশ্মীরে ‘ইন্টারনেট এক্সপ্রেস’
বিপুল আর্থিক ক্ষতি
কাশ্মীর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভাইস প্রেসিডেন্ট আব্দুল মজিদ মীর জানিয়েছেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে এখন পর্যন্ত ২.৪ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ২০ হাজার তিনশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে৷ চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার জন৷
কলকাতার এক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার মতে, কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কারণ আছে। বিশেষ করে সম্প্রদায়িক উত্তেজনা, সংঘর্ষ দেখা দিলে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখতে হয়। না হলে, সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ালে তা সামাল দেয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। কিন্তু তাই বলে সরকার-বিরোধী জোরালো প্রতিবাদ হলেই নেট বন্ধ রাখতে হবে, তা একেবারেই কাম্য নয়।
তবে বিজেপি-র যুব নেতা সৌরভ সিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আমি এই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তকে পুরোপুরি সমর্থন করছি। ভারতে আরবান নকশালরা আন্দোলনের নামে দেশবিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। সেখানে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে যুব সমাজের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছনোর চেষ্টা করা হচ্ছে।''
ইন্টারনেট বন্ধ রাখার একটা আর্থিক মূল্যও আছে। হিসাব বলছে, ভারতে এক ঘন্টা নেট বন্ধ থাকলে ২ কোটি টাকা করে ক্ষতি হয়। ফলে প্রায় নয় হাজার ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ থাকার ফলে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, ইন্ডিয়া টুডে)