1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইতালি থেকে ফিরে এসে যা শিখলাম

৯ জুলাই ২০২০

করোনা ভাইরাস নিয়ে ফ্লাইটে চড়ছি আমরা? জেনে-বুঝেই এই কাজ করছি? সরকার বা বেসামরিক বিমান চলাচল বা আমাদের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের শনাক্ত করতে পারছে না, সেই সুযোগ নিচ্ছি আমরা? আরেকটু খতিয়ে দেখা যাক৷

https://p.dw.com/p/3f0pt
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Scrobogna

মাত্রই, মানে ৬ জুলাই ২৭৬ জন যাত্রী নিয়ে রোমে যাওয়ার পর ২১ বাংলাদেশির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়৷ এরপর কাতার এয়ারলাইন্সের ১১২ জন বাংলাদেশি যাত্রীকে নামতে দেয়নি রোম বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ৷ বলা হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ নিরোধে কড়াকড়ি আরোপের জন্যই বাংলাদেশ থেকে সব ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে ইতালি৷ 

কিন্তু এ ঘটনা ইতালি থেকেই শুরু, তা নয়৷ এর আগে জাপান, চীন আর দক্ষিণ কোরিয়াতেও একই ঘটনা ঘটেছে৷ আমরা সেসব দেশে গিয়েছি আর তারা পরীক্ষা করে দেখেছে যে, আমরা অনেকেই করোনা পজিটিভ৷

বিদেশ থেকে আসা এ ভাইরাস আমরা ঠেকাতে পারিনি, বরং রীতিমতো দাওয়াত দিয়ে আমরা এই ভাইরাস আমাদের দেশে আমদানি করেছি৷ আর তা হয়ত এসেছে আমাদের বিমানবন্দরগুলো দিয়েই৷ আমাদের সরকার একটু সচেতন হলে বা সাবধানতা অবলম্বন করলে তা হয়ত ফেরানো যেতো৷ অন্তত একটু কমের মধ্যে রাখা যেতো৷ আমাদের কোনো উপায় ছিল না জানার যে, বিদেশ থেকে যারা আসছেন বা এসেছেন, তাদের মধ্যে কে করোনা বহন করছেন আর কে করছেন না৷ অন্যদিকে আমরাও দলে দলে দেশে আসলাম, নিজেদের আলাদা না করে বেশ করে ঘুরে-ফিরে বেড়ালাম৷ পুরো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ছড়িয়ে গিয়ে দেশ অচল করে দিয়ে একরকম তৃপ্তিইহয়তো পেলাম৷

এখন কি আমরা তার প্রতিশোধ নিতে চাই? মানে, যে দেশ থেকে বা যেসব দেশ থেকে ভাইরাস এসেছে, যারা এখন একটু আমাদের থেকে ভালো, সেখানে আমরাই আবার ভাইরাস ফিরিয়ে দিয়ে এলাম!

বাবা-মা বা একেবারে প্রাথমিক শিক্ষকদের ফাঁকি দিয়ে আমাদের জীবন শুরু৷ কাউকে ফাঁকি দিতে পারলে অথবা বেশ খানিকটা চালাকি করে আরেকজনকে সাতপাঁচ বুঝিয়ে কোনো একটা অন্যায় বা অন্যায্য কিছু করে ফেলাই এই বদ্বীপে স্মার্টনেস হিসেবে পরিচিত৷ সেই আমরা সরকারকে ফাঁকি দিতেই চাইবো৷ আর সেই সরকার যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয়, অযোগ্য হয়, তাহলে তো আমাদের ফাঁকিবাজি বা স্মার্টনেস অনেকটা ন্যায্য হয়ে যায়৷

খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগ
খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll

টেলিভিশন দেখে বা খবর পড়ে বুঝলাম, বিমানবন্দরে বসে থাকা কর্তৃপক্ষ জানে না, কোন দেশ কোন বিমানযাত্রীর জন্য কীরকম স্বাস্থ্য সনদ চায়, কারণ, একেক দেশে তা একেক রকম৷ আর করোনা রোগের লক্ষণ চার বা পাঁচ দিন পরেও প্রকাশ হতে পারে৷ ভালো কথা৷ তাহলে সরকারের উচিত ছিল আন্তদেশীয় সাহায্য চাওয়া৷ মানে, ইতালি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারতো৷ তাদেরসহ অন্য গন্তব্যে জানাতে পারতো যে, যাত্রীদের যথাযথভাবে পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না৷ সেক্ষেত্রে এই মুহূর্তেই সেই ফ্লাইট চালু করা হবে কিনা, নাকি আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করা হবে৷ সরকার বা কর্তৃপক্ষও কি এক্ষেত্রে ছোটবেলায় শেখা চালাকির আশ্রয় নিলো? অর্থাৎ, নিজের অযোগ্যতা ঢাকতে চোখ বন্ধ করে থাকার উটপাখি নীতি?

আর অন্যদিকে আমরা কী বুদ্ধিমান ভাবুন? একে-তাকে ধরে জেনে বা না জেনে কোনোমতে একটা করোনা ভাইরাস নেই এরকম একটা সার্টিফিকেট জোগাড় করে আমরা বিমানে চড়ে বসলাম৷ সন্দেহ দূর করতে বা শরীরের তাপ আয়ত্তে নিতে হয়তো প্যারাসিটামলও খেলাম গোটা কয়েক৷ আমরা জানি, আমরা স্মার্ট, নেহায়েত ধরা পড়ে গেলেও কিছু একটা বলে আমরা বেরিয়ে যাবো৷ আর অতই যদি কাজটা বেআইনি বা অনৈতিক তবে সরকার আমাকে আটকালো না কেন? সরকারেরই তো দায়িত্ব ছিল তা করার৷

সন্দেহ নেই , আন্তর্জাতিক যাত্রী পারাপারে আমরা ও আমাদের সদাশয় সরকার যৌথ প্রযোজনায় যে ইতিহাস সৃষ্টি করলাম তা মানব সভ্যতা অনেকদিন মনে রাখবে৷ নিজেদের স্মার্টনেসে কি আমরা এখনও খুশি? না মনে হয়, এখন আমরা ব্যস্ত হবো একে অপরকে দোষারোপে?

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত।
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য