ইউক্রেনের পঙ্গু সৈনিকদের নতুন জীবন
রাশিয়ার সঙ্গে সম্মুখসমরে অঙ্গ হারিয়েছেন অনেক ইউক্রেনীয় সেনা৷ কেমন করে তারা খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন এই নতুন জীবনে?
নতুন করে শেখা
ওলেকজান্দর রেভতিউখ (মাঝে) কোচের বক্সিং মিটে সজোরে আঘাত করছেন৷ ৩৩ বছর বয়সি এই ইউক্রেনীয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার বাঁ হাত ও বাঁ পা হারিয়েছেন৷ দেশটির দক্ষিণাংশে জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনে তার অঙ্গহানি হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘অবস্থা অনেকটা নবজাতকের মতো৷ সবকিছু শুরু থেকে শিখতে হচ্ছে৷’’
অসংখ্য যোদ্ধার পঙ্গুত্ব বরণ
যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কতজন পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন তার আনুষ্ঠানিক কোনো ড্যাটা নেই৷ তবে সংখ্যাটি ২০ থেকে ৫০ হাজার হবে বলে ধারণা মানবাধিকার সংগঠন প্রিন্সিপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাসি নায়েম৷ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তারা একাকীত্বে ভোগেন এবং সামাজিক বৈষম্যের শিকার হন বলে জানান তিনি৷
পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্তি
মাইন বিস্ফোরণে দুই পা হারানো আন্দ্রিই পিলিপচুকের বয়স ২৮ বছর৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা যখন আমার ডান পা কেটে নিলেন, আমি মন খারাপ করিনি৷ কারণ এটি এতটাই থেঁতলে গিয়েছিল, যে একে বাঁচানো সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু তারা যখন আমার বাঁ পাটিও কেটে নিলেন তখন আমি খুব কষ্ট পেয়েছি৷’’
কোন পথে ভবিষ্যৎ?
সন্তান ঘরে ফেরার পর তাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ওলেকজান্দর রেভিতুখের মা৷ রেভিতুখ আগে হাঙ্গেরিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ করতেন৷ যুদ্ধ শুরুর দুই মাসের মাথায় তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন৷ এখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রবীণ যোদ্ধাদের নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন৷ তার ভাবাদর্শ হলো, পথ কোথাও না কোথাও খোলা আছে৷
যুদ্ধক্ষেত্রে ফেরত
অঙ্গ হারিয়েও কেউ কেউ যুদ্ধে ফেরত গেছেন৷ ২৮ বছর বয়সি ম্যাঙ্গো মৌরিপোলে একটি হাত হারান৷ এমনকি রাশিয়ানরা বন্দিও করেছিল তাকে৷ ফেরত এসে তিনি তার কমান্ডার ও কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে সমর্থ হন যে, তিনি ডিউটিতে ফিরতে পারবেন৷ যদিও তিনি আর ট্যাঙ্ক চালাতে পারবেন না, একটি বায়োনিক হাত পাবার আশা তার৷
রোবোড্যাড
রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে চারটি হাত-পা-ই হারান ৪০ বছর বয়সি আন্তন ইভান্তসিভ৷ ‘‘যখন আমি বুঝতে পারলাম আমি আর কখনো পুরোপুরি আমার সন্তান ও স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরতে পারব না, এটা মেনে নেয়া কঠিন ছিল,’’ বলেন তিনি৷ তার বায়োনিক হাত পা আছে, যা দিয়ে তিনি দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন৷ তবে তখন থেকে তার সন্তানেরা তাকে ‘রোবোড্যাড’ বলে ডাকে৷
অল্প অল্প করে ফেরা
আহত হবার পর নৌসেনা রোস্তিস্লাভ প্রিস্তুপা আংশিকভাবে প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলেন৷ বন্ধুরা তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সহায়তা করছেন৷ তিনিও মনে করেন, বাঁচতে হলে ফিরতে হবে৷ প্রতি বছর যুদ্ধের কারণে প্রতিবন্ধী যুদ্ধফেরত ইউক্রেনীয়দের সংখ্যা বাড়ছে৷
নেটওয়ার্ক: বন্ধু ও পরিবার
নিঝিনে ওলেকজান্দর রেভিতুখ তার দাদীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন৷ তার পরিবার তাকে সহায়তা করছে৷ তিনিও মনে করেন, ফিরতে পারবেন স্বাভাবিক জীবনে৷ তিনি এখন মোটিভেশনাল কোচ হিসেবে কাজ করার চেষ্টা করছেন৷ ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চান৷