শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমন কথা বলেছেন আইপিসিসিরওয়ার্কিং গ্রুপ ৩-এর কো-চেয়ারম্যান জিম এসকিয়া৷ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেয়া পদক্ষেপগুলো বিভিন্ন দেশের উদ্যোগগুলোতে কী প্রভাব ফেলবে, ডয়চে ভেলের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমরা জাতিসংঘের এমন একটা সংস্থা, যারা বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে৷ তাই জ্বালানির বাজার ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিয়ে আমরা সরাসরি কথা বলি না৷''
এরপর তিনি যোগ করেন, ‘‘তবে পরিষ্কারভাবে বুদ্ধিমান লোকেরা জেনে গেছে যে, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত৷'' উল্লেখ্য, রাশিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ তেল ও গ্যাস আমদানি করে থাকে৷ যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে এই জ্বালানি বাণিজ্য সংকটের মুখে পড়েছে৷
এসকিয়া আরো বলেন, আগামী ৪ এপ্রিল আইপিসিসি যে রিপোর্ট প্রকাশ করতে যাচ্ছে, সেখানে ও তার সম্পূরক প্রকাশনাগুলোতে এবং যে ডেটাবেজগুলো প্রকাশিত হবে, সেখানে জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ে কী ধরনের উদ্যোগ নেয়া উচিত, সে সিদ্ধান্ত নেয়ার যথেষ্ট উপাত্ত থাকবে৷
শুক্রবার জার্মান সময় সকাল সাড়ে নয়টায় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমের মাধ্যমে আইপিসিসি তাদের ষষ্ঠ মূল্যায়নের ওয়ার্কিং গ্রুপ-৩-এর প্রতিবেদন প্রকাশের প্রাক সংবাদ সম্মেলন করে৷ ওয়ার্কিং গ্রুপ-৩ মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের মিটিগেশন বা প্রশমন নিয়ে কাজ করে৷
গুরুত্বপাবেসামাজিকপ্রভাব
আইপিসিসির এই রিপোর্টে নতুনত্ব হচ্ছে প্রশমন প্রক্রিয়ায় সামাজিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা৷ এ নিয়ে আলাদা একটি চ্যাপটার থাকবে৷ সেই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতীয় গবেষক জয়শ্রী রায়৷ তিনি থাইল্যান্ড ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সায়েন্সের প্রথম বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর৷ তিনি বলেন, ‘‘চাহিদার সামাজিক বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে প্রতিবেদনে৷ বিশেষ করে কোন কারণে দেশগুলো কার্বন নিঃসরন করে এমন উদ্যোগে বিনিয়োগ করে তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে৷''
এছাড়া প্রতিবেদনে প্রশমন ও উন্নয়ন এবং প্রশমন ও অভিযোজনের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা থাকবে৷ থাকবে প্রশমনে বিনিয়োগের চাহিদা নিয়ে বিস্তারিত পরামর্শ৷
‘‘কোথায় কতটুকু বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং কত বিনিয়োগ এরই মধ্যে আছে, এই ফারাক তুলে ধরা হবে,'' বলেন এসকিয়া৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
বাংলাদেশের পরিকল্পনা
বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখার চেষ্টায় প্রতিটি দেশ তাদের পরিকল্পনা জাতিসংঘে জমা দিয়েছে৷ বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ২১.৮৫ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করছে৷ বাংলাদেশ জানিয়েছে, যদি নিঃসরণ কমানোর জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ না নেওয়া হয় তাহলে ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০৯.৪ মিলিয়ন টন গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ করবে৷ তবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে নিঃসরণ ৩১৯.৯৪ মিলিয়ন টনে নামানো যাবে৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
খরচ
সরকারি সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) এই পরিকল্পনা তৈরি করেছে৷ এটি বাস্তবায়নে ১৫ লাখ কোটি টাকার বেশি খরচ হবে৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
কে মেটাবে খরচ?
পুরো খরচকে দুই ভাগে ভাগ করেছে বাংলাদেশ৷ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে নিঃসরণ ৬.৭৩ শতাংশ কমাবে৷ এতে খরচ হবে প্রায় পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা৷ বাকি ১৫.১২ শতাংশ উন্নত দেশ বা আর্ন্তজাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া সাপেক্ষে কমানো হবে৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
নিঃসরণ কমাতে যা করবে
প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া গেলে ৪,১১৪ মেগাওয়াটের নবায়নযোগ্য জালানি প্রকল্প বাস্তবায়ন, কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার, নতুন কমবাইন্ড সাইকেল গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণ, বর্তমান গ্যাস টার্বাইন বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রের দক্ষতা বাড়ানো ও প্রিপেইড মিটার বসানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিদ্যুৎ বিতরণ সংক্রান্ত ক্ষতি কমানোর উদ্যোগ নিতে চেয়েছে বাংলাদেশ৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
বিদ্যুৎচালিত বাস
বড় শহরগুলোতে বিদ্যুৎচালিত বাস সেবা চালু করা হবে৷ এছাড়া যানজট কমানোর জন্য অর্থ ব্যয় করা হবে (জ্বালানি উপযোগিতা ১৫ শতাংশ বাড়বে), রাস্তা প্রশস্ত করা (২ থেকে ৪ লেন) এবং রাস্তার গুণগত মানোয়ন্নন, অযান্ত্রিক যানবাহন তৈরি এবং বাইসাইকেলের জন্য আলাদা লেন, ইলেক্ট্রনিক রোড প্রাইসিং অথবা কনজেশন চার্জিং, রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমানো এবং ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ি ব্যবহার উৎসাহিত করা হবে৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
কৃষিখাতে উদ্যোগ
কৃষি খাতে ধান খেত থেকে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে শুষ্ক মৌসুমে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার এবং শস্য শুকানোর বিকল্প পন্থা ব্যবহার করা হবে৷ ২১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে উন্নত ধানের জাত ব্যবহার করা হবে৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
বনায়ন খাত
বনায়ন খাতে বন ধ্বংস ঠেকানো, বনায়ন উদ্যোগ, বন রক্ষণাবেক্ষণসহ আরও অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
অন্যান্য
পৌরসভাগুলোতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের জন্য ৩৬ হাজার ৮৫০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে৷ এতে আবর্জনা ব্যবস্থাপনার আধুনিক প্রক্রিয়া চালু করা হবে এবং পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থারও উন্নয়ন কর হবে৷
-
কার্বন নিঃসরণ ২২ শতাংশ কমাতে চায় বাংলাদেশ
পরিমাপ
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি দুই বছর পরপর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু বাস্তবায়িত হলো তা পরিমাপ করা হবে৷