1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপীয় কমিশনে লিঙ্গসমতা আনতে উরসুলার সংগ্রাম

৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রথমবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ইউরোপিয়ান কমিশনে লিঙ্গসমতা আনতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ আসছে ডিসেম্বরে দ্বিতীয়বারের মতো কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন জার্মানির এই রাজনীতিবাদ৷

https://p.dw.com/p/4kDxE
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন
উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনছবি: FREDERICK FLORIN/AFP

২০১৯ সালে প্রথম ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর জার্মানির নারী রাজনীতিবিদ ফন ডেয়ার লাইয়েন ২৭ দেশের কমিশনে নারী ও পুরুষের সমান অংশগ্রহণ চেয়েছিলেন৷ এ নিয়ে কাজও করছিলেন তিনি৷ তার এই চেষ্টা ও লক্ষ্য ব্লকের সদস্যরাষ্ট্রগুলোতেও সমাদৃত হয়৷ 

এর অংশ হিসেবে তিনি জোটের প্রতিটি সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে কমিশনার হিসেবে একজন নারী ও একজন পুরুষ সদস্যের নাম প্রস্তাবের কথা বলেছিলেন৷ নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সেইবারের কমিশনে তিনি নিজেসহ মোট ১৩ জন নারী ও ১৪ জন পুরুষ ছিলেন৷

নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের মতো কমিশনের দায়িত্ব পেয়ে আবারো জোটের দেশগুলোকে একই আর্জি জানিয়েছেন তিনি৷

তবে এবার মনে হচ্ছে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন৷ তার অনুরোধ খুব একটা আমলে নেওয়া হচ্ছে না বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে৷

জোটের বিভিন্ন দেশ থেকে এরমধ্যে কমিশনারদের নাম জমা দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গেছে৷ গত সোমবার পর্যন্ত জোটের ২৯ দেশের ১৭টি দেশই শুধুমাত্র পুরুষ প্রতিনিধিদের নাম জমা দিয়েছে৷ বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্পেন, সুইডেন নারী প্রতিনিধির নাম জমা দিয়েছে৷ আর ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়াম একজন নারী ও একজন পুরুষ প্রতিনিধির নাম দিয়েছে৷ আগামী সপ্তাহগুলোতে তাদের সাক্ষাৎকার নেবেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷

ইউরোপিয়ান উইমেন'স লবি এক খোলা চিঠিতে জানায়, গত মেয়াদে লিঙ্গসমতাভিত্তিক একটি কমিশন গঠনে আপনার নেতৃত্ব একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল৷ যার ফলে ইইউ এবং এর বাইরে শাসন পরিচালনার একটি মাপকাঠির যাত্রা শুরু হয়৷ বিবৃতিতে সংগঠনটি উরসুলাকে নারী-পুরুষের সমতার বিষয়ে নিজের অবস্থান ধরে রাখার আহ্বান জানায়৷

এদিকে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর উরসুলার আহ্বানকে খুব একটা গুরুত্ব না দেওয়া বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নানা সংস্থা৷ ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টারের ওলিজাবেথ কুইপার ডিডাব্লিউকে বলেন, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর এই আচরণ নিন্দাজনক৷ তবে তার মতে, নারীদের অধিকারের বিষয়ে রাষ্ট্রপ্রধানদের মাঝে রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব দেখা যাচ্ছে৷

অবশ্য এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ সোমবার ব্রাসেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইইউর মুখপাত্র আরিয়ানা পোডেস্টা বলেন, ‘‘নিজের লক্ষ্যের বিষয়ে পরিষ্কার নতুন প্রেসাডেন্ট৷ আসছে কমিশনে নারী-পুরুষ সমতা তৈরিতে নিজের ক্ষমতার সবটুকু্ করবেন তিনি৷''  

কী করতে পারেন লাইয়েন?

ফন ডেয়ার লাইয়েনের জন্য বড় সমস্যা হবে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে নারী সমতায় প্রেসিডেন্ট যেই আহ্বান জানিয়েছেন তা মানতে খুব বেশি জোর করার সামর্থ্য নেই৷

স্কেটিংয়ে নারীমুক্তি

সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান পলিসি স্টাডিজের গবেষক সোফিয়া রুসাক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘তিনি যেটি করতে পারেন সেটি হলো ভেটো দেওয়া, যদিও এটি হবে নজিরবিহীন৷’’

তার মতে, এর ফলে শুরুতেই আগামী পাঁচ বছর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক খারাপের সূচনা হতে পারে৷    

এদিকে কুইপার এবং ইউরোপিয়ান পলিসি সেন্টার বলছে, ‘‘সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে অতিরিক্ত একটি করে নাম দেওয়ার কথা বলতে পারেন লাইয়েন৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর ফলে নতুন কমিশনের যাত্রা বিলম্বিত হতে পারে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে তিনি এই কাজটি করবেন কি না৷''

তবে এতো সবকিছুর পরেও মনে হচ্ছে সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে বুঝাতে পেছন থেকে নীরবে কাজ করে যেতে পারেন ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ যেমন এরইমাঝে দেখা গেছে শেষ মুহূর্তে নিজেদের পুরুষ প্রার্থীকে সরিয়ে একজন নারীপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে রোমানিয়া৷ আর ইউরোপের আরেক রাষ্ট্র মাল্টাও চাপে রয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে৷

সেই সাথে আরকটি কাজ করতে পারেন লাইয়েন৷ নারী কমিশনারদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া৷

কমিশনে নারী-পুরুষের সমতা আনতে হয়তো আরো কিছু পরিবর্তন আনতে পারবেন নতুন প্রধান৷ তবে সোমবার পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে লিঙ্গসমতা নিশ্চিত করতে আরো অনেক দূর যেতে হবে উরসুলাকে৷

ইউরোপিয়ান উইমেন'স লবির মুখপাত্র মির্তা বাসেলোভিচ বলেন, ‘‘আমরা ফন ডেয়ার লাইয়েন এবং ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের উপর আস্থা রাখছি৷ তারা প্রমাণ করবে, ইইউ'র নেতৃত্ব কোনো ছেলেদের ক্লাব নয়৷’’

এলা ইয়নের/আরআর